ঈদ মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ ‘লক্কড়-ঝক্কর’ লঞ্চে রঙ লাগিয়ে নৌপথে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে

0
1497532447

1497532447

নদী বেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বাড়ি ফেরার অন্যতম মাধ্যম নৌপথ। এ অঞ্চলের লাখো মানুষ লঞ্চেই যাতায়াত করে থাকেন। ঈদের সময় ঘরে ফেরা মানুষের ভিড় থাকায় লঞ্চের চাহিদাও থাকে অনেক বেশি। এ সুযোগে এক শ্রেণির লঞ্চ মালিকরা ঈদ মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ ‘লক্কড়-ঝক্কর’ লঞ্চে রঙ লাগিয়ে নৌপথে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ যাত্রীরাও নাড়ীর টানে ঈদের সময় বাড়ি ফিরতে চিন্তা না করেই এসব লঞ্চে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে থাকেন।

লঞ্চ মালিক সমিতির সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে ১০ থেকে ১২টি লঞ্চে স্পেশাল সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) ও বেসরকারি লঞ্চ মালিকরা। কিন্তু এসব লঞ্চগুলো প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। এছাড়া ঈদের সময় যাত্রীদের ভিড় বেশি থাকায় লঞ্চের ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছরই মালিকদের একটি অংশ বেশি লাভের আশায় পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ পরিচালনা করেন। ডকইয়ার্ডগুলোতে ঈদের দুই/তিন মাস আগ থেকেই লঞ্চের রঙ-কালি ও রি-পিয়ারিংয়ের কাজ শুরু করেন। ফলে ইতোমধ্যে লক্কড়-ঝক্কর মার্কা লঞ্চ হয়ে উঠেছে চকচকা। দেখে বোঝার উপায় থাকে না এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। যাত্রীরাও না বুঝে রঙমাখা লঞ্চগুলোতে চলাচল করে থাকেন। ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে ঈদ মৌসুমে পাল্লাদিয়ে অনভিজ্ঞ চালক দিয়ে স্পেশাল সার্ভিসের লঞ্চগুলো চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটে নৌ-দুর্ঘটনা।

এ রুটের এমভি কালাম খান-১ লঞ্চের পরিবর্তে সম্প্রতি সময় থেকে চলাচল শুরু করা যাত্রীবাহী এমভি তাসরিফ-১ লঞ্চ গত ১৩ জুন মাঝরাতে কীর্তনখোলা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকারের সাথে সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনায় বড় ধরণের ক্ষতি না হলেও লঞ্চের ১২ যাত্রী আহত হয়েছেন। এ সময় লঞ্চের ছয় শতাধিক যাত্রীদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা অভিযোগ করেন রাত নয়টার দিকে বরিশাল নৌ-বন্দর ত্যাগ করার পর পরই লঞ্চের সার্চ লাইট অচল হয়ে যায়। প্রথম থেকেই লঞ্চটি অন্ধকারে দিক হারিয়ে একে বেঁকে চলছিলো। যাত্রীরা সার্চ লাইচ সচল করার জন্য লঞ্চের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফদের বলা সত্যেও লঞ্চটি চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার স্বীকার হয়।

নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, শুধু বুড়িগঙ্গার সাড়ে চার হাজার বিভিন্ন ধরনের লঞ্চের মধ্যে ফিটনেস পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র ৭৮২টির। এসব লঞ্চের ৫০ শতাংশের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। এসব কারণে গত ৩০ বছরে নৌ-দুর্ঘটনায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তবে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৬৬ বছরে দেশে দুই হাজার ১২২টি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ছয় হাজারের মতো যাত্রী নিহত হয়েছেন। মামলা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার। নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১৪১টি মামলা। বাকি মামলাগুলো বছরের পর বছর ঝুলে রয়েছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, এরমধ্যে কিছু মামলার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা। নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোরও উল্লেখযোগ্য কোনো শাস্তি হয়নি।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবছর আর কোন লক্কড়-ঝক্কর মার্কা লঞ্চ নদীতে নামতে দেয়া হবেনা। এজন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর নির্দেশে ঈদের পাঁচদিন আগেই বেশ কয়েকটি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা থাকবেন যাবে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে কোনো লঞ্চ চলতে না পারেন।

তিনি আরও বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এ বছর লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস বাড়ানো হয়েছে। যেসব লঞ্চ যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে রঙ করা হচ্ছে সেগুলোর দিকে আরও বেশি নজর রয়েছে।’

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *