ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি হলে থাকেন জমিদারী স্টাইলে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস হলের একটি রুমে রাজকীয় স্টাইলে একা থাকার অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও হলে থাকছেন এ ছাত্রলীগ নেতা। অভিযোগ আছে, তাঁর মতো আরও অনেক ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী অবৈধ ভাবে দিনের পর দিন হলে থাকছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের ৩০১৫ নম্বর কক্ষে একা থাকেন ছাত্রলীগ সভাপতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক রুমগুলোতে সাধারণত খাট-টেবিল থাকার কথা থাকলেও সভাপতির রুমে রয়েছে সোফার ব্যবস্থা। আছে একাধিক দামি আসবাবপত্র। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ হয়ে গেলেও হল ছাড়েননি। শুধু সঞ্জিতই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচজন ছাত্রনেতা বলেন, কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। তাছাড়া বর্তমান সভাপতি অনেক আগেই পড়াশুনা শেষ করেছে। নতুন কাউন্সিল ডাকা হচ্ছেনা কেনও বুঝে আসে না।
এই রুমে একাই থাকেন সভাপতি (ছবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তোলা)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাবিতে একটি সান্ধ্য কোর্সে অধ্যায়ণরত। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থীরা হলে সংযুক্তি পেলেও হলে থাকতে পারেন না। কিন্তু ক্ষমতা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ নেতা জগন্নাথ হলে একাই এক রুম নিয়ে থাকছেন।
গত বুধবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে নেতাদের একা রুম নিয়ে থাকার বিরোধীতা করেছেন। এক রুম নিয়ে জমিদারি স্টাইলে থাকা চলবে না বলেন তিনি। একা রুম নিয়ে থাকবে আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর অত্যাচার করবে তা সহ্য করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী। তবে খোদ প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের ছাত্রলীগ সভাপতিই একা রুম নিয়ে থাকেন।
বিষয়টি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে অবস্থানরত এক আবাসিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হলে এমনিতেই সিট সমস্যা। শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে থাকে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি একাই এক রুম নিয়ে থাকে। পড়াশুনা শেষ হয়ে গেলেও হল প্রশাসন তাঁকে ভয়ে কিছু বলছে না।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে হবে। কোনোক্রমেই এর বেশি দিন শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে দেওয়া হবে না। প্রভোস্ট কমিটির সিদ্ধান্তের পর তাঁরা কি ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট মিহির লাল শাহ জানান,আমরা মিটিং কল করেছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। আমরা ব্যবস্থা নিবো।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসের মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হবার পরও হলে থাকছেন এবং একাই একটি রুম দখল করে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট মুঠোফোনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। “সব কথা মুঠোফোনে বলা যায় না” এমন কথা বলে তিনি সাংবাদিককে সরাসরি দেখা করতে বলেন।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসের সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে তাঁর রুমে গেলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।