দুর্নীতির মামলায় জামিন পাননি প্রদীপ

0
DINBODAL (4)

কক্সবাজার টেকনাফের বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় জামিন আবেদন নাকচ করেছেন আদালত। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান এই আদেশ দেন। ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে প্রায় ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এ মামলা হয়।

দুদকের আইনজীবী মাহমদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আদালত প্রদীপের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। চিকিৎসা ও কারাগারে সাক্ষাতের বিষয়ে তাঁর আইনজীবীর করা আবেদনে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেল সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মাহমুদুল হক বলেন, শুনানিতে আদালতকে বলা হয়, ‘আসামি জামিনে গেলে পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজাহারে আসামি প্রদীপের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। অর্থপাচারেরও অভিযোগ আছে। তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করা হোক। ’ তবে প্রদীপের আইনজীবী এসব মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে জামিন মঞ্জুরের জন্য আরজি জানান। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে দেন।

১৪ সেপ্টেম্বর দুদকের করা এই মামলায় শুনানি শেষে প্রদীপকে গ্রেপ্তার দেখান আদালত। ওইদিনই তাঁর জামিনের আবেদন করা হলে আদালত ২০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য রেখেছিলেন।

দুদক সূত্র জানায়, ওই মামলায় প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণও আসামি। প্রদীপ কারাগারে যাওয়ার পর থেকে চুমকি পলাতক।

গত ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অব. ) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় নিহত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজারের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রদীপসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর অসুস্থতার কথা বলে থানা থেকে ছুটি নিয়ে চলে আসেন প্রদীপ। চট্টগ্রামে আত্মগোপনে থাকেন। সেখান থেকে ৬ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে গিয়ে আত্মসমপর্ণ করেন। এরপর থেকে কারাগারে আছেন। পরে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নির্দেশে প্রদীপ, তাঁর স্ত্রী, কক্সবাজারের পুলিশ সুপারসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়।

দুদক সূত্র জানায়, নগরের পাথরঘাটা এলাকায় চুমকি কারণ তাঁর বাবার কাছ থেকে একটি ছয়তলা বাড়ি দানপত্রমূলে পেয়েছেন বলে সম্পদ বিবরণীতে জমা দেন। কিন্তু চুমকির দুই ভাই ও আরেক বোন বাবার কাছ থেকে কোনো বাড়ি পাননি। তাঁরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। এতে বোঝা যায়, প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ওই বাড়িটি করেছেন। কাগজেপত্র তাঁর শ্বশুরের নামে রাখেন। পরে শ্বশুরের কাছ থেকে দানপত্রমূলে নিবন্ধন করে নেন ২০১৩ সালে। ওসি প্রদীপের সব সম্পত্তিই তাঁর স্ত্রী চুমকি কারণের নামে। চুমকি কারণ গৃহিনী। তাঁর বিশ্বাসযোগ্য জ্ঞাত আয়ের উৎসই নেই। চুমকি কারণের নামে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে তিনি পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে খরচ করেছেন ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

চুমকি কারণের পূর্বের সঞ্চয়, উপহার, বাড়িভাড়া থেকে বৈধ আয় হিসেবে ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ২৩৪ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। বৈধ আয় বাদ দিলে চুমকির নামে মোট ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার অবৈধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। এটা তাঁর জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে সম্পদ ক্রয় করে স্ত্রীর নামে রেখেছেন বলে দুদক অনুসন্ধানে তথ্য পেয়েছে।

এখন মামলাটি তদন্ত করছে দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন।

গত ২৩ আগস্ট দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, প্রদীপের বাবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) একজন নিরাপত্তাপ্রহরী ছিলেন। ১৯৯৫ সালে উপপরিদর্শক (এসআই) পদে যোগদান করেন প্রদীপ। ২০০২ সাল থেকে তাঁর সম্পদগুলো দৃশ্যমান হতে থাকে। নানা কারণে হতে থাকেন আলোচিত।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *