যমুনা ফিউচার পার্কে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা
বৈরি আবহাওয়া বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না ফ্যাশনপ্রেমীদের সামনে। বৃষ্টি ও তীব্র গরম উপেক্ষা করে ঈদের কেনাকাটার করতে ফ্যাশনপ্রেমীরা স্বপরিবারে ছুটে আসছেন দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্কে।
ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে এ শপিংমলের ফ্যাশন হাউজগুলো সর্বোচ্চ মানের পণ্যের সমাহার ঘটিয়েছে। ভারত, থাইল্যান্ড, লন্ডন, আমেরিকার বিখ্যাত ব্রান্ডের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। বিক্রি করছেন সাশ্রয়ী দামে।
সোমবার যমুনা ফিউচার পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, সব শ্রেণীর ক্রেতার চাহিদার কথা মাথায় রেখে ফিউচার পার্কের ফ্যাশন হাউজগুলো নামিদামি বিখ্যাত সব ব্রান্ডের পোশাক, ঘড়ি, জুয়েলারি, শাড়ি, ভারতীয় ডিজাইনারদের পোশাকের সমারোহ ঘটিয়েছে। এখানকার শো-রুমগুলোতে বিক্রি হচ্ছে অরিজিনাল পোশাক। ফলে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের নকল পণ্য কেনার বা প্রতারিত হওয়ার ভয় নেই।
প্রতিটি পোশাকই ক্যাটালগ ও ডিজাইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রয়েছে। সাধ ও সাধ্যের মেলবন্ধন মিশিয়ে সব শ্রেণীর পেশা মানুষ সংগ্রহ করছেন পছন্দের পোশাক।
এছাড়া দেশের সব খ্যাতনামা ফ্যাশন হাউজ এক্সটাসি, ইজি, ক্যাটস আই, লা রিভ, ইনফিনিটি, ইউনিক্লো, জেন্টাল পার্ক, প্লাস পয়েন্টের শো-রুমে নতুন নতুন ডিজাউনের পণ্য আনছে প্রতিদিনই। ফুড কোর্টে ইফতারসহ খাবার সুব্যবস্থা মুগ্ধ ক্রেতারা।
ঈদের কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তামান্না জানান, আগে ঈদের কেনাকাটা করতে স্বপরিবারে দেশের বাইরে যেতেন। কিন্তু যমুনা ফিউচার পার্ক প্রতিষ্ঠার পর এখান থেকেই কেনাকাটা করেন। বিদেশি নামিদামি ব্রান্ডের পোশাক ও ভারতীয় ডিজাইনারদের ডিজাইন করা পোশাক এখানকার কয়েকটি শো-রুমে পাওয়া যায়। বেচে যাওয়া বিমান ভাড়ার টাকায় আরও বেশি কসমেটিক্স ও পোশাক কিনতে পারেন।
তামান্না আরও বলেন, ফিউচার পার্কে পরিবেশ রাজধানীর অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় ভালো। পর্যাপ্ত জায়গা থাকায় ঈদের সময়ও লোকজনের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি লাগে না। বিক্রয়কর্মীদের আচরণও বেশ ভালো। স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করা যায়।
৪র্থ তলায় প্যারিস গ্যালারি শো-রুম ঘুরে দেখা গেছে, ভারত, থাইল্যান্ড, চীন ও ভিয়েতনাম থেকে পুরুষ-মহিলাদের ফ্যাশনেবল জুতা আনা হয়েছে। ভারতীয় ডিজাইনারদের ডিজাইন করা নানা রংয়ের গাউন, লং কামিজ ও থ্রি-পিস এবং শাড়ির ব্রান্ডের মধ্যে সোয়াত, রাজগুরু, বেনারশি ও ডেঙ্গু শাড়ির কালেকশন আনা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রচলিত শাড়িও আছে।
কারচুপির কাজ করা লেহেঙ্গার দাম রাখা হয়েছে ৮৫ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। শেরওয়ানি ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা এবং পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। এছাড়া নরমাল পাঞ্জারি বিক্রি হচ্ছে চার হাজার টাকায়। এই শো-রুমে কসমেটিক্স, বাচ্চাদের কাপড়, জুতা, মেয়েদের টপস, ছেলেদের জিন্স প্যান্ট থেকে শুরু করে পরিহিত যাবতীয় ফ্যাশনেবল পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।
প্যারিস গ্যালারির ম্যানেজার মোজাম্মেল হক বলেন, সব শ্রেণী ও বয়সী ক্রেতার জন্য ভারত, থাইল্যান্ড ও চীন থেকে ব্রান্ডের পণ্যের সমাহার ঘটানো হয়েছে। এসব পণ্য কিনতে আগে ভারতে যেতে হতো। এখন সেগুলো ক্রেতাদের সুবিধার্থে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছে।
তিনি জানান, শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য ইউরোপীয় ব্রান্ডের শার্ট, টি শার্ট, প্যান্ট ও স্যুট নিয়ে আলাদা একটি কর্ণার রয়েছে। যেখানে ডার্কস, গিফানি, জনল্যাঙ্গফোর্ড, বাউলিং মতো নামি-দামি পণ্য রাখা হয়েছে।
গতবারের চেয়ে এবার বিক্রি ভালো। ১৫ রমজানের পর থেকে আরও বেশি ক্রেতা সমাগম বাড়বে বলে মোজাম্মেল হক জানান।
এর পাশেই দেশীয় জুতার ব্রান্ড গ্যালারি এপেক্স। শো-রুম ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ক্রেতাদের সুবিধার্থে ৫০০ বেশি নতুন ডিজাইনের জুতা আনা হয়েছে। এছাড়া ঈদের ক্রেতাদের ভালো সার্ভিস দিতে নিজস্ব সেলসম্যানের অতিরিক্ত ৫৫ জন সাপোটিং স্টাফ এক মাসের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন বেশির ভাগ জুতা বিক্রি হচ্ছে বাচ্চা ও নারীদের। ২০ রমজানের পর থেকে পুরুষদের জুতা বিক্রি বাড়বে।
যমুনা ফিউচার পার্কের তৃতীয় তলায় মহিলাদের শাড়ি ও গহনার দোকান। সেখানে নীল আচল শো-রুমে দেখা মিলল ভারতীয় শাড়ির বিশাল কালেকশন। আছে দেশী শাড়িও। তাছাড়া ঈদ উপলক্ষে নির্দিষ্ট আইটেমের শাড়িতে ৪০ শতাংশ ছাড়ও দেয়া হয়েছে।
শো-রুমের সেলস ম্যানেজার খোরশেদ আহমেদ বাবু বলেন, ঈদ উপলক্ষে সব শ্রেণী-বয়সী নারীদের জন্য দেশি-বিদেশি শাড়ির সমারোহ ঘটানো হয়েছে। তাঁত, মিরপুরের কাতানসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় শাড়ি রয়েছে এ শো-রুমে। এগুলোর দাম এক থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে।
ভারতীয় শাড়ির মধ্যে আছে চেন্নাই কাতান, কাঞ্জিবরন, ইককাত কাতান, শিপন, প্রিন্টেড সিল্ক। এসবের দাম তিন হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা।
নীচ তলায় পুরুষদের ফ্যাশন হাউজ ক্যাটস আইয়ের ম্যানেজার সাইফ উদ্দিন বলেন, এবার ঈদ উপলক্ষে নতুন ডিজাইনের এক্সক্লুসিভ পাঞ্জাবি, প্রিন্টের শার্ট, মেয়েদের টপস আনা হয়েছে।
এছাড়া ক্যাটস আইয়ের ফরমাল শার্ট আছে ছেলেদের জন্য। আর নির্দিষ্ট আইটেমের জুতার ওপর ৫০ শতাংশ ছাড় দেয়া হচ্ছে।
About Post Author
