যুগান্তর সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সুদখোর মহাজনের থানায় অভিযোগ

তাড়াইলে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে সেই সুদখোর মহাজন মহিউদ্দিন ভূঁইয়া রতন।
মঙ্গলবার রাতে হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে সাংবাদিকসহ ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন।
এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে ‘পৌনে দুই লাখ টাকার সুদ কোটি টাকা’ শিরোনামে ও ২২ ফেব্রুয়ারি যমুনা টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে মহিউদ্দিন ভূঁইয়া রতনের কাছ থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চতুর্থ শ্রেণির তিন কর্মচারী মাসিক সুদে ঋণ নিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোক মশালচি রেখা বেগম, নৈশ প্রহরী সাবু নিয়োগী ও ঝাড়ুদার সুশীলা রাণী সূত্রধর সাদা স্ট্যাম্প ও ব্যাংক হিসাবের চেকে স্বাক্ষর দিয়ে স্থানীয় সুধী মহাজন মহিউদ্দিন ভূঁইয়া রতনের কাছ থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা সুদে ঋণ নিয়েছিলেন। এখন তিনি ওই তিন সরকারি কর্মচারীকে এক কোটি ৯ লাখ টাকা কর্জ ( ঋণ) দিয়েছিলেন দাবি করে তা পরিশোধের জন্য তাদের নামে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন।
মহিউদ্দিন ভূঁইয়া তাড়াইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন ভূইয়ার বড় ভাই। তিনি নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তির জোরে এই তিন কর্মচারীকে স্বেচ্ছায় পেনশনে গিয়ে ও তাদের সহায়সম্পদ বিক্রি করে ওই বিপুল পরিমাণ টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে জানা যায় ।
এ বিষয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে ‘পৌনে দুই লাখ টাকার সুদ কোটি টাকা’ শিরোনামে ও ২২ ফেব্রুয়ারি যমুনা টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়। এ নিয়ে সর্বত্র নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মঙ্গলবার রাতে দৈনিক যুগান্তরের কিশোরগঞ্জ ব্যুরো চিফ ও যমুনা টিভির সাংবাদিক এটিএম নিজাম, কালের কণ্ঠ ও এটিএন নিউজের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি শফিক আদনান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোক মশালচি রেখা বেগম, নৈশ প্রহরী সাবু নিয়োগীর বিরুদ্ধে হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে একটি অভিযোগ দায়ের করেন এই প্রভাবশালী মহাজন।
এ অভিযোগটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাড়াইল থানার এসআই কামরুল ইসলামকে।
বুধবার কথা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি এখনও তদন্ত করে দেখা হয়নি।
এদিকে থানায় হত্যার হুমকির অভিযোগকারী মহিউদ্দিন ভূঁইয়ার সঙ্গে ২০ ফেব্রুয়ারি কথা বলার সময় তিনি উল্টো নিজেকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ভাই বলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ছিলেন। যার ভিডিও ফুটেজ যুগান্তরের কাছে রক্ষিত আছে।
এছাড়া তিনি নিরীহ কমর্চারীদের মিথ্যা মামলায় হয়রানিসহ নানাভাবে হুমকি দিয়ে দরিদ্র কর্মচারীদের জীবনের শেষ সম্বল পেনশনের টাকা হাতিয়ে নিতে এখন মরিয়া হয়ে ওঠেছেন বলে তারা অভিযোগ করেছেন ।
এ বিষয়ে তাড়াইল সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান মহাজন বলেন, সামান্য বেতনের তিন কর্মচারীকে বিপুল পরিমাণ টাকা কর্জ দেয়ার ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
মহিউদ্দিন ভূঁইয়ার থানায় অভিযোগ দায়ের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তাড়াইল থানার ওসি চৌধুরী মিজানুজ্জামান বলেন, ‘আমি ছুটিতে ছিলাম বুধবার এসেছি। বিষয় জেনে পরে এ বিষয়ে কথা বলব। তবে কেউ থানায় অভিযোগ করলেই হবে না, এর জন্য তথ্য প্রামাণের প্রয়োজন লাগবে।’
জেলার আইন কর্মকর্তা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শাহ আজিজুল হক জানালেন, এ ধরনের অসহায় লোকজনের জন্য বিনা খরচে আইন সহায়তার সুযোগ রয়েছে।
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এ ধরনের কর্মচারীদের ওই বিপুল পরিমাণ টাকা কর্জ দেয়ার বিষয়টি কারও কাছে বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার কথা নয়। আর কৌশল হিসেবে মামলার হুমকি দিয়ে তাদের নামে পাঠানো হচ্ছে উকিল নোটিশ