অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরছে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম

কেমিক্যাল পল্লী বাস্তবায়নকারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিসিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি সব সংস্থা জরুরি ভিত্তিতে কাজ করলেও কেমিক্যাল পল্লী নির্মাণ শেষ হতে সময় লাগবে আরো ছয় মাস। এমন পরিস্থিতিতে কেমিক্যাল পল্লী নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম সরিয়ে রাজধানীর আশপাশের সরকারি কারখানার অব্যবহৃত জায়গায় কেমিক্যাল মজুদ রেখে ব্যবসায়ীদের ব্যবসার সুযোগ করে দিতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে জায়গা নির্ধারণের পাশাপশি কেমিক্যালের নিরাপদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণে বিশেষজ্ঞদের কঠোর নজরদারি নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আজ বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই প্রতিনিধিসহ পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ জানিয়ে দেওয়া হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), স্থানীয় সরকার বিভাগ, বাণিজ্য, জ্বালানি ও খনিজ, শ্রম ও কর্মসংস্থান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, রাজউক এবং কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন সভাপতিত্ব করবেন।
আজকের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্পসচিব আবদুল হালিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বুধবার আমরা আবারও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসব। এ সময় পুরান ঢাকার সমস্যা সমাধানে কর্মরত সকল সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকে এখনই পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গুদাম সরানোর বিষয়ে আলোচনা হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রাজধানীর আশপাশে অবস্থিত সরকারি কারখানার অব্যবহৃত জায়গায় পুরান ঢাকার কেমিক্যাল সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে শিল্পসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি ব্যবসায়ীদের সমস্যায় ফেলতে চান না। তাই রাজধানীর আশপাশে যেসব সরকারি কারখানা রয়েছে সেখানকার অব্যবহৃত জায়গায় পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের কেমিক্যাল রেখে ব্যবসার সুযোগ দিতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা নিজেদের বাড়িঘর থেকে সেখানে সহজে যাতায়াত করে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে গাজীপুরে কিছু কারখানা আছে। সেখানকার পরিবেশ অত্যন্ত ভালো। আবার জনবসতির বাইরে নিরাপদও। এসব কারখানার অব্যহৃত জায়গায় আধুনিক পদ্ধতিতে গুদাম করে কেমিক্যালের ব্যবসা করতে দেওয়া যেতে পারে। এর বাইরে ঢাকার কাছে আরো কিছু কারখানা চিহ্নিত করা হবে।’
ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর এ প্রস্তাবে রাজি হবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এ সুযোগ গ্রহণ করবেন। কেমিক্যালের কারণে একের পর এক জীবন যাচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আবার ব্যবসায়ীদের ব্যবসাও বন্ধ করা যাবে না। কারণ শিল্পের অনেক খাত কেমিক্যালের ওপর নির্ভরশীল।’
চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয়। গত সোমবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে এফবিসিসিআই সহসভাপতি মুনতাকিম আশরাফের নেতৃত্বে ‘পুরান ঢাকার অগ্নিকাণ্ডের পর আশু করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক মতবিনিময়সভা হয়। এ সময় উপস্থিত কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা পুরান ঢাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে ব্যবসা করতে সরকারের কাছে জয়গা বরাদ্দের দাবি জানান। সভা শেষে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ‘জনবসতির মধ্যে কেমিক্যাল রেখে ব্যবসা করা হুমকির। ব্যবসায়ীরা নিয়মের মধ্যে থেকে ব্যবসা করতে আগ্রহী। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সরকারি সব সংস্থা যৌথভাবে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করলেও আগামী ছয় মাসের মধ্যে কেমিক্যাল পল্লী নির্মাণ শেষ করা সম্ভব হবে না।’
রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক কারখানাগুলো পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করতে শিল্প মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে দুটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে কেমিক্যাল কারখানা স্থানান্তরের জন্য কেরানীগঞ্জে ‘বিসিক কেমিক্যাল পল্লী প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৫০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা এ প্রকল্পে ৯৩৬টি প্লট থাকছে। এ ছাড়া প্লাস্টিক শিল্পের উন্নয়নে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার বরবর্তা মৌজায় ‘বিসিক প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৫০ এক জমির ওপর স্থাপিত এ নগরীতে ৩৬০টি প্লট থাকবে।