অর্থমন্ত্রীর পক্ষই নিলেন মন্ত্রী-এমপিরা

বাজেট পেশের পর থেকেই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সমালোচনায় মুখর ছিল জাতীয় সংসদের অধিবেশন।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা ব্যাংক আমানতের ওপর অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক, উচ্চহারে ভ্যাট ধার্যসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়ে নানাভাবে অর্থমন্ত্রীকে ঘায়েল করছিলেন।
তাদের সঙ্গে সুর মেলান সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরাও। বেশ কয়েকজন সিনিয়র এমপির পাশাপাশি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীও অর্থমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেন।
একপর্যায়ে বিরোধী দল থেকে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগেরও দাবি ওঠে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগের দিনে হঠাৎ করেই যেন পাল্টে যায় সংসদের চিত্র।
শিল্পমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ সরকারদলীয় এমপিরা অর্থমন্ত্রীর পক্ষাবলম্বনই শুধু করেননি তার বিপক্ষে বক্তব্যদানকারী মন্ত্রী-এমপিদের তুখোড় সমালোচনাও করেন। জবাব দেন তাদের নানা কটূক্তির।
শুরুটা করেছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এরপর বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমালোচনার জবাবে সংসদে সরব হতে শুরু করেন অন্য সহকর্মীরাও।
বুধবার বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে শিল্পমন্ত্রী আমু বলেন, ভ্যাট নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। এ বাজেট সর্বসম্মতিক্রমে মন্ত্রিসভায় পাস হয়। তখন কেউ কোনো আপত্তি করেননি।
ব্যক্তিগতভাবে অর্থমন্ত্রীর প্রতি এখানে কটাক্ষ করে অনেকে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা অনভিপ্রেত।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বাজেট নিয়ে অনেক কথা, আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। সংসদ সদস্য হিসেবে, মন্ত্রী হিসেবে একজন নাগরিক হিসেবে এগুলো পড়ছি ও শুনছি।
১৫ শতাংশ ভ্যাট, আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক, সঞ্চয়পত্রে সুদ হার নিয়ে সব কথা হচ্ছে। তিনি বলেন, সবাই অর্থমন্ত্রীর দিকে তীর ছুঁড়ছেন, তাকে দোষারোপ করছেন। মনে রাখতে হবে, অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিশাল বাজেট উপস্থাপন করেছেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট আইন, আবগারি শুল্ক, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এ তিনটি বিষয় নিয়েই বাজেট নয়। আরও বিষয় আছে, যা গুরুত্বপূর্ণ। অন্য বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করছি না।
ভ্যাট, সুদ হার ও আবগারি- এই তিন বিষয়ের এদিক ওদিকে হিসাব করে বাজেট মাপবেন না। এক মুখে অর্থনীতির প্রশংসা আর একদিকে ব্যর্থ অর্থমন্ত্রী বলবেন- এটা কিন্তু হয় না।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, একটা বাজেট পেশ করা হয়েছে। বাজেটের ভেতর ভালো-খারাপ থাকতে পারে। সেটা নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে। সেই আলোচনা আমরা করছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় একটা সিদ্ধান্ত আসবে।
কিন্তু এজন্য অপেক্ষা না করে যারা সমালোচনার নামে কটাক্ষ-কটূক্তিপূর্ণ মন্তব্য করছেন এটা ঠিক নয়, দুঃখজনক।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র পার্লামেন্টারিয়ান আব্দুল মতিন খসরু বলেন, অর্থমন্ত্রীর মতো একজন ব্যক্তিকে নিয়ে আমরা গৌরব বোধ করি। তাকে নিয়ে যেভাবে কথা বলা হয়েছে তাতে জাতি বিব্রত হয়েছে, আমিও বিব্রত হয়েছি।
তিনি সিনিয়র ম্যান। সংসদে এভাবে কথা বলা উচিত নয়। তাহলে জাতি আমাদের কাছ থেকে কী শিখবে?