অসুস্থতায় কাবু হয়ে পড়েছেন সাবেক মেয়র কামরান

0
mayor kamran

mayor kamran

অসুস্থতায় কাবু হয়ে পড়েছেন সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। এনজিওগ্রামের মাধ্যমে হার্টে রিং বসানো হয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসও রয়েছে। কোনো নিয়মের বালাই নেই তার কাছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খাওয়া নেই- নাওয়া নেই জনগণকে নিয়ে মেতে রয়েছেন। এখন তিনি মেয়র না।

এরপরও মানুষ প্রয়োজনে ছুটে আসে তার কাছে। তার ড্রইংরুম এখনো সরব। যারাই প্রয়োজনে যায় যতটুকু সম্ভব সাহায্য করেন তিনি। আবার সকাল থেকে শুরু হয় প্রোগ্রাম। চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। তাকে নিয়ে রীতিমতো বিরক্ত পরিবারের সদস্যরা। অনেক সময় তাকে নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা করেছেন তারা। কিন্তু কাজ হয়নি। রাত নেই, দিন নেই ছুটে চলেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের মহিউদ্দিনের পর ছিল সিলেটের কামরানের নাম। দুজনই দীর্ঘ সময় সিটি করপোরেশনের দায়িত্বভার সামলিয়েছেন। মহিউদ্দিন ছিলেন বড় ভাই। কামরানের আশা-ভরসার অন্যতম জায়গা। সব সময় কামরানকে পরামর্শ দিতেন তিনি।

মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর কামরান খানিকটা ভেঙে পড়েছেন। অনেক আগে থেকেই কামরান অসুস্থতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। দীর্ঘদিন থেকে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। মেয়র থাকাকালে কিছুটা নিয়মের মধ্যে ছিলেন। রাজনীতি, নগরবাসীর সেবাকে এক সঙ্গে চালিয়ে গেছেন। দেড়যুগ তিনি নগরের শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে সেবা করেছেন। ২০১৩ সালের সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেই সিংহাসন হারান কামরান। হেফাজতি ঝড়ে উড়ে যায় তার জনপ্রিয় মসনদ। কিছুটা থমকে দাঁড়িয়েছিলেন কামরান। দীর্ঘদিন ধরে স্বপ্ন দেখছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সিলেটকে ঢেলে সাজাবেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। কাজ শুরু করেছিলেন। কারো তোয়াক্কা না করেই নিজেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছিলেন ঢাকায়। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বড় বড় কয়েকটি প্রকল্পের অনুমতি নিয়ে আসেন। এতে করে নিজ দলের অনেকের কাছে তিনি বিরাগভাজন হয়েছিলেন। এরপরও নগরবাসীর স্বার্থে থেমে থাকেননি কামরান। উন্নয়নে লবিং চালিয়ে যান সমানতালে। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক রেখে চলছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ঝড়ে কামরানের স্বপ্নভঙ্গ। এই হোঁচটে কামরান থমকে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে আশাহত হননি।

নির্বাচনের পর পরই এক দফা অসুস্থতায় পড়েছিলেন। সেটি সামলে উঠেছেন। ফের সরব হন তিনি। আবার আগের মতই দিন রাত-দিন সমান করে ছুটে চলেছেন। মেয়র নয়, এরপরও নানা কাজে মানুষ যায় তার বাসায়। কামরানের ড্রয়িংরুম সরব সব সময়। এবার বাড়তি দায়িত্বও তার উপর। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। সিলেট মহানগরের সভাপতিও তিনি। শেখ হাসিনা সিলেট সফর করেছেন ৩০শে জানুয়ারি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফর সফল করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ফিরে যাওয়ার পর শরীর ভালো যাচ্ছিল না কামরানের। বড় ছেলে আরমান আহমদ শিপলু ডাক্তার। পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগ নেতাও। স্ত্রী আসমা কামরান সিলেট মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেত্রী। কামরানের অসুস্থতায় তারা ছিলেন চিন্তিত। ফেব্রুয়ারি মাসে বার বার ডাক্তারের কাছে কামরানকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নতুন করে ধরা পড়ে হার্টের সমস্যা। সিলেটের ডাক্তাররা পরামর্শ দিলেন এনজিওগ্রাম করাতে হবে। তাতেও সায় ছিল না কামরানের। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রোগ্রামে ব্যস্ত থাকেন। খাওয়া-দাওয়া করছিলেন না নিয়ম মতো। এমনকি ওষুধ সেবনেও ছিল খামখেয়ালীপনা। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী আসমা কামরান ও ছেলে ডা. আরমানকে নিয়ে সম্প্রতি ঢাকায় হার্ট ফাউন্ডেশনে গেলেন। সেখানে এনজিওগ্রামের পর তার হার্টে চারটি ব্লক ধরা পড়ে। ডাক্তাররা জরুরি ভিত্তিতে ব্লক ধরা পড়া স্থানে তিনটি রিং প্রতিস্থাপন করেছেন। এখন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন কামরান। বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকা থেকে সিলেটে নিয়ে আসা হয়েছে। নিজ বাসায় বিশ্রামেই সময় কাটাচ্ছেন তিনি। কামরানপুত্র ও জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু জানিয়েছেন- কামরান ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন। আরো দুই সপ্তাহ তাকে বিশ্রামে থাকতে হবে। তিনি তার পিতার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *