আইএলও’র শ্রম অধিকার নিয়ে মন্তব্যের জবাব দেবে সরকার
বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি ও রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। জেনেভায় সংস্থাটির বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার সময় এই নেতিবাচক মন্তব্যের জবাব দেবে সরকার। শ্রম সচিব মিখাইল শিপার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বার্ষিক সম্মেলনে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, এ নেতিবাচক মন্তব্য, যা একটি বিশেষ অনুচ্ছেদ দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি যেন আরও খারাপ না হয়।’
প্রতিবেদনের বিশেষ অনুচ্ছেদটিতে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল আইন (বেপজা আইন) ও বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন এবং জাতিসংঘের শ্রম কনভেনশন মেনে ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা এবং তাদের স্বাধীনভাবে কার্যক্রম সম্পাদনের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বার্ষিক কনফারেন্স সোমবার শুরু হয়েছে। আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত এ সম্মেলন চলবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চার হাজার প্রতিনিধি এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। বৈঠকে রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল আইনটি নিয়ে বিশেষ আলোচনার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন। আশা করা হচ্ছে, অনুষ্ঠানের শেষের দিকে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হবে।
শ্রম সচিব বলেন, বাংলাদেশ বিষয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার “বিশেষ অনুচ্ছেদটি যেন আরো খারাপ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা আমাদের প্রধান কাজ। এর উপর নির্ভর করছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধার বিষয়টি।”
তিনি বলেন, এবারের বার্ষিক কনফারেন্সে বিশেষ অনুচ্ছেদটি প্রত্যাহার করা হবে না। তারা আমাদের পর্যবেক্ষণে রাখবে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের নিরবিছিন্ন শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে এই বিশেষ অনুচ্ছেদটি প্রভাব রাখবে। কারণ এর ওপর ভিত্তি করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তার বাজার সুবিধা পর্যালোচনা করে থাকে। বাংলাদেশের শ্রম অধিকার ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন একাধিকবার সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বার্ষিক কনফারেন্সে কোনও ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পর্যালোচনা রিপোর্টকেও প্রভাবিত করবে।
বার্ষিক কনফারেন্সে বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিশেষ অনুচ্ছেদ নিয়ে আলোচনার সময়ে সরকার কি বলবে? এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রম সচিব বলেন, আমাদের পক্ষে যতদূর করা সম্ভব সেটি আমরা করেছি। আমরা রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল আইন সংসদ থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছি পুনর্বিবেচনার জন্য। আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন একটি খসড়া কেবিনেটে পেশ করবো অনুমোদনের জন্য। চেষ্টা করবো যতদূর সম্ভব আন্তর্জাতিক আইন ও নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন খসড়া তৈরি করার।
রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল আইন ও বাংলাদেশ শ্রম আইন একই ধরনের হবে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একটি আইন করার বিষয়ে আমরা এখনও তৈরি না, তবে সামনের দিকে অগ্রসর হতে রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল আইন যতদূর সম্ভব সহজ করা হবে।
এ দুই আইনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নেই। কিন্তু বাংলাদেশ শ্রম আইনে এ অধিকার দেওয়া হয়েছে।