ইতিহাসের এক অন্যরকম পবিত্র হজ্জ আজ

0
pri159589486

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

আজ বৃহস্পতিবার পবিত্র হজ। করোনাভাইরাস সংক্রমণে বৈশ্বিক মহামারির কারণে এবার স্বল্পসংখ্যক হজযাত্রী নিয়ে হজ হচ্ছে সীমিত পরিসরে। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। এই ময়দানে আজ ১০ হাজার মানুষের মাঝে ধ্বনিত হবে ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুল্ক।’ (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার)। আজ কাবা শরিফে নতুন গিলাফও পরানো হবে। শুধু সৌদি নাগরিকদের অংশগ্রহণে এই হজ ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে।

এবার সৌদি আরবের বাইরের কোনো দেশ থেকে হজে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না কেউ। মহামারি করোনার কারণে জারি করা হয় এ নিষেধাজ্ঞা।

আর্থিক ও শারীরিকভাবে সমর্থ মুসলিম পুরুষ ও নারীর জন্য হজ ফরজ। এবার যাঁরা হজ করছেন, তাঁরা আজ সূর্যাস্তের আগপর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে মহান আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকবেন।

জেদ্দা থেকে সাংবাদিক জাহাঙ্গির আলম স্বপন জানালেন, সৌদি সরকার এবার হজযাত্রীদের ভিআইপি হিসেবে খেদমতের ব্যবস্থা করেছে। হজের আগে পাঁচ তারকা হোটেলে থাকা, উন্নত মানের খাওয়া, যাতায়াত, চিকিৎসাসহ সব সেবা বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। সর্বোপরি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। একাধিক নিরাপত্তাচৌকি বসানো হয়েছে, অনুমোদিত হজযাত্রী ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করলে তাঁদের ১০ থেকে ২০ হাজার রিয়াল জরিমানা করা হবে।
প্রতিটি বাসে সর্বোচ্চ ২০ জন করে হজযাত্রী চলাচল করছেন। প্রতিদিন তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরিচর্যা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের পাশাপাশি ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে কোরবানির ব্যবস্থা থাকবে। হাজার হাজার নিরাপত্তাকর্মী, চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবেন। মিনায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সর্বোচ্চ ৫০ জন একত্রে পাথর নিক্ষেপ করতে পারবেন। নিক্ষেপের নুড়িপাথর হজ কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যাগের মাধ্যমে সরবরাহ করবে।

সীমিত পরিসরে ২৯ জুলাই বুধবার মিনায় যাওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় হজের কার্যক্রম। যাঁরা আগে হজ করেননি, কেবল তাঁরাই এবার হজের সুযোগ পেয়েছেন। অংশগ্রহণকারীদের সবাইকে বাধ্যতামূলক সাত দিনের সঙ্গনিরোধে (আইসোলেশন) রাখা হয়। মক্কায় আসা নির্বাচিত হজযাত্রীদের আগে থেকেই শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে আলাদা আলাদা স্থানে রাখা হয়। স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের ব্যাগপত্র জীবাণুমুক্ত করেন। স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকর্মীরা পবিত্র মক্কা ও কাবা শরিফের চারদিকে জীবাণুমুক্ত করতে বিশেষভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছেন। কোনো হজযাত্রীকে কাবা শরিফ স্পর্শ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যথাযথ দূরত্ব বজায় (১.৫ মিটার বা ৫ ফুট) রেখে তাওয়াফ, নামাজে অংশগ্রহণ, সাঈসহ হজের সব কার্যক্রম পালন করতে হচ্ছে।

আরাফাত ময়দানের তিন দিক পাহাড়বেষ্টিত। মাঝে দুই মাইল দৈর্ঘ্য ও দুই মাইল প্রস্থের এই সমতল ভূমি। জাবাল মানে পাহাড়। জাবালে রহমত হলো রহমতের পাহাড়। রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) জাবালে রহমত পাহাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। একে কেউ কেউ দোয়ার পাহাড়ও বলেন। ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলন স্মরণ করিয়ে দেয় আদি পিতা হজরত আদম (আ.) ও আদি মাতা হজরত হাওয়ার (আ.) পুনর্মিলনের ঘটনাকে।

হাজিরা আজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থানের পর মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে অবস্থান করবেন। শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করবেন সেখান থেকে।

মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা মিনায় ফিরবেন। মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিয়ে মাথার চুল ছেঁটে (ন্যাড়া করে) গোসল করবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড় বদল করবেন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মসজিদুল হারামে গিয়ে কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন।

কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় ‘সাঈ’ (সাতবার দৌড়াবেন) করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যত দিন থাকবেন, তত দিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন।

আজ আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা। আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের খুতবা দেওয়া হবে।

এ বছর হজের খুতবা দেবেন শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন সোলায়মান আল মানিয়া। তাঁর বয়স ৯২ বছর, তিনিই সবচেয়ে বেশি বয়সের খতিব। প্রতিবছর হজের দিন কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ পরানো হয়। সেই ধারাবিহকতায় আজও কাবা শরিফে নতুন গিলাফ পরানো হবে। হাজিরা তখন আরাফাতের ময়দানে থাকবেন। আরাফাত থেকে ফিরে এসে তাঁরা কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ দেখতে পাবেন। এই গিলাফ বা কিসওয়া তৈরিতে ব্যবহৃত হয় কালো রঙের ৬৭০ কেজি খাঁটি রেশম। পুরোনো গিলাফকে টুকরা করে বিভিন্ন দেশের ইসলামিক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রাষ্ট্রপ্রধানদের উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *