আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা ছাড়া বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা ভুল

0
rohinga

rohinga

রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে আন্তর্জাতিক সংস্থাকে যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা ছাড়া বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করা ভুল হচ্ছে। নিবন্ধনের কাজে আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত করা হলেই এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

অন্যথায় মিয়ানমার এভাবে নিবন্ধিতদের নিজ দেশের নাগরিক বলে মেনে নেবে না। এ পর্যন্ত ৬৭ হাজার ৮২১ রোহিঙ্গার যে নিবন্ধন হয়েছে সেটা মিয়ানমার মেনে নাও নিতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে টালবাহানার সুযোগ পাবে।

পাসপোর্ট ও বহির্গমন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান যুগান্তরকে বলেন, রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন এবং কার্ড বিতরণ কার্যক্রমের সঙ্গে শুরু থেকেই ইউএনএইচসিআর এবং আইওএমসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও সাহায্য সংস্থা যুক্ত রয়েছে। রোহিঙ্গা নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় তারা আমাদের বিভিন্নভাবে সহায়তাও করছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কাজ করছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কাজে তারা লজিস্টিক সহায়তা দিচ্ছেন। তারা (সংস্থা দুটি) অফিসিয়ালি এ কাজের সঙ্গে যুক্ত নয়। পাসপোর্ট অধিদফতর বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করছে।

জানা গেছে, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহযোগিতায় পাসপোর্ট অধিদফতর টেকনাফ ও উখিয়ার তিনটি কেন্দ্রে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছে।

বুধবার পর্যন্ত ৬৭ হাজার ৮২১ জনের নিবন্ধন হয়েছে। শুরুতে এ কার্যক্রমে ধীরগতি থাকলেও পরে বুথ ও কম্পিউটার সংখ্যা বৃদ্ধি করায় এখন গতি বেড়েছে। এর সঙ্গে জাতিসংঘের কোনো সংস্থা অফিসিয়ালি যুক্ত হলে আন্তর্জাতিকভাবে এর গুরুত্ব বাড়বে।

তখন নিবন্ধিতদের নিজ দেশের নাগরিক হিসেবে মেনে নেয়ার জন্য মিয়ানমারের ওপর বৈশ্বিক চাপ সৃষ্টি করা যাবে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত না হওয়ার বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা হবে। এরপর জাতিসংঘ বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের এক বা একাধিক সংস্থাকে এর সঙ্গে দাফতরিকভাবে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্পৃক্ততা ছাড়া বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্পৃক্ততা ছাড়া নিবন্ধিত রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফিরিয়ে নেবে বলে মনে করি না। এমনিতে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তারা টালবাহানা করছে। অতীতে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে অনেক আলোচনা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।

এবারও আলোচনা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কাজেই আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাকে সম্পৃক্ত করা গেলে এর মান বাড়বে, গ্রহণযোগ্যতাও তৈরি হবে। তখন নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের নাগরিক এটা প্রমাণ করা সহজ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে এ তালিকার ভিত্তিতে তাদের ফেরত নেয়ার জন্য দেশটির ওপর বৈশ্বিক চাপ সৃষ্টি করা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অপর এক বিশেষজ্ঞ বলেন, নিবন্ধন কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক সংস্থাকে যুক্ত করা না হলে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের নাগরিক হিসেবে মানবে কিনা, তা নিয়ে যথেস্ট সন্দেহ আছে।

তিনি বলেন, বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের প্রতিটি কাগজে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের স্বাক্ষর, সিল প্রমাণ হিসেবে থাকতে হবে। রোহিঙ্গাদের যে কার্ড দেয়া হবে প্রয়োজন হলে তাতেও সিলমোহর থাকতে হবে। এভাবে নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের নাগরিক হিসেবে মানতে বাধ্য হবে মিয়ানমার।

আমাদের টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কার্যক্রমে ইউএনএইচসিআর ও আইওএম লজিস্টিক ও স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে সহায়তা করছে। তবে এতে তাদের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নেই। পাসপোর্ট অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহযোগিতায় টেকনাফ ও উখিয়ার তিনটি কেন্দ্রে নিবন্ধন চলছে।

নয়াপাড়া কেন্দ্রে নিবন্ধন কার্যক্রমে দায়িত্বরত পাসপোর্ট অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক আজিজুল ইসলাম জানান, এখন আগের চেয়ে আরও দ্রুতগতিতে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। বুধবার এক দিনেই তিনটি কেন্দ্রে ছয় হাজার ৮৭১ জন রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়েছে।

এ কেন্দ্রে দায়িত্বরত সহকারী পরিচালক সাইদুল ইসলাম জানান, ইউএনএইচসিআর এ কার্যক্রমে লজিস্টিক সাপোর্ট যেমন- বিদ্যুৎ সরবরাহ ও তাদের স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে একটি টোকেন দেয়া হয়।

সেই টোকেন নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে রোহিঙ্গারা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হয়ে একটি পরিচয়পত্র পাচ্ছেন। এছাড়া আইওএম শুরু থেকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।

জানা গেছে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের দায়িত্ব দেয়া হয় পাসপোর্ট ও বহির্গমন অধিদফতরকে। অধিদফতরের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যরা যুক্ত হয়ে কাজ করছেন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *