আপন জুয়েলার্সের সাড়ে ১২ মণ স্বর্ণের এক কেজিরও বৈধ কাগজ নেই

0
apaan20170517190309

apaan20170517190309

দিনবদল ডেক্স: আপন জুয়েলার্স থেকে জব্দ করা ৪৯৮ কেজি (প্রায় সাড়ে ১২ মণ) স্বর্ণের মধ্যে এক কেজিরও কোনো বৈধ কাগজ দেখাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ডার্টি মানি ও স্বর্ণ-ডায়মন্ড চোরাচালানের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

বনানীর আলোচিত ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের বাবার প্রতিষ্ঠান ‘আপন জুয়েলার্স’ থেকে জব্দ করা স্বর্ণের বিষয়ে বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান।

শুল্ক ও গোয়েন্দা দল আপন জুয়েলার্সের গুলশান, উত্তরা, মৌচাক ও সীমান্ত স্কয়ারসহ বিভিন্ন শাখায় অভিযান চালিয়ে ৪৯৮ কেজি স্বর্ণ ও ডায়মন্ড ব্যাখ্যাহীনভাবে মজুদ রাখার অভিযোগে জব্দ করে। এছাড়া আপন জুয়েলার্সের দুটি শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়।

শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তারা কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছেন। কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। লিখিত ও মৌখিক দুই উপায়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা যেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি সেসব বিষয়ে তারা সময় নিয়েছেন।’

‘আপন জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী তিন মালিক দিলদার আহমেদ, গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদ জবানবন্দি শেষে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে ১৫ দিন সময় প্রার্থনা করেন। আমরা সার্বিক বিবেচনায় তাদের আগামী ২৩ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছি। ২৩ তারিখ বেলা ১১টায় আবারও তাদের শুল্ক ও গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হবে।’

ড. মইনুল খান বলেন, ‘আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের আরও পাঁচদিন সময় দিলাম। এ সময়ের মধ্যে তারা যদি জব্দ করা স্বর্ণ-ডায়মন্ডের পক্ষে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারেন তবে আমরা একতরফাভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

তিনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলছেন, জব্দ করা স্বর্ণের মধ্যে গ্রাহক ও ভোক্তাদের গচ্ছিত কিছু স্বর্ণ রয়েছে। যেগুলো রিপেয়ারিংয়ের জন্য তাদের শাখাগুলোতে ছিল। তাদের সেসব স্বর্ণ যেন ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয় সে আবেদন আমরা আমলে নিয়েছি। জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে আপন জুয়েলার্সের প্রতিটি শাখায় রিপেয়ারিং ও এক্সচেঞ্জের জন্য যেসব গ্রাহক তাদের স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান অলঙ্কার অক্ষত অবস্থায় গচ্ছিত রেখেছিলেন তাদের আগামী ২২ মে (সোমবার) বেলা ২টায় সংশ্লিষ্ট শাখায় রসিদসহ উপস্থিত হয়ে স্বর্ণ, অলঙ্কার ও অন্যান্য মূল্যবান অলঙ্কারাদি অক্ষত অবস্থায় ফেরত নেয়ার অনুরোধ জনানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা আপন জুয়েলার্সের মালিকপক্ষ তাদের গ্রাহকদের জানিয়ে দেবেন।’

‘পাঁচটি শাখা সিলগালা করায় তালাবদ্ধ আছে। সিলগালা করা শাখাগুলোর কর্তৃপক্ষ/কর্মচারীদের এজন্য ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে আপন জুয়েলার্স। যেগুলো শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃক জব্দ করা হয়েছে সেগুলোর কপি তাদের (আপন জুয়েলার্স) সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। জব্দকৃত স্বর্ণের ডকুমেন্টের কপি দেখানোর জন্য তারা আবেদন করেছেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাদের দলিলাদি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বেলা ২টায় প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে প্রাঙ্গণ খুলে সংগ্রহের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’

‘আমাদের কাজে স্বচ্ছতা আছে। ইতোমধ্যে আমরা সেটা প্রমাণ করেছি। এ কারণে আমাদের কার্যালয়ের সামনে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা গাড়ি রেখে চিঠি লিখে চলে যাচ্ছে’ বলেও দাবি করেন শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক।

বুধবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিট থেকে বিকেল সোয়া ৫টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আপন জুয়েলার্সের তিন মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এর আগে ১৪ ও ১৫ মে শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ আপন জুয়েলার্সের গুলশান ডিসিসি মার্কেট, গুলশান এভিনিউ, উত্তরা, মৌচাক ও সীমান্ত স্কয়ার শাখায় অভিযান পরিচালনা করে প্রায় সাড়ে ১২ মণ স্বর্ণালঙ্কার ও ৪২৭ গ্রাম ডায়মন্ড ব্যাখ্যাহীনভাবে মজুদ থাকার দায়ে সাময়িকভাবে জব্দ করে।

মূল্যবান এসব সামগ্রী সরবরাহের বিষয়ে কোনো ধরনের বৈধ দলিলাদি আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ দেখাতে না পারায় এবং প্রাথমিকভাবে তথ্য যাচাই করে এগুলোর আমদানি ও ক্রয়ের উৎস দফতরের তদন্ত দলের কাছে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় এগুলো সাময়িকভাবে জব্দ করে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের জিম্মায় প্রদান করা হয়।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *