ইইডির বরখাস্ত কর্মচারী কাদেরের খুঁটির জোর কোথায়

বিশেষ প্রতিনিধি: ১৯৮৪ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে মাষ্টাররোলে একজন পিয়ন হিসেবে আব্দুল কাদেরের চাকুরীতে যোগদান। চাকুরী যোগদানের আগে কোন রকমে জীবন ধারণ করতেন আব্দুল কাদের ।কিন্তু পিয়নের চাকুরী যেন তার সাপে বড়, পিয়ন থেকে আজ সে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক। ‘আলাদিনের চেরাগের’ স্পর্শে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।
আলাদিনের সেই প্রদীপ হলো তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী এস এস এম এ মান্নান তার আত্মীয় থাকার সুবাদে প্রভাব খাটিয়ে এসএসসি, এইচএসসি এবং ডিগ্রির সনদ জালিয়াতি করে স্টেনোগ্রাফার পদে যোগদান করেন আব্দুল কাদের। নিয়োগ পাওয়ার পরপরই দ্রুত বদলে যেতে থাকে কাদেরের জীবন-যাপন। স্টোনোগ্রাফার পদে থাকাকালীন সে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড়।
অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, স্টোনোগ্রাফার হিসেবে কাদের নিয়োগ পাওয়ার পর সখ্যতা গড়ে তোলেন বিভিন্ন রকমের দুর্নীতির সঙ্গে। পরবর্তীতে সে প্রভাব বিস্তার করে প্রধান প্রকৌশলীর মাধ্যমে বিভিন্ন টেন্ডার অনুমোদন করত। টেন্ডার অনুমোদনের ক্ষেত্রে তিনি প্রধান প্রকৌশলী ব্যতীত অন্য কোনো প্রকৌশলীর স্বাক্ষর নেয়ার প্রয়োজন মনে করতেন না। সে সময় তিনি প্রধান প্রকৌশলীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারদের নিকট থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে টাকার পাহাড় বানিয়েছেন এবং উত্তরার মোল্লার টেকে একটি বিলাসবহুল বাংলো বাড়ি বানিয়েছেন। বর্তমানেও তার বিরুদ্ধে প্রভাব কাটিয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের বদলি, তদবির থেকে শুরু করে নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় বিপুল পরিমাণ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী এস এস এম এ মান্নানের আশির্বাদ পেয়ে আব্দুল কাদের দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
অবশেষে গত ১০ জুলাই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে অফিস আদেশ জারি করে ইইডি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসদাচরণ ও বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) কথিত প্রভাবশালী কর্মচারী নেতা ও কর্মচারী সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল কাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মো. হানজালা স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, ‘ইইডির প্রধান কার্যালয়ের (সংযুক্ত : ঢাকা জোন) স্টেনোগ্রাফার আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫-এর ৩(বি) বিধির অধীনে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিধিমালার ১১(১) ধারা মোতাবেক তিনি সাময়িকভাবে বরখাস্তকালীন সময়ে খোরপোষ ভাতা পাইবেন।’
ইইডির সূত্রে জানা যায়, ‘জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসদাচরণসহ আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিল। এ জন্য তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে দুর্নীতি, অনিয়ম ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করলে কাউকে রেহাই দেওয়া যাবে না।’
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইইডির এক কর্মচারী নেতা জানান, ‘আবদুল কাদের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর কর্মচারী সমিতির সভাপতি থাকার সময়ে ৩৫ জন সদস্যের ২৮ জন তার বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করায় তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর এক বছরের বেশি সময় ধরে সমিতির কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।’
বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, আবদুল কাদের ২০০২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে তিনি বিএনপিতে যোগ করেছিলেন।
আব্দুল কাদের চাকুরী থেকে বরখাস্ত করার পরও ঠিকাদারদের তাকে মাধ্যমে কাজ না নিলে হুমকি প্রদর্শন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে ঠিকাদারগণ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
সচেতন মহলের দাবী আব্দুল কাদেরের সকল অপকর্ম দুদকের মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত করা হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।