ইস্টওয়েস্ট ইমিগ্রেশনের কানাডায় লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা : অর্থদণ্ড দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার

0
Vokta Logo

Vokta Logo

বিশেষ প্রতিনিধি: কানাডায় লোক পাঠানোর নামে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করছে ইস্টওয়েস্ট ইমিগ্রেশন লিমিটেড। মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অর্থ। নানা টালবাহানায় হয়রানি করছে গ্রাহকদের। আর এসব বিষয় প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে অর্থদণ্ড দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সেইসঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন আরেক প্রতিষ্ঠান এক্সক্লুসিভ সার্ভিসেস লিমিটেডকেও অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার অধিদফতরের উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, বিদেশে লোক পাঠানোর নামে ইস্টওয়েস্ট ইমিগ্রেশন লিমিটেড গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে এমন একটি লিখিত অভিযোগ করেন মো. নাসির উদ্দিন (মিলন) নামের এক ভোক্তা। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উভয়পক্ষকের উপস্থিতিতে শুনানি করা হয়। শুনানিতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিযোগকারীকে প্রভাবিত করা ও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে ভিসা প্রসেসিং সম্পন্ন না করার আনিত অভিযোগের সঠিকতা/সত্যতা প্রমাণিত হয়। তাই অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ইস্টওয়েস্ট ইমিগ্রেশন লিমিটেড এবং একই মালিকানাধীন এক্সক্লুসিভ সার্ভিসেস লিমিটেডকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের মো. নাসির উদ্দিন (মিলন) ইস্টওয়েস্ট ইমিগ্রেশনে ২০১৫ সালের ১২ মে নগদ ১০ হাজার টাকা (অফেরতযোগ্য) জমা দিয়ে কানাডার ভিসা প্রাপ্তির জন্য ফাইল ওপেন করতে আবেদন করেন।

পরবর্তীতে ওই বছরের ১৫ জুন ৩০ হাজার টাকা জমা দিয়ে ইস্টওয়েস্ট ইমিগ্রেশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। চুক্তিতে মোট ৭ লাখ টাকা দিতে হবে বলা হয়। চুক্তি অনুযায়ী ভিসা প্রসেস শেষ হবার তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হবার পরও তার ভিসা প্রসেস করা হয়নি। উল্টো নতুন করে টাকা জমা দিতে বলা হয়। আর ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য একাধিকবার সময় দেয় ও পরিবর্তন করে ইস্টওয়েস্ট ইমিগ্রেশন।

পরে ২০১৭ সালের ১০ জুলাই তাকে পাওনা টাকা পরিশোধ করে দেবার কথা বলে অফিসে ডাকা হয়। টাকা পরিশোধের কথা বলে অভিযোগকারী নাসির উদ্দিনের কাছে থাকা যাবতীয় ডকুমেন্ট নিয়ে নেয় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি তার কোনো টাকাই পরিশোধ করেনি। নানা টালবাহানা দেখাতে থাকে। মৌখিক অনেক তারিখ দেয় আবার সেই তারিখ আসার আগেই আবার সময় বাড়িয়ে দেয়। তাই ন্যায্য পাওনা ও অধিকার আদায় এবং ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যাবতীয় অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ দায়ের করেন নাসির উদ্দিন।

এ পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ইস্টওয়েস্ট ইমিগ্রেশন লিমিটেড ও অভিযোগকারীকে শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ পাঠায় অধিদফতর। অভিযোগকারী শুনানিতে উপস্থিত হন।

যদিও ইস্টওয়েস্ট ইমিগ্রেশন লিমিটেডের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি তার মালিকানাধীন আরেক প্রতিষ্ঠান এক্সক্লুসিভ সার্ভিসেস লিমিটেডসহ দুই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে লিগ্যাল অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন ও রাফিজা আফরোজ একটি লিখিত বক্তব্য দাখিল করেন।

লিখিত বক্তব্যে রাফিজা আফরোজ বলেন, অভিযোগকারী মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান দুটি ভোক্তা অধিদফতরে এ বিষয়ে তথ্য প্রমাণাদি উপাস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়।

এমতাবস্থায় অভিযোগকারীর লিখিত অভিযোগ, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪৪ এবং ৪৫ ধারা পর্যালোচনায়, এক্সক্লুসিভ সার্ভিসেস লিমিটেড ও ইস্টওয়েস্ট ইমিগ্রেশন লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী নাসির উদ্দিন মিলন কর্তৃক আনিত অভিযোগটির সঠিকতা/সত্যতা প্রমাণিত হয়।

অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান দুটিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪৪ ধারা মোতাবেক গত ২০ মার্চ দুই লাখ টাকা এবং ৪৫ ধারা মোতাবেক ৫০ হাজার টাকা অর্থাৎ মোট দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের জরিমানার অর্থ পরিশোধের নিয়ম রয়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করলে সমপরিমাণ অর্থের সম্পদ ক্রোক করার বিধান রয়েছে। আইনে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেয়ারও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *