ইয়াবা সেবনে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়: প্রফেসর ড. মো. ফখরুল ইসলাম

ইয়াবা একটি ‘ক্রেজি ড্রাগ’। এ মাদকদ্রব্যটি সেবন করলে মানুষের মতিভ্রম ঘটে ও চরম মাতলামী শুরু হয়। যতদূর জানা যায়, এর উৎপত্তি হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। তাই এর প্রথম নাম ‘নাৎজী স্পিড’ বা হিটলারের নাৎজী বাহিনীর মত গতি। হিটলার তাঁর সৈন্যদেরকে দীর্ঘ সময় যুদ্ধক্ষেত্রে সবল রাখার উপায় হিসেবে সে সময়কার নজরবন্দী বিজ্ঞানী ও রসায়নবিদদেরকে এই ওষুধ আবিষ্কার করতে বাধ্য করেন। কালক্রমে এটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
দেশে দেশে ইয়াবার নামডাক নানাভাবে করা হচ্ছে। থাইল্যান্ডে ইয়াবাকে ‘ম্যাডনেস ড্রাগ’ বা পাগলামী ওষুধ বলে। মিয়ানমারে এটাকে ‘ইয়ামা’ বা ‘হর্স ড্রাগ’ বলে। ভারতে এর নাম ‘ভুলভুলিয়া’, ফিলিপিনস্ ও ইন্দোনেশিয়ায় এর না ‘সাবু’। জাপানে ইয়াবাকে বলে ‘কাকুসেইজাই’ সংক্ষেপে ডাকে ‘কাকু’। চীনে ইয়াবাকে বলে ‘মাগো মাগে’। বাংলাদেশে ইয়াবাকে ‘বাবা’ বলা হয়। তাছাড়া বাংলাদেশে এলাকাভেদে এর নানা ছদ্মনাম রয়েছে। পাগলপারা এ ওষুধটির আসল-নকল রয়েছে। একশতভাগ আসলটি সেবন করলে মানুষের মধ্যে চরম মাতলামী শুরু হয়।
ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নিকট লাল, গোলাপী, সবুজ, ক্রিস্টাল নানা রঙের ইয়াবা বড়ি কিনতে পাওয়া যায়। এগুলোর দেশ ভেদে ভিন্ন নাম থাকলেও আমাদের দেশে মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করার সুবিধার্থে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়। এদের নানা ব্র্যান্ড আছে। তার মধ্যে- জনপ্রিয় চারটি ব্র্যান্ড ০০৭, ডব্লিউ ওয়াউ, চম্পা, নীলা। এই চারটি ব্র্যান্ড-ই ভারতের চব্বিশ পরগণায় উৎপন্ন হয়ে যশোর ও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান হয়ে আমাদের দেশে আসে। ভারতের মাদক ব্যবসায়ী যারা পূর্বে ফেনসিডিলের চোরাচালান করতো তারা এখন ইয়াবার ফ্যক্টরি দিয়েছেন। একজন সাংবাদিক তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলেন, সীমান্তের কিছু ওপারেই পাঁচটি কারখানায় ইয়াবা তৈরি হচ্ছে! পূর্বে মিয়ানমার, পশ্চিমে ভারত বাংলাদেশকে ইয়াবা দিয়ে আপ্যায়ন করে চলেছে। আমরা বাংলাদেশিরা বোকার মত সেগুলো কিনে খেয়ে বুঁদ হয়ে ইহকাল-পরকাল হারিয়ে চলেছি!
শুধু তাই নয়, ইয়াবা সেবনের প্রভাবে যেসব ভয়াবহ সমস্যা হয় তা হলো-প্যারানইয়া, সাইকোসিস ও ভায়োলেন্ট আচরণ করা। ইয়াবার ধোঁয়া মানুষের শ্বসনযন্ত্রকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। স্ট্রোক, হার্টফেইলিওর, ডিপ্রেশন ইত্যাদি হতে পারে। পারিবারিক ও সামাজিক ভাঙ্গন (তালাক, একঘরে করা, উক্ত পরিবারে বিয়ে না দেয়া ) সূচিত হয় এবং আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।