একটি লাশের কান্না

‘‘যারা সুইসাইড করে তাদের সবসময় ভীরু, কাপুরুষ বলে ভাইবা আসছি। যারা জীবন থেকে পালানোর সহজতম রাস্তা বাইছা নেয়। কখনো ভাবি নাই নিজেই এমন অবস্থায় এসে দাঁড়াবো। কিন্তু আমাদের সমাজ, আমাদের সিস্টেম, পারিপার্শ্বিক অবস্থা আজকে আমাকে এই জায়গায় দাড় করাইছে।
আমার মধ্যে এই অনুভূতি আজকে প্রবলভাবে কাজ করে যে আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না। আমি শুধুমাত্রই একটা বোঝা। যার থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। একটা সময় নিজেকে নিয়ে প্রচুর কনফিডেন্স ছিলাম। এখন সেই জায়গায় কাজ করে হীনমন্যতা।
আমার কারো প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। খালি কিছু মানুষকে নিয়ে আফসোস। যারা নিজেদের স্কলার ভাবে, মানবিকতার হাদিস দেখায় শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ হাসিলের সময়। তারা নিজেরাও জানে না তারা আসলে স্কলার না। আমার চেয়েও বড় বোঝা।
আফসোস তাদের প্রতি যারা বর্তমান নিয়ে ব্যস্ত.. ভবিষ্যৎ কে নূন্যতম বিচারেও রাখে না। আফসোস তাদের প্রতি… যারা একটা মাত্র সুযোগ দিতেও আগ্রহী নয়। আশা ছিলো বাবা-মা কে পুরা বাংলাদেশ দেখানোর, ছোট ভাইটাকে আমার অপ্রাপ্তিগুলো পূরণ করানোর। কিছুই হইলো না…. মাফ করে দিয়ো আব্বু-আম্মু। তোমাদের ছেলে যে নিজের কাছেই হেরে বশে আছে।
মানুষের আত্মসম্মানবোধটাই জখন না থাকে তখন সে নিজের কাছেই মরে যায়… তাই আর অন্যদের জন্য বেঁচে থেকে কি লাভ! ‘আমি, এস এম মজিবুর রহমান সায়মুন, সুস্থ মস্তিষ্কে, স্বেচ্ছায় এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। এর জন্য কেউ দায়ী নয়।’
বিদায় পৃথিবী, বিদায় সুশীলসমাজ, বিদায় সমাজব্যবস্থা….”
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি 2020 শনিবার রাজধানীর দক্ষিণ কমলাপুরের থেকে ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মজিবুর রহমান সাইমুনের, তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাইমুন ১৪-১৫ সেশনের ফিন্যান্স বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিকেলে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এরপর সেখান থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ সংবাদ পেয়ে ওই মেস থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে। ধারনা করা হচ্ছে, সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে আত্মহত্যার কারণ এখনো জানা না গেলেও, মৃত্যুর আগে ফেসবুকে হতাশার একটি সুইসাইড নোট লিখে যান তিনি। হুবহু সেই পোস্টিই তুলে ধরা হলো ফেসবুকে তা সর্বশেষ পোস্ট।