এক সময়কার বিএনপি নেতা উলিপুরের বজড়ার চেয়ারম্যান বাবুল আমিন এর বিক্রী করা ১০৬৫ কেজি চাল উদ্ধার
উলিপুরের বজড়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জনগনের বিক্ষোভ, পুলিশের অভিযানে ১০৬৫ কেজি চাউল আটক।
জানা গেছে, রোববার(২৪ মে) সন্ধায় উপজেলার বজরা ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় বিপুল নামের এক গ্রাম পুলিশের বাড়ি থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১,০৬৫কেজি চাউল উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই বাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে এর প্রতিবাদে মিছিল সহ ইউনিয়ন পরিষদ অভিমুখে রওনা হলে চেয়ারম্যান ইউপি পরিষদ থেকে বের হন। বিক্ষুব্ধ জনগন ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং পর্দার আরালের মুল হোতাদের খুজে বের করে শাস্তির দাবী জানান। এসময় শত শত জনগনের উপস্থিতিতে অনেকেই এ ঘটনার সাথে ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল আমিনের জড়িত থাকার কথা বলেন। তাদের একজন লালমিয়া চাল আটকের ঘটনায় তাদের উপর হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতির অভিযোগ তুলেন।
এলাকাবাসীর দাবী এক সময়কার বিএনপি নেতা বাবুল আমিন আওয়ামীলীগের টিকিটে নৌকা মার্কা নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার,স্থানীয়দের হুমকি ভয়ভীতি প্রদর্শন, দূর্নীতি ও অনিয়ম করার অভিযোগ তুলে বলেন, তার ক্ষমতা আছে তাই তার বিরুদ্ধে কিছুই হবে না উল্টো জনগনকে এর চরম মুল্য দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে রিলিফ বিতরণের দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার জানান, করোনা দূর্যোগের সময়ে সরকার ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতি ঠেকাতে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে তিনজন করে কর্মকর্তার সমন্বয়ে বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের মাল উত্তোলন এবং মাল বিতরণের বিষয়টি ট্যাগ অফিসারদের আগেই অবহিত করার কথা। কিন্তু বজরা ইউপি চেয়ারম্যান রিলিফ বিতরণে নিয়োজিত তদারকি কর্মকর্তা ও ট্যাগ অফিসারদের না জানিয়ে রোববার ভোর থেকেই মাল বিতরণ শুরু করে ১০ টার দিকে অবহিত করেন বলে জানা যায়।
ঐ কর্মকর্তা স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ নিশ্চিত হয়ে আমলে নেন। উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে অবহিত করলে তিনি আবার নিশ্চিত হতে বলেন। ট্যাগ অফিসার পুনরায় নিশ্চিত হয়ে জানালে তারপর তিনি পুলিশ কে অভিযান পরিচালনার জন্য বলেন। বিপুল চৌকিদারের বাড়িতে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে ১০৬৫ কেজি খয়রাতি চাল উদ্ধার করে। এসময় বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে বজড়া ইউপি পরিষদের সামনে মুকুল ও বকুল নামে দুই ব্যক্তির বাড়িতে খয়রাতি চাল মজুদ আছে এমন তথ্য দিলেও উপজেলা প্রশাসন থেকে আর কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসীর মনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়ে রবিবার স্বন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ জনগন প্রতিবাদ মিছিল করেন। এ সময় এক সাংবাদিক ঘটনার স্থান থেকে ফোন দিলে তা রিসিভ হয় নি বলে জানা যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার একমাত্র নৌকার টিকিটে পাশ করা প্রভাবশালী চেয়ারম্যান দু এক জায়গায় ফোন করার পর ঘটনাটি নিয়ে উপজেলা প্রশাসন আর আগায়নি বলে ধারনা করা হয় । ঘটনায় সময় উপস্থিত জনতা ও ট্যাগ অফিসার সহ পুলিশ প্রশাসন নতুন অভিযান নিয়ে দোলাচলে পরে বলে জানা যায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল কাদের নিয়মানুযায়ী বজড়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসার কথা অথচ অজ্ঞাত কারনে আসেন নি। তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
এ ঘটনায় বজড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আমিনের বক্তব্য চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ চালগুলো জি আর বা পরিষদের নয়। বিপুল চৌকিদার চাকুরী করার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার চাল কেনা বেচা করে সেগুলো হতে পারে ।
তিনি আরও বলেন, বজরার ১০ জন চৌকিদারের ভিজিডি সে কিনে থাকতে পারে। এ ঘটনার সাথে তিনি জড়িত নন। প্রতিবেদক জিআর বিতরনের তালিকা ও মাস্টার রোল দেখতে চাইলে, তিনি তা না দেখিয়ে বলেন করোনা ভাইরাসের কারনে বেশকিছু সুবিধাভুগীর টিপসই নেয়া ও বিতরন বিলম্ব হওয়ায় ঈদের পরেরদিন বাকিদের মধ্যে বিতরন করবেন।
বিকাল ৫ টা পর্যন্ত সুষ্ঠ ভাবে চাল বিতরনের কথাও জানান তিনি। এ সময় উপস্থিত গ্রাম পুলিশদের ৬/৭ জন বলেন, তারা তাদের ভি জি ডি কার্ড চাল বিপুলের কাছে বিক্রী করেছেন। এসময় তাদের কথাগুলো বলতে যথেষ্ট অপ্রস্তুত মনে হয়েছে এমন দাবী এ প্রতিবেদকের।
এদিকে গোপন সূত্রে জানা গেছে, চিলমারীর জনৈক এক ডিলারের কাছ থেকে রশীদ সংগ্রহ করে চালের বৈধতা দেখাতে তা রশীদে তুলতে পরিমান ও অন্যান্য হিসাব নিকাশ চলছে।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান,খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে চালগুলো উদ্ধার ও জব্দ তালিকা তৈরি করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আঃ কাদের এক প্রতিবেদক কে বলেন, ঘটনাস্থলে অফিসার পাঠানো হয়েছে তারা আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যেখানে চাল থাকবে সেখানেই অভিযান চালাবে অফিসাররা।
জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম এর সাথে আর এক প্রতিবেদক পাচার করা চাল উদ্ধারে আলোচিত দুটি বাড়িতে অভিযান চালানো প্রসঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন এ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে।
About Post Author
