ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ব্যাপক জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ব্যাপক জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের বিশ্ব স্বীকৃতির পর এবার এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দল। এ লক্ষ্যে কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন নেতারা। ৭ই মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাগম করতে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এতে রাজধানীর পরিবহন শ্রমিকদেরও অংশ নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে। এতে এ দিন রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট দেখা দিতে পারে বলে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। তবে মালিক সংগঠনগুলো বলছে, শ্রমিকরা সমাবেশে গেলেও পরিবহন চলাচল করবে।
৭ই মার্চের জনসভাকে ঘিরে ব্যাপক লোক সমাগমের জন্য জোর প্রস্তুতি নিয়েছে দলটির নীতিনির্ধারকরা। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকেও জোর প্রস্তুতি চলছে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান গতকাল মানবজমিনকে বলেন, আমরা রেকর্ডসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নিয়েছি। শুধু ঢাকা মহানগর উত্তর থেকেই জনসভায় যোগ দেবেন অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ। এটাই আমাদের টার্গেট। এজন্য প্রায় ১৫শ’ গাড়ি প্রস্তুত রাখা হবে। বিশেষ করে বিমানবন্দর, উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা, মিরপুর এলাকা থেকে লোকজনকে জনসভায় আনতে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এ ধরনের জনসভাকে দলের জন্য টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করছি আমরা। একই টার্গেটের কথা জানান দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা। এর আগে জনসভা সফল করতে ১৮ই ফেব্রুয়ারি যৌথসভা করে আওয়ামী লীগ। সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ৭ই মার্চ হবে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা। আগামী ইলেকশনের আগে ঢাকা সিটিতে আমরা এত বড় জনসভা আর করতে পারবো না। তাই এ জনসভাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সভায় ইউনিয়ন-ওয়ার্ডের নেতারা আসবেন, তারা নেত্রীর বক্তব্য থেকে আগামী এক বছরের একটা গাইডলাইন পেয়ে যাবেন। সেটা মনে রেখেই সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে নিয়ে আসতে হবে। ওই বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুই অংশের শীর্ষ নেতা, সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, রাজধানীর সব দলীয় সংসদ সদস্য ও পাশের জেলাগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। এরপর থেকেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি শুরু করা হয়। এজন্য আলাদা আলাদা প্রস্তুতি সভা করেছে কেন্দ্রীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগ। রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানায় থানায় প্রস্তুতি সভা করে জনসভায় ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হচ্ছে মহানগর নেতৃত্বের পক্ষ থেকে। রাজধানীর পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা, নরসিংদীসহ রাজধানীর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেবে। এই জন্য এইসব জেলার দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে আলাদা করে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর এই প্রথম এ দিনটি আসছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সঙ্গে দিনটি পালন করবে। এদিন বিশাল জনসভা হবে। নেতাকর্মীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে এ জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেবে। এ লক্ষ্যে আমরা দলের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। তাছাড়া যেহেতু জাতীয় নির্বাচন আগে এই জনসভা হচ্ছে স্বাভাবিকভাবে আমাদের দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জনসভায় ব্যাপক শোডাউন করবে। দলের নেতারা জানিয়েছেন, জনসভাকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডি টু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের আদলে আলোকসজ্জা করা হচ্ছে। ধানমন্ডি-৩/এ তে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনের সড়কটি আলোকসজ্জা, তোরণ ও ফেস্টুনে সুসজ্জিত থাকবে। একই আদলে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরও আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। গত বছরের অক্টোবরে ইউনেস্কো ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণটিকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে স্বীকৃতি উদযাপন করে। নাগরিক কমিটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই আয়োজন করে নাগরিক সমাবেশের। এবার আসন্ন এদিনটিতে জনসভা স্বীকৃতি উদযাপনের প্ল্যাটফরম বলেই মনে করা হচ্ছে। এদিকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সমাবেশে অন্তত ১৫ থেকে ১৬ হাজার পরিবহন শ্রমিক অংশ নেবেন। তারা সমাবেশে গেলে নগরীতে পরিবহন সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, জনসভায় মালিক ও শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ১৫ হতে ১৬ হাজার লোক যাবে বলে রোববারের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে মালিক ও শ্রমিকরা সভায় গেলেও যান চলাচলে কোনো বিঘ্ন হবে না বলে দাবি করেন তিনি।