কমরেড প্রসাদ রায়ের ২২ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

0
ROY

ROY


দিনবদল ডেক্স:
৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ কমরেড প্রসাদ রায়ের ২২ তম মৃত্যুবার্ষিকী। খাপড়া ওয়ার্ডের লড়াকু যোদ্ধা, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, শ্রমিক-মেহনতি মানুষের বন্ধু, আজীবন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির এই নেতা জন্মেছিলেন ৫ আগস্ট ১৯২৮ সালে পাবনার প্রতাপ ভবনে। সে সময়ে পাবনা শহরে এই পরিবারটির স্বপরিচিতি ছিল তার অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক আবহের কারণে। পরবর্তীতে অবশ্য প্রতাপ ভবনকে সর্বস্তরের মানুষ চিনতো তৎকালীন মডারেট ও লিবারেল আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হিসাবে। প্রসাদ রায় সহ পাঁচ ভাই-ই যুক্ত ছিলেন সক্রিয় কমিউনিস্ট রাজনীতির সাথে। পরিবারে অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ ও সাম্যবাদী চিন্তার পথিকৃত ছিলেন তাঁর মা শবাসনা দেবী।

প্রসাদ রায় দীর্ঘ কারাজীবনে নিজেকে আরোও শানিত করে মুক্তি পাওয়া মাত্র নিজেকে শামিল রেখেছেন মেহনতি মানুষের লড়াইয়ের পুরোভাগে। সর্বমোট ১৯ বছর ৬ মাস কেটেছে জেলে। ১৯৪৮ সালের নিকষ কালো অন্ধকার যুগে জীবন বাজি রেখে বরফ ভাঙ্গার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বেরিয়েছিলেন ঘর থেকে। আমৃত্যু দমন পীড়ন আর আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে নিজেকে অবিচল রেখেছিলেন কমিউনিস্ট আদর্শে। প্রথম কারাবরণ ১৯৪৯ সালের আগস্ট মাসে, রাজবন্দীদের মুক্তির দাবীতে পোস্টার লাগাতে গিয়ে গ্রেফতার হন। ১৯৫৩ পর্যন্ত টানা জেলে ছিলেন। ১৯৫৪ সালে দুবার গ্রেফতার হন। ’৫৫ সালের শুরুর দিকে নভেম্বরে পুলিশ স্ট্রাইকের মামলায় পুনর্বার কারাবরণ। ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তি লাভের পর আয়ুব সরকারের সামরিক শাসন জারির পর আবারও কারাবাস, ১৯৬২ সালে মুক্তিলাভের পর পাক-ভারত যুদ্ধের শুরুতে জেলে গিয়ে ১৯৬৮ সালে মুক্তি পান। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যূত্থানে উত্তাল হয়ে ওঠে পূর্ববাংলা। তার ঢেউ আছড়ে পড়ে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার পাবনাতে। মিছিল থেকে গ্রেফতার হন প্রসাদ রায়। এরপর মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কারারুদ্ধ হন ১৯৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর। ১৯৭৮ এ কারামুক্ত হয়ে ১৯৮৪ সালে আবারও গ্রেফতার হন স্বৈরশাসকের শাসনামলে। মুক্ত হন সে বছরই।

’৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ছিলেন। করিমপুর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে স্থির ও অবিচলভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। ’না’ বলতে পারতেন খুব স্পষ্টভাবে। যখনই অন্যায় তখনই প্রতিরোধ। একবার পাবনা জেলা প্রশাসনের ডাকা এক সভায় স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি দেখে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেছিলেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে কোনভাবেই একসাথে আলোচনা হতে পারেনা, কোন ইস্যুতেই না। একবার প্রশাসন প্রস্তাব করেছিল সভাটি বাতিল করার। কিন্তু তার ধমকের মুখে শেষপর্যন্ত বাধ্য হয়েছিল জামাতে ইসলামীর প্রতিনিধিদের বের করে দিয়ে সভা চালাতে। নিজস্ব স্বভাবসুলভ দৃঢ়তার কারণেই পরিণত হয়েছিলেন পাবনার রাজনৈতিক অভিভাবকে। সকল রাজনৈতিক সংকটে তাঁর বাড়িই ছিল সভাস্থল। শেষ সিদ্ধান্তের জন্যে তাঁর দিকেই দৃষ্টি সবার। আর সরল সমাধান আসতো তার কাছ থেকেই, যা মানতে কারোই কোন দ্বিধা কাজ করতোনা। জীবন নিয়ে তার সাহসের অন্ত ছিল না। আচরণে ছিল একটা তোয়াক্কা না করা ভাব। এজন্যেই শাসনযন্ত্র ভয় পেতো তাঁকে। বিষয়টা ঠিক উল্টো ছিল সাধারণ মানুষের বেলায়। মানুষ তাকে বন্ধু ভাবতে পারতো অনায়াসে, ভালোবাসতো প্রাণ দিয়ে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *