কিশোরগঞ্জের দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ১৯১তম ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে সকাল ১০টায় এ ঈদগাহে ১৯১তম ঈদ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
শনিবার সকাল থেকেই এ ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য কিশোরগঞ্জ ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া ময়দানে।
ঈদগাহ ময়দানে মুসল্লিদের প্রবেশের জন্য মোট ২১টি ফটকের মধ্যে ছয়টি প্রবেশপথ উন্মুক্ত রাখা হয়। এসব প্রবেশপথে স্থাপিত আর্চওয়ে দিয়ে মুসল্লিরা শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ঢোকেন।
এছাড়া দুই বছর আগে ঈদের দিন জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে এবার ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন।
জনশ্রুতি আছে, প্রায় সাত একর আয়তনের এই মাঠে একবার ২৬৫টি কাতরের প্রতিটিতে ৫০০ জন করে মোট সোয়া লাখেরও বেশি মুসল্লি একসঙ্গে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ ঈদগাহ ময়দানটিকে ‘সোয়লাখিয়া’ নামে ডাকা শুরু হয়। কালক্রমে উচ্চারণ বিবর্তনের কারণে শোলাকিয়া নামে পরিচিত হয়।
পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, ২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার ঘটনাকে মাথায় রেখে মাঠ ও মাঠের আশপাশের এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়। আর এ নিরাপত্তা ব্যবস্থার গভীর পর্যবেক্ষণে ছিল ড্রোন ক্যামেরা। মুসল্লিরা স্বস্তি প্রকাশ করেন এ নিরাপত্তা ব্যবস্থায়।
শোলাকিয়ায় এবারের ১৯১তম ঈদুল ফিতরের জামাত উপলক্ষে মাঠের চারপাশের দেয়ালে পড়ে নতুন রংয়ের প্রলেপ। মাঠের ভেতরের খানাখন্দ বালি দিয়ে ভরাট করে ইতিমধ্যে লাইনকাটা সম্পন্ন করে। মুসল্লিদের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা বসানো, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, আলোকসজ্জা, ভূগর্ভস্থ মাইক্রোফোন সংযোগ করে। জামাত উপলক্ষে ঢাকা ও ময়মনসিংহ থেকে দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করে।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ যুগান্তরকে জানান, ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার ঘটনাকে মাথায় রেখে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান অঞ্চলকে ১৬টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। ২৪টি চেকপোস্ট ও ১২টি পিকেট ব্যবস্থা ছিল। মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গভীর পর্যবেক্ষণে সাদা পোশাকের পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি ছিল ড্রোন ক্যামেরা।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, মুসল্লিদের নিরাপত্তাসহ সব দিক বিবেচনায় রেখে ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানকে ১৯১তম ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়। দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ঈদের দিন ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করে।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. কামরুজ্জামান জানান, ময়মনসিংহ থেকে একটি স্পেশাল ট্রেন ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায় এবং অপর একটি স্পেশাল ট্রেন ভৈরব থেকে ভোর ৬টায় ছেড়ে সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। জামাত শেষে দুপুর ১২টায় ওই ঈদ স্পেশাল ট্রেন দুটি নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে কিশোরগঞ্জ ছেড়ে যায়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই সকাল পৌনে ৯টার দিকে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে প্রবেশপথের আজিম উদ্দিন হাইস্কুল-সবুজবাগ সংযোগ সড়ক পয়েন্টে বোমা হামলা ও গোলাগুলির ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, ঝর্ণা রানী ভৌমিক নামে গৃহবধূ ও এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত এবং ১০ পুলিশ সদস্য, এক জঙ্গি ও তিন মুসল্লি গুরুতর আহত হয়।