কেয়া চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি ক্ষুব্ধ সমর্থকরা

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মিরপুরে সরকারি কর্মসূচিতে সন্ত্রাসী হামলায় আহত সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। গতকাল শনিবার সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) তাঁর জ্ঞান ফেরে।
তবে কথা বলতে পারছেন না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তিনি আশঙ্কামুক্ত। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে তাঁর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে কেয়া চৌধুরীর ওপর হামলা ও তাঁকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। হামলার ঘটনায় গতকাল বাহুবল উপজেলায় প্রতিবাদসভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বইছে।
এমপি কেয়া চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী ইমন চৌধুরী জানান, গতকাল সকালে কেয়া চৌধুরীকে ঢাকায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হলেও পরে তা বাদ দেওয়া হয়। দুপুরে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সব্যসাচী রায়ের নেতৃত্বে একটি মেডিক্যাল বোর্ড বসে। বোর্ড এ হাসপাতালেই চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়।
তাঁর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
ইমন চৌধুরী আরো জানান, ডাক্তারের পরামর্শে এমপি কেয়া চৌধুরীকে স্যুপসহ নরম খাবার দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে তাঁর স্বামী আমজাদ হোসেন খান, ভাই মামুন চৌধুরী ও সুজন চৌধুরী রয়েছেন। একমাত্র মেয়ে শুকরিয়া ঢাকায় এবং বৃদ্ধা মা রোকেয়া চৌধুরী হবিগঞ্জে রয়েছেন। ইমন চৌধুরী বলেন, ‘এ ঘটনায় কোনো মামলা করা হয়নি। ম্যাডাম সুস্থ হলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সব্যসাচী রায় জানান, এমপি কেয়া চৌধুরীর যথাযথ চিকিৎসা চলছে। প্রয়োজন হলে তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হবে।
এমপি কেয়া চৌধুরীকে দেখতে হাসপাতালে নেতাকর্মীরা ভিড় জমাচ্ছে। গত শুক্রবার রাতেই সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সফিউল আলম নাদেলসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা তাঁকে দেখতে যায়। গতকাল তাঁকে দেখতে যান সিলেটের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।
এদিকে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে মিরপুর বাজারের আলিফ সোবহান চৌধুরী কলেজের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। উপজেলা সদরের স্থানীয় জনতা প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধনে হামলাকারী তারা মিয়াকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য জাহিদুল হক জিতু, আস্কর আলী, কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বজলুর রহমান, প্রভাষক মাসুক মিয়া, লামাতাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুুরী টেনু প্রমুখ। মানববন্ধনে কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয় লোকজন অংশ নেয়।
এমপি কেয়া চৌধুরীর ভাই ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফয়জুল বশীর চৌধুরী সুজন বলেন, ‘কেয়া চৌধুরীর বাড়ি বাহুবল উপজেলায়। সে যদি নিজের বাড়িতে নিরাপদ না থাকে, তবে বাংলাদেশের আর কোথায় সে নিরাপদ থাকবে। যারা মনে করেছেন নোংরামি করে এমপি কেয়া চৌধুরীকে ঘরে পাঠিয়ে দেবেন, তাঁরা বোকার রাজ্যে বসবাস করছেন। ’ তিনি কেয়া চৌধুরীর প্রতি সহমর্মিতা জানানোর জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
হামলার সময় এমপি কেয়া চৌধুরীর সঙ্গে হামলায় আহত উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেলা চৌধুরী সুস্থ হয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে অজ্ঞান অবস্থায় তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রাসেলুর রহমান জানান, গতকাল উপজেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। এমপি কেয়া চৌধুরীর পক্ষে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা হয়নি। কাউকে আটকও করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার বিকেলে হবিগঞ্জের মিরপুরে বেদেপল্লীতে সংসদ সদস্যের বেদে সম্প্রদায়ের মধ্যে চেক বিতরণের অনুষ্ঠান ছিল। সরকারি এ অনুষ্ঠানে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করার প্রতিবাদ করলে এমপির ওপর হামলা করে বসেন উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তারা মিয়া। সরকারি অনুষ্ঠানে তারা মিয়া ও তাঁর লোকজনের উপস্থিতি পূর্বপরিকল্পিত বলেই মনে করছে কেয়া চৌধুরীর সমর্থকরা