চট্টগ্রামের তিন জেলায় পাহাড় ধসে সেনাবাহিনী সহ মৃতের সংখ্যা প্রায় ১০০

দুইদিনের ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম বিভাগের তিন জেলায় পাহাড় ধসে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত চার সেনা সদস্যসহ ১১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী রাঙামাটিতে ৭৬ জন, চট্টগ্রামে ২৭ এবং বান্দরবানে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত পাহাড়ধসে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পরে সন্ধ্যার পরে উদ্ধার করা হয় আরও কয়েকজনকে। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১১০ জনে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া রাঙামাটিতে আরও আহত আছেন ৫০ জন। যাদের মধ্যে অনেকে গুরুতর। রাঙামাটি সদর, কাউখালী, কাপ্তাই ও বিলাইছড়ি উপজেলায় পাহাড়ধসে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী ৭৬ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।
টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যসহ ৭৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটি শহরে ২৪ জন, শহরের পাশে মানিকছড়ি এলাকায় চার সেনা সদস্য, কাউখালী উপজেলায় ২৮ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৫ জন ও বিলাইছড়ি উপজেলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কিছু মরদেহ উদ্ধার করে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মরদেহের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। রাত ৯টা পর্যন্ত মরদেহের সংখ্যা বেড়ে ১১০ জনে দাঁড়িয়েছে।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার জানান, পাহাড় ধসে রাঙামাটি শহরে ৭৬ জন মারা গেছে। মানিকছড়ি এলাকায় মারা গেছেন চার সেনা সদস্য। এর মধ্যে সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন তানভীরের মরদেহ রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে এসেছে। এ ছাড়া আরও তিন সেনাসদস্য এখানে ভর্তি হয়েছেন।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাঈদ তরিকুল হাসান মানিকছড়ির ঘটনাস্থলে থাকা উদ্ধার কর্মীদের বরাত দিয়ে জানান, প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। আজ সকালে সেই মাটি সরাতে কাজ করছিলেন সেনাসদস্যরা। তখন ওপর থেকে পাহাড় ধসে সেনাসদস্যদের ওপর পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহত সেনা সদস্যরা হলেন মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কর্পোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক ও বগুড়ার আদমদিঘীর সৈনিক মো. শাহিন আলম।
সেনা সদস্য হতাহত হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভোরে রাঙামাটির মানিকছড়িতে একটি পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ পড়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল উক্ত সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। উদ্ধার কার্যক্রম চলার সময় আনুমানিক বেলা ১১টায় উদ্ধার কার্যস্থল সংলগ্ন পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারীদলের ওপর ধসে পড়লে তারা মূল সড়ক থেকে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যান। পরে একই ক্যাম্প থেকে আরও একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুইজন সেনা কর্মকর্তাসহ চারজন সেনাসদস্যকে নিহত এবং ১০ জন সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।
পাহাড় ধসে কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ২৮ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছেন কাউখালীর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কমল বরণ সাহা। তবে নিহতদের নাম পরিচয় জানাতে পারেননি তারা।
এদিকে কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন। এছাড়া বিলাইছড়ি ও জুড়াছড়ি উপজেলায় পাহাড় ধসে পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এখনও উদ্ধার কাজ চলছে। তবে রাতে কাজ ধীর গতিতে এগোচ্ছে। নিখোঁজ আছেন আরও অনেকে।
টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী উপজেলায় পাহাড় ধসে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ার জঙ্গল বগাবিল এলাকায় ২০ জন, চন্দনাইশের ধোপাছড়ি এলাকায় ছয়জন ও বাঁশখালীতে একজন নিহত হয়েছে। রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে মারা গেছে ছয়জন।
এ ছাড়া আজ ভোরে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় ঝড়ের সময় দেয়াল চাপা পড়ে হানিফ নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এসব তথ্য জানিয়েছে।
রাঙ্গুনিয়ার ঘটনাস্থল দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায়, পাহাড়ি ঢলে শঙ্খ ও সাঙ্গু নদীর পানি বাড়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
এদিকে, পাহাড়ি ঢলের কারণে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় রাঙামাটি ও বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে বান্দরবানে শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১১ জন।
মঙ্গলবার ভোরে বান্দরবানের লেমুঝিরি ভিতরপাড়া থেকে একই পরিবারের তিন শিশু, আগাপাড়ায় মা-মেয়ের এবং কালাঘাটায় এক কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী স্টেশন অফিসার স্বপন কুমার ঘোষ।
নিহতরা হলেন লেমুঝিরির বাসিন্দা সমুন বড়ুয়ার তিন সন্তান শুভ বড়ুয়া (৮), মিতু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৪), আগাপাড়ার কামরুন নাহার (২৭) ও তাঁর মেয়ে সুখিয়া আক্তার (৮) এবং কালাঘাটার কলেজছাত্র রেবা ত্রিপুরা (১৮)।
এদিকে, অব্যাহত বর্ষণে ভোররাতে বাজালিয়ায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।