চমক আসতে পারে সিলেট-১ আসনে

গুরুত্ব বিবেচনায় মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (সদর) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে উভয় দলে ‘চমক’ দেওয়ার প্রস্তুতিও চলছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত অন্তত তিনজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নাম অনেক দিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে তাকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বিকল্প হিসেবে আওয়ামী লীগ পরিবারের ভাবনায় ছিল। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে তালিকায় সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হুসাইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিকের নামও নতুন করে আলোচনায় এসেছে। সিলেট আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বিগত তিনটি নির্বাচনে মর্যাদাপূর্ণ এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করে দু’বার সংসদ সদস্য হয়েছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। একটি ‘যদি’ থাকলেও বয়সের জন্য আগামীতে তিনি আর নির্বাচনে আগ্রহী নন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীর বিকল্প প্রার্থীর সন্ধান চলছে; যাতে তার অনুজ ড. এ কে আবদুল মোমেনের নাম আলোচিত হচ্ছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের আরও দু’জন নির্বাচনে আগ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। এরপর সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সমশের মবিন চৌধুরী সিলেট-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে মাঠে নামলেও হঠাৎ তিনি পদত্যাগ করায় বিএনপিকেও বিকল্প প্রার্থীর কথা ভাবতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাশাপাশি সিলেট বিএনপির অন্তত চারজন নেতা নির্বাচনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে একজন অনেক দিন ধরে মাঠে তৎপর থাকলেও অন্যরা নিজেদের মতো মনোনয়ন লড়াইয়ে রয়েছেন।
সিলেট-১ আসনে বরাবর বড় দলগুলো থেকে হেভিওয়েট প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বলে ‘হঠাৎ চমক’ হিসেবে অন্য কেউ ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন দু’দলের নেতারাই। ১৯৯১ সালে বিএনপির খন্দকার আবদুল মালিক ছাড়া সিলেট-১ আসনে বিজয়ীরা পরবর্তী সময়ে নিজ দলের সরকারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সাবেক ও বর্তমান দুই অর্থমন্ত্রী ছাড়াও এ আসনে বিজয়ী হয়ে দেওয়ান ফরিদ গাজী মন্ত্রী এবং হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্পিকার ও মন্ত্রী দুই দায়িত্বই পালন করেছেন। এই আসনে বিজয়ী দল সরকার গঠন করার মিথের পাশাপাশি তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে বরাবর হেভিওয়েট প্রার্থীর খোঁজ করা হয়। পৈতৃক বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুরে হলেও এই হিসাবেই গত নির্বাচনের আগে ড. ফরাসউদ্দিনের নাম আলোচনায় আসে। ১৯৯৮ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে ২০০১ সালের ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করা ফরাসউদ্দিনের নাম সে সময় অর্থমন্ত্রী হিসেবেও আলোচনায় এসেছিল। এবার সিলেটের স্থানীয় হিসেবে নগরীর কাজীটুলার বাসিন্দা সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইনের নামও আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগের খবরের মধ্যে সিলেট মহানগর বিএনপির একজন নেতা তাদের দলের হয়ে ড. শাহদীন মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে বলে দাবি করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির ওই নেতা বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এমন সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে। জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল আরেক নেতা সমকালকে বলেন, সিলেট-১ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিকের নাম রয়েছে বলে শুনেছি। আবার সিলেট আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির অন্তত তিনজন নেতা ওয়ান ইলেভেনের সময় নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা ছহুল হোসাইনের নাম দলের প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় থাকার কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে রাজনীতিতে জড়িত ছহুল হোসাইনের এক নিকটাত্মীয় বলেন, আগামী নির্বাচনে উনাকে (ছহুল হোসাইন) প্রার্থী হিসেবে পেতে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে শুনেছি। এ ক্ষেত্রে বড় দলের নাম পারিবারিক পরিমণ্ডলের আলোচনায় এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তো উনি নেবেন। তবে এ ব্যাপারে ছহুল হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি এসবের কিছু জানি না।’
সর্বশেষ ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উত্তরে বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এসেছিল ড. শাহদীন মালিকের নাম। এবার সিলেট-১ আসনে একই দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আসা শাহদীন মালিকের পৈতৃক বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথের সরওয়ালা গ্রামে। ড. শাহদীন মালিক অবশ্য এমপি হওয়ার সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এত তো পানিতে পড়িনি যে, এমপি হতে হবে। ওকালতি, শিক্ষকতা ও সুশীল সমাজের হয়ে কাজ নিয়ে বেশ আছি। তবে সিলেট বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, রাজনীতিতে যেহেতু শেষ কথা বলে কিছু নেই, তাই সময়ই সব বলবে। অপেক্ষা করুন, হঠাৎ বড় ধরনের চমক দেখতে পাবেন।