চীনে ‘ভুতুড়ে’ পরিবেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

0
54545

54545

দিনবদল ডেক্স: বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে চীনের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে বিস্তার লাভ করা এই ভাইরাস ইতিমধ্যে দেশটির সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত ১৮টি দেশে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ।

তবে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যেই উহান থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে আজ শুক্রবার রাতেই দেশে ফিরছেন ৩৬১ বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে ১৯টি পরিবার ও ১৮ জন শিশু রয়েছে।

উহান থেকে এসব বাংলাদেশিরা ফিরলেও বিভিন্ন কারণে সেখানে অবস্থান করছেন আরও বেশ কিছু শিক্ষার্থী। শুধু উহান নয়, আরও বেশ কিছু প্রদেশে রয়েছে বাংলাদেশিদের বসবাস।

করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে কেমন আছেন তারা-এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই দৈনিক আমাদের সময় অনলাইন’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় চীনের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত চারজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে।

শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকেই সেখানে আতঙ্কের মধ্যে অবরুদ্ধ জীবন-যাপন করছেন বলে জানিয়েছেন। তবে আশার কথা হলো, এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি।

কথা বলেছিলাম জিয়াংজি প্রদেশে বাস করা রাফসানা মিলনের সঙ্গে। তিনি নেনচাং বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ অধ্যায়নরত একজন বাংলাদেশি ছাত্রী।

রাফসানা মিলন বলেন, ‘খুব ভয়ে আছি। এক ভাইরাসের কারণে পুরো ক্যাম্পাস ফাঁকা। এক ধরনের ভুতুড়ে পরিবেশের মধ্যে আছি। খুব বেশি দরকার ছাড়া রুমের বাইরে যাওয়া নিষেধ। গত সাত দিনে আমি দুবার বাইরে গেছি খাবারের জন্য।’

তবে অন্য প্রদেশ বা শহরের তুলনায় নেনচাং শহর কম ঝুকিপূর্ণ। তবুও শিক্ষার্থীরা খুব উদ্বিগ্ন। প্রয়োজনে কেউ বাইরে বের হলেও খুবই সতর্কতার সঙ্গে পদচারণা করছেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশি এই ছাত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতি মুহূর্তে আমাদের খোঁজ নিচ্ছেন। কেউ অসুস্থ কি না, জ্বর আছে কি না রুমে এসে চেক করছে। খাবার-মাস্ক কিনতে যেন বাইরে যেতে না হয়, এ জন্য রুমে সকল ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’

ঝিজিয়াং প্রদেশে থাকা সানী সান নামের আরেক বাংলাদেশি ছাত্রের সঙ্গে সেখানকার বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয়। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো তিনি নিজেও উদ্বিগ্ন করোনাভাইরাস নিয়ে।

বাংলাদেশি এই ছাত্র চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে অধ্যায়ন করছেন ঝিজিয়াং বিজনেস টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে। তিনি ঝিজিয়াং প্রদেশের নিংবো শহরে আছেন।

প্রয়োজন ছাড়া কেউ ডরমিটরির বাইরের বের হচ্ছেন না জানিয়ে সানী সান বলেন, ‘সর্বশেষ আট দিন আমি ডরমিটরির বাইরে যাইনি। নিংবোর কোনো বাংলাদেশি ডরমিটরি থেকে বের হচ্ছে না। একেবারেই কোনো কিছু না লাগলে। তাও আবার বড়োজোর সুপার মার্কেট পর্যন্ত। সুপার মার্কেটে আমাদের ডরমিটরি থেকে যেতে মাত্র দুই মিনিট সময় লাগে।’

সবাই আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে জানিয়ে এই ছাত্র বলেন, ‘এখানে সবাই আতঙ্কে আছে। শুধু আমরা না চাইনিজরাও। প্রত্যেকে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।’

প্রত্যেকদিন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকরা এসে তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে যাচ্ছেন, শরীরের তামপাত্রা মাপছেন বলেও জানান বাংলাদেশি এই ছাত্র।

উহানে থাকা হুয়াঝং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি একজন পিএইচডি গবেষক মো. সামিউল ইসলাম বলছিলেন, শীতকালীন ছুটি থাকায় স্ত্রীকে নিয়ে সাংহাই শহরে ঘুরতে যান। কিন্তু উহানে ভাইরাসের বিস্তার ঘটায় সেখানে ফেরত আসতে পারেননি তিনি। কারণ, উহানের সঙ্গে অন্যান্য শহরের সকল ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।

বাইরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে জানিয়ে সামিউল বলেন, ‘চায়নার সব প্রদেশেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে। এ জন্য বাইরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।’

সতর্কতার কারণে উহানে থাকা শিক্ষার্থীরা কেউ বাইরে বের হয়নি। সেখানে ভাইরাসের বিস্তার বেশি হওয়ায় সবাই সাবধানতার সঙ্গেই আছেন বলে জানান পিএইচডি গবেষক সামিউল ইসলাম।

চীনের জিওসায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উসাই মারমা। তিনি উহান প্রদেশেই থাকেন। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে তার অবরুদ্ধ জীবনের কথা জানিয়েছেন তিনি।

ফেসবুকে উসাই মারামা লিখেছেন, প্রায় ১০ দিনের মতো রুমের মধ্যে অবরুদ্ধ ছিলাম।চায়না সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেকে নিরাপদে রাখার তাগিদেই এই সিদ্ধান্ত। আজ (বৃহস্পতিবার) সেই চিরচেনা শহরের বের হয়েছিলাম হালকা কিছু বাজার করার জন্য।’

তবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এই অবরুদ্ধ জীবন-যাপনের মধ্যে খাবারের কোনো সমস্যা হয়নি। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। স্থানীয় বাজারগুলো কাঁচা শাক-সবজির দাম একটু বেশি। কারণ, চীনা নববর্ষ এবং ভাইরাসের জন্য সরবরাহ একটু কম বলে জানান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।

চীনে করোনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আজ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই ভাইরাসে ২১৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৯ হাজার ৬৯২ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স’র প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে থাইল্যান্ড, জাপান, হংকং, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সসহ কমপক্ষে ১৮টি দেশে ৯৮ জনের মধ্যে এই সংক্রমণের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *