জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন আমলে

0
180207muhit1-kalerkantho-pic

180207muhit1-kalerkantho-pic

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছিল স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন আমলে। দেশের প্রথম বাজেট দেয়া হয় ১৯৭২-৭৩ সালের অর্থবছরে। এরপর ১৯৭৪ সালে দেশের মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.৭ শতাংশ মতান্তরে ৯.৬ শতাংশ। এরপর আর কোন বছরই জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়নি। জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এসব কথা উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

১৯৭২-৭৩ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দেশে জাতীয় বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় ৫০০ গুণ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ৭৮৬ কোটি টাকার প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন। আর এর ৪৬ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো চলতি বছর শেষে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী তার বক্ত্যব্যে বলেছেন, পগু ও ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে তিনি (বঙ্গবন্ধু) যুগোপযোগী ও বাস্তবানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শূন্যপ্রায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ হাতে নিয়ে তিনি খাদ্য ও বস্ত্রের সংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গণমুখীকরণ ও বিস্তৃতিকরণ, দরিদ্রবান্ধব আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডের সূচনা করেন।
কূটনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার এমন কোন অঙ্গ নেই যেখানে তিনি তার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার ছাপ রাখেননি। জাতি এর ফল লাভও শুরু করেছিল।

তিনি বলেন, অনেকের হয়তো মনে আছে, ১৯৭৪ সালে আমাদের মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.৭ শতাংশ মতান্তরে ৯.৬ শতাংশ। আজ বলতে দ্বিধা নেই, প্রবৃদ্ধির এ ধারা যদি অব্যাহত থাকতো তাহলে আমরা ১৯৯৬-৯৭ সালেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারতাম। আর এখন আমাদের অবস্থান থাকতো অনেকটা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে। দেশি-বিদেশি হাজারো ষড়যন্ত্রের মুখেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যখন অপ্রতিরোধ্য তখন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর সূচিত গণমুখী অর্থনৈতিক অগ্রগতির অপ্রতিরোধ্য ধারা অকস্মাৎ রুদ্ধ হয়ে যায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.৬৭ শতাংশ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারে থাকাকালে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭.০৬ শতাংশ। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে এটা কমে দাঁড়ায় ৬.০১ শতাংশ, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে আরও কমে ৫.০৫ শতাংশ, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৫.৫৭ শতাংশ, ২০১০-১১ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ৬.৪৬ শতাংশ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৬.৫২ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে কমে ৬.০১ শতাংশ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬.০৬ শতাংশে দাঁড়ায়। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার দাঁড়ায় প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

মুহিত বলেন, দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোয়ালিশন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। বাংলাদেশে সূচিত হয় গৌরবময় সাফল্যের আর এক নতুন অধ্যায়। পাঁচ বছরে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায়। আর্থিক ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় ফিরে আসে শৃঙ্খলা। প্রতিষ্ঠিত হয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য। স্বয়ম্ভরতা আসে খাদ্য উৎপাদনে। পূর্ব এশিয়ার আর্থিক সঙ্কটের অভিঘাত সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি থাকে সংহত ও সুরক্ষিত। দুই দুইটি প্রলয়ংকরী বন্যার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা বিপন্ন হলেও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। এ সময় প্রবৃদ্ধির গড় হার বৃদ্ধি পায়। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি সুদৃঢ়করণের মাধ্যমে এর সুফল পৌঁছে দেয়া হয় সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে।

মুহিত আরও বলেন, দেশের অগ্রযাত্রা আবারও হোঁচট খায় ২০০১ সালে। এ সময় বিএনপি জোট সরকারের আমলে অর্থনীতির অগ্রযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। দেশের মেরুদন্ড কৃষক প্রাণ হারায় সারের দাবিতে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। বাধাগ্রস্ত হয় দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ। বেড়ে যায় দারিদ্র্য ও বেকারত্ব। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমশই নিচে নামতে থাকে। এ ধরনের নিদারুণ সংকটের মুখে আমরা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণ করি। নানাবিধ অভ্যন্তরীণ ও বহিঃ অভিঘাতে দেশের অর্থনীতি এ সময় ছিল মহাসংকটে। একদিকে ছিল উপর্যুপরি বন্যা ও সাইক্লোনের তান্ডব, অন্যদিকে বির্পযস্ত হয়ে পড়েছিল বিদ্যুৎ ও কৃষি উপকরণ সরবরাহ ব্যবস্থা। ফলে, দেশের শিল্প ও কৃষিখাত ছিল অনেকটা নিস্তেজ। থেমে গিয়েছিল গ্রামীণ অর্থনীতির কর্মচাঞ্চল্য।

অন্যদিকে, ২০০৮ সাল হতে শুরু হয় বিশ্ব মন্দা। এ সময়ের আর্থিক সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ও কর্মসংস্থান কমে যায়। রফতানি ও প্রবাস আয় চ্যানেলে এর ঢেউ আছড়ে পড়ে। বেকারত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের প্রকৃত উৎপাদন সম্ভাব্য উৎপাদনের চেয়ে বেশ নিচে নেমে যায়। আবার, অভ্যন্তরীণ সরবরাহ সংকটের সঙ্গে যোগ হয় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, সার ও খাদ্যশস্যের মূল্য বৃদ্ধি। এতে করে দেশের অভ্যন্তরে মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যায়। বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতির যুগপৎ বৃদ্ধি জনজীবনে দুর্দশা বয়ে আনে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *