ঢাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে ইয়াবা, আসছে স্বর্ণ

0
ye

ye

ঢাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে ইয়াবা। অবৈধভাবে আসছে স্বর্ণ। এতে জড়িত শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট। ইয়াবা-স্বর্ণের অবৈধ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্র। বিমানে কর্মরত কিছু অসাধু ব্যক্তির সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে এই সিন্ডিকেট। তাদের মাধ্যমেই নিরাপদে মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে ইয়াবা, আসছে স্বর্ণ।টেকনাফ, কক্সবাজার থেকে ঢাকা হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছে যাচ্ছে এই মরণনেশা।

সূত্রে জানা গেছে, বিমানে কর্মরত অন্তত ৩০ জন ক্রু এই মরণনেশার বাণিজ্যে সম্পৃক্ত। জড়িত ব্যক্তিরা রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন। দেশে বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করেছেন অনেকেই। বিলাসবহুল তাদের জীবনযাত্রা। এইসম্প্রতি বাংলাদেশ বিমানের দুই কেবিন ক্রু ইয়াবাসহ আটক হলে বিষয়টি তোলপাড় শুরু হয়েছে। যদিও এর আগে একাধিকবার ইয়াবাসহ আটক হলেও তা আড়াল করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, এক সময়ে ঢাকা থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে গাঁজা পাঠানো হতো মধ্যপ্রাচ্যে। বিভিন্ন সময়ে বিমানবন্দরে গাঁজা জব্দ করা হয়েছে। তবে ২০১০ সালের পর থেকেই ঢাকা থেকে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে ইয়াবা। ২০১৬ সালের বাংলাদেশ বিমানে কর্মরতদের মাধ্যমে জেদ্দায় ইয়াবায় পাচারের বিষয়টি নজরে আসে কর্তৃপক্ষের। ওই বছরের আগস্টে একটি হজ ফ্লাইটে বিপুল ইয়াবা পাচার হয়। বিমানের একজন স্টুয়ার্ড ছিলেন মাদকাসক্ত। বিমানটি ল্যান্ড করার পর বিমানবন্দর থেকে গাড়িযোগে পাঁচজন কেবিন ক্রু যাচ্ছিলেন নির্ধারিত জেদ্দা হোটেলে। গাড়ি হোটেলের সামনে পৌঁছালে অনেকের মতো ‘আ’ আদ্যাক্ষরের বিমানের ওই স্টুয়ার্ড নেমে যান। মাদকাসক্ত স্টুয়ার্ড ভুলে তার সিটে ফেলে যান একটি জিনের বোতল ও একটি ডানহিল সিগারেটের প্যাকেট। হাতে নিতেই ধরা পড়ে প্যাকেটভর্তি ইয়াবা। বিষয়টি জানাজানি হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

২০১০ সালের পর ইউরোপে বাংলাদেশি অধ্যুষিত বড় শহরগুলোতে ইয়াবার বাজার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা সরবরাহ করে পাঠানো হয় ঢাকা। ঢাকা থেকে সারা দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। একইভাবে ঢাকার একটি মাদক ব্যবসায়ী চক্রের মাধ্যমে তা পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে দেশের বাইরে। এজন্য বিমানে কর্মরতদেরই জড়ানো হয়েছে এই বাণিজ্যে। তবে কেউ কেউ চক্রের বাইরে থেকে নিজেরা ফায়দা নিতে এই মরণনেশার বাণিজ্য করছেন। বিপুল টাকা আয়ের জন্যই ইয়াবা বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছেন বিমানের কর্মরত ক্রু, বিমানবালারা। গত ১লা মার্চ সৌদি আরবের রিয়াদে ইয়াবাসহ বাংলাদেশ বিমানের দুই কেবিন ক্রুকে আটক করে পুলিশ। তারা হচ্ছে, আরিফ পাঠান রুহিত ও ফেরদৌস আল মামুন শিশির। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল ইয়াবা জব্দ করা হয়।

সূত্রমতে, ২৬শে ফেব্রুয়ারি রাত দেড়টার দিকে ফ্লাইট রিয়াদের উদ্দেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। ওই ফ্লাইটে চিফ পার্সার, পার্সার, ফ্লাইট স্টুয়ার্ডসহ ১১ জন স্টাফ ছিলেন। ফ্লাইটটি রিয়াদ বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিশ্রাম নিতে হোটেল রেডিসন ব্লুতে যান বিমানের স্টাফরা। সেখানে একই কক্ষে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন আরিফ পাঠান রুহিত ও ফেরদৌস আল মামুন শিশির। বিকালে কেবিন ক্রুরা শপিং করতে বাইরে যাচ্ছিলেন। তখন তারা রুহিত ও শিশিরের খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাদের ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরান ঢাকার বাসিন্দা আরিফ পাঠান রুহিত মূলত আরিফ রুহিত নামে পরিচিত। কয়েক বছর আগে ক্যাজুয়াল হিসেবে বাংলাদেশ বিমানে যোগ দেন তিনি। চাকরির পাশাপাশি ফ্লাইং শিখছিলেন বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমিতে। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। মাদকবাণিজ্যে জড়িত আরেক কেবিন ক্রু ফেরদৌস আল মামুন শিশির পরিচিতিদের কাছে ফেরদৌস শিশির নামে পরিচিত। দিনাজপুরের সরকারি কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। গত বছরে কেবিন ক্রু হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ বিমানে। সূত্রমতে রুহিত, শিশিরসহ অন্তত ৩০ জন ক্রু মাদকবাণিজ্যে জড়িত রয়েছেন। তাদের সঙ্গে গুলশান-বনানী এলাকার কয়েক ইয়াবা ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইয়াবার রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। সেখানে কেপ্টাকন নামে পরিচিত এই মরণনেশা বিক্রি করে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছেন চক্রের সদস্যরা।

এমনকি মধ্যপ্রাচ্য থেকে অবৈধভাবে স্বর্ণ আমদানিতেও কয়েক কেবিন ক্রু’র জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। মূল বেতন ও আউট স্টেশনের এলাউন্স বাবদ উল্লেখযোগ্য বেতন পেলেও দেশের বাইরে খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয়ের পর তেমন কিছুই থাকে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তারপরও কেবিন ক্রুদের অনেকে বিলাস বহুল জীবন যাপন করেন। এর মূলে রয়েছে অবৈধ বাণিজ্য।

বিমানের দুই কেবিন ক্রু মাদকসহ আটকের বিষয়ে বাংলাদেশ বিমানের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরাধের ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। বিমানে কর্মরত কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় বলে জানান তিনি।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *