দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সিন্ডিকেট-দালালদের দিন শেষ : মেয়র তাপস

0
barrister-fazle-noor-taposh-1571581764072

এ.এইচ.এম.শাহজাহান : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) উন্নয়নকাজে প্রভাব বিস্তার করা বিভিন্ন সিন্ডিকেট ও দালালদের দিন শেষ বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। বিভিন্ন প্রকল্পের কেনাকাটা ও অনিয়মে সক্রিয় জড়িতদের জন্য নগরভবনের দরজা চিরতরে বন্ধের কথা জানিয়ে দেন তিনি। এ ছাড়া মশক নিধন ও জলাবদ্ধতাসহ ডিএসসিসির নানা কার্যক্রম নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে একান্তে আলাপ করেন তিনি।

মশক নিধনে আগেও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু তেমন সফলতা লাভ করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে উদ্যোগুলো একদমই ভুল ছিল বিষয়টি এমন নয়, বিষয়টি হলো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করা। পাশাপাশি দরকার ছিল কাজগুলো ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা। নতুন করে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন,মশক নিধনে এর আগে যে কীটনাশক বা ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে, তার মান নিয়ে যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে। সেই সময় ভালো ওষুধ ব্যবহার করা হয়নি। এবার যেসব ওষুধ ব্যবহার করছি, তার মান অনেক ভালো।

তাপস আরও বলেন,দায়িত্ব নিয়ে আমি উপলব্ধি করেছি, এখানে অনেক কিছুই শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছে। অনেক কার্যক্রম শুরু করেছি। প্রশাসনিক সংস্কারেও হাত দিয়েছি। কেবল দুর্নীতিই নয়; অপচয়, অবহেলা, অনিয়ম ও গাফিলতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে। তাই প্রশাসনিক সংস্কারে হাত দিয়েছি। প্রশাসনিক সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। সেবাগুলো ঢাকাবাসীর কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। একেকটি বিভাগ, একেকটি কাজ নতুন করে সাজাচ্ছি। এর সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক সংস্কারের কাজ চলমান থাকবে। আমরা পুরনো ঘানি টানতে চাই না।

কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলেছি, কোনোরকম কোনো দুর্নীতি, অবহেলা ও গাফিলতি বরদাশত করা হবে না। জিরো টলারেন্স মানে শূন্যই। এটি কখনো শূন্য থেকে বাড়বে না। প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে। মহামারীর কারণে আমরা প্রতিকূলতার মধ্যে রয়েছি। সব বিভাগ যখন একাগ্রচিত্রে কাজ শুরু করতে পারবে, তখন ঢাকাবাসীকে আরও বেশি সেবা দিতে পারব।

জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে তাপস বলেন, পুরোটাই ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে সমন্বয় আনতে হবে। অন্য সংস্থাগুলোকে দায়বদ্ধ করতে হবে। জলাবদ্ধতা কেবল ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই হয় না। যেমন হাতিরঝিলের মুখগুলো খুলে না দেওয়ার কারণে ধানমন্ডি, কাঁঠালবাগান, গ্রিন রোড এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে সমন্বয়ের অভাব হচ্ছে। এই কার্যক্রমগুলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে ন্যস্ত করলে সঠিকভাবে, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পারব। প্রত্যেকটি জলাশয় যদি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারি, নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারি, তবেই জলাবদ্ধতা নিরসনে অনেকটা সহজ হবে। বিভিন্ন সংস্থা জলাশয়-খালগুলোর দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে না। গাফিলতি আর অবহেলার কারণে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এগুলো নিয়ন্ত্রণে নিতে চাচ্ছি। এ কাজ সিটি করপোরেশনের আওতায়ই পড়ে। ঢাকাবাসীর প্রত্যাশাও এসব কাজ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হোক। তারাই এর সুষ্ঠু সমাধান দিতে পারবে। নির্বাচনী ইশতেহারেও বলেছিÑ আমরা দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করব। ইতোমধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। কামরাঙ্গীরচরে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল। এটি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এটি আমরা পুনঃখনন করব। ইতোমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই কাজটি আরম্ভ করতে পারলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সহায়ক হবে। নর্দমা ব্যবস্থাও ঢেলে সাজাতে হবে। ঢাকা ভবিষ্যতে কোনপর্যায়ে যাবে, সেই অনুপাতে কাজ না করলে সবই লোকদেখানো হবে। ইতোমধ্যে আমরা নগরপরিকল্পনাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এলাকা ভাগ করে কাজ শুরু করে দেব। পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার অধীনে যেসব কাজ রয়েছে, সেই কাজগুলো আমরা চাইব দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় নিয়ে আসতে।

সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সিন্ডিকেটের কোনো সুযোগ নেই। যারা ছিল তাদের দিন শেষ। এখন স্বচ্ছ উপায়ে সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় কাজ চলছে। কোনো দুর্নীতি, অপচয়, অবহেলার সুযোগ নেই। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জিইয়ে রেখে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চলমান থাকবে। উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে নিবিড় তদারকি দরকার, নিবিড় পর্যবেক্ষণ দরকার। আমরা সেভাবেই কাজ করছি। ঢাকাবাসী যতদিন না আত্মবিশ্বাস জন্মাবে এই সংস্থা সঠিকভাবে সেবা পৌঁছে দিচ্ছে, ততদিন এভাবে কাজ চলবে। নগরভবনে সিন্ডিকেট করার সুযোগ নেই। কোনো সিন্ডিকেট-দালালের জায়গা নেই। তাদের দরজা নগরভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে চিরতরে বন্ধ।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *