নতুন ভ্যাট আইন ও আবগারি শুল্কের ভবিষ্যৎ আজ নির্ধারিত হবে

0
2ac87f8063520d585a82a1c3473910d4-592ebe4d2d3cc

2ac87f8063520d585a82a1c3473910d4-592ebe4d2d3cc

নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন ও ব্যাংক আমানতের ওপর সরকার নির্ধারিত আবগারি শুল্ক আরোপের বিষয় দু’টির নিষ্পত্তি হবে কাল বুধবার (২৮ জুন)। বাজেট প্রস্তাবের পরপরই এ দু’টি ইস্যু দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় তোলে। ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা এবং ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপের বিরোধিতা করেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। আবগারি শুল্কের বিরোধিতা করে সংসদে এমপিসহ মন্ত্রীরাও বক্তৃতা করেন। এতে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েন অর্থমন্ত্রী। তবে পরে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে সাফাই গেয়ে সংসদে বক্তৃতা করে বিষয়টি সহজ করার চেষ্টা করেন কয়েকজন মন্ত্রী।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘বাজেটে সমস্যা থাকলে আলোচনা করে নিষ্পত্তি করা হবে।’ কাল বুধবার বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এ দু’টি স্পর্শকাতর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী কি বলেন এখন সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন দেশবাসী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর বুধবার অর্থবিল ২০১৭-১৮ পাসের মধ্য দিয়ে এই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানায়, ১ জুলাই ২০১৭ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে নতুন ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আইনের। ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে এ আইনটি কার্যকরের কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে সরকার ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা গত বছরের বাজেট পাসের সময়ই জানিয়ে দেয়। কিন্তু এখন আবার নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের তারিখ পিছিয়ে ২০১৯ সালে নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হচ্ছে।

প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা এবং ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ নির্ধারিত করা হয়েছে। বাজেট পেশের পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ, একই সঙ্গে ভ্যাটের প্রস্তাবিত হার নিয়েও আপত্তি তুলেছেন। তারা বলছেন, ‘ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ইসিআর (ইলেকিট্রিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার) মেশিন আমদানি করা হয়নি, যা এনবিআরের আমদানি করার কথা ছিলো। ইসিআর মেশিন ছাড়া একজন বিক্রেতা কিভাবে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করেবে?’ তবে, এনবিআর বলছে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে এনবিআর পুরোপুরি প্রস্তুত। আশা করা হচ্ছে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী দিক নির্দেশনা সম্বলিত বক্তব্য দেবেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর বা ২০১৯ সালে জানুয়ারিতে দেশে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদের নির্বাচন। সেটি বিবেচনা করলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটই হবে বর্তমন সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। কারণ আগামী বছর ২০১৮ সালের জুনে যে বাজেট উপস্থাপিত হবে তা ২০১৮-১৯ পুরো অর্থবছরের জন্য (৩০ জুন- ২০১৯) হবে না। ওই বাজেট হবে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট, যা হবে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের বাজেট হবে জনসমর্থনপুষ্ট, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা। কাজেই যে দু’টি ইস্যু জনগণ এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষুব্দ করে তুলেছে সে বিষয়গুলো অবশ্যই জনগণের প্রত্যাশা মোতাবেক নিষ্পত্তি হবে বলে ধারণা করছেন তারা।

এর আগে, গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উত্থাপন করেন। এ বাজেট পাস হবে আগামী ২৯ জুন বৃহস্পতিবার। এবারের বাজেটে ঘাটতি রয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ শতাংশ। বাজেটে মোট জিডিপির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৮ শতাংশ। বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়নে। এরপরেই রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো খাত।

প্রস্তাবিত বাজেটটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের টানা চতুর্থ বাজেট। ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের’ শিরোনামে এটি হচ্ছে বর্তমান সরকারের শেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পূর্ণাঙ্গ বাজেট। জনসাধারণের ওপর নানা উপায়ে নতুন কর ও ভ্যাট আরোপ করেই তৈরি করা হয়েছে এবারের বাজেট। এটি শেখ হাসিনা সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট হলেও অর্থমন্ত্রীর নবম বাজেট। এর আগে আবুল মাল আবদুল মুহিত এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরের জন্য দু’বার জাতীয় বাজেট পেশ করেছিলেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট করা হয়েছে জিডিপির ১৮ শতাংশ হারে। নতুন বাজেটে সরকারের নানা চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ থাকছে, এগুলোর মধ্যে রয়েছে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন। সদ্যসমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ বছর তা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত রয়েছে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *