নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশী ব্যাংক মালিক

0
৬৭৭

৬৭৭

শ্রীলঙ্কায় ব্যাংকের মালিকানায় রয়েছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ফয়সাল মোর্শেদ খান। বাংলাদেশে পারিবারিক মালিকানায় থাকা এবি ব্যাংকের নামে তিনি শ্রীলঙ্কায় কিনেছেন ‘আমানা ব্যাংক’-এর শেয়ার। বিএনপি সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খানের একমাত্র ছেলে এই ফয়সাল মোর্শেদ খান। অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একসময়ের ব্যক্তিগত সহকারী লুত্ফর রহমান বাদল দীর্ঘদিন নেপালে এনবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। এখন তিনি চেয়ারম্যান পদে না থাকলেও তার মালিকানায় নেপালের এই এনবি ব্যাংক। ফয়সাল মোর্শেদ খান ও লুত্ফর রহমান বাদল দুজনের বিরুদ্ধেই বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে। তারা এ-সংক্রান্ত দুদকের মামলার আসামিও। কিন্তু থেমে নেই তাদের ব্যবসা, সবই চলছে বাংলাদেশের সীমানার বাইরে। একসময়ের শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগে বহুল সমালোচিত লুত্ফর রহমান বাদল দেশ ছেড়ে এখন ‘সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস’ নামের ক্যারিবীয় একটি দেশের নাগরিক। আর বর্তমানে লন্ডনে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছেন।

শ্রীলঙ্কার আমানা ব্যাংকের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ফয়সাল মোর্শেদ খানের মালিকানার শেয়ার রয়েছে একাধিক নামে। এর মধ্যে এবি ব্যাংকের নামে ১৮ কোটি ৫ লাখ ৬২ হাজার শেয়ার রয়েছে। হংকংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্স এশিয়া ট্রেডিংয়ের নামে রয়েছে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৫০টি শেয়ার। শতাংশের হিসাবে এবি ব্যাংক ২০১৬ সালে এই ব্যাংকের ১৪.৪৪ শতাংশ এবং ট্রান্স এশিয়া ট্রেডিং ২.৬ শতাংশের মালিক। অবশ্য ২০১৭ সালে এসে শতাংশের হিসাবে খানিকটা পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু অপরিবর্তিত ছিল শেয়ার সংখ্যা। জানা যায়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই সিঙ্গাপুর ও চাইনিজ হংকংয়ে তাদের ব্যবসা সরিয়ে নিতে শুরু করে। বিভিন্ন অফশোর কোম্পানি এবং ভুয়া ঋণপত্রের নামে টাকা পাচার করা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। ইতিমধ্যে পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে দুই দফায় এসেছে পিতা মোর্শেদ খান ও ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ খানের নাম। সেখানেও ব্রিটিশ ও ক্যারিবীয়র বিভিন্ন অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচার করার তথ্য পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এবি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সরাসরি যুক্ত করে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলাও রয়েছে বিচারাধীন। দুবাইয়ের দালালের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের অভিযোগে এই ব্যাংকের শীর্ষ ব্যাংকাররা এখন অভিযুক্ত। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে এবি ব্যাংকের অফশোর ইউনিট থেকে ফয়সাল মোর্শেদ খানের মালিকানাধীন প্যাসিফিক মোটরস, মিলেনিয়াম ডিস্ট্রিবিউশন, মিলেনিয়াম মোটরস, মিলেনিয়াম চাং ইয়ং মোটরস, মেসার্স হুন্দাই মোটরস বাংলাদেশ লিমিটেডের ঋণপত্র খোলা হয়েছে। বিদেশে অর্থ পরিশোধ করা হলেও আসেনি কোনো মালামাল। মূলত এসব মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে ধারণা দুদকের মামলা তদন্তসংশ্লিষ্টদের।

অন্যদিকে বাংলাদেশে শেয়ার কেলেঙ্কারির অন্যতম খলনায়ক লুত্ফর রহমান বাদল কয়েক বছর আগেই নেপালে ব্যাংক খুলেছেন। ‘নেপাল বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেড (এনবিবিএল) নামের ওই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের পদেও ছিলেন বাদল। জানা যায়, ‘এল আর গ্লোবাল’ নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লুত্ফর রহমান বাদল ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজার থেকে হাতিয়ে নেন শতকোটি টাকা। এরপর ২০১০ সালেও এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা লোপাট করে বিদেশে পাচার করেছেন। বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করেই অভিনব কৌশলে করছেন অর্থ পাচার। টাকা পাচার করতে বহুজাতিক ফুড চেইন এশিয়া লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠান খুলেছেন দেশে এবং বিদেশে। ভারত-নেপাল এবং শ্রীলঙ্কায়ও রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের ফ্র্যাঞ্চাইজি। প্রতিষ্ঠানে সব পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। একই সঙ্গে বহুজাতিক কোম্পানি হওয়ায় এর মুনাফার বড় অংশ বিদেশ চলে যায়। স্বাভাবিক মুনাফার চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ পাচার করা হয় এই প্রতিষ্ঠানের নামে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নিয়েই লুত্ফর রহমান বাদল ফুড চেইন এশিয়ার লেনদেন করছেন। তবে এ লেনদেনের কোনো হিসাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছেও নেই- কী পরিমাণ পণ্য দেশে আসছে, আর তার বিপরীতে কী পরিমাণ মুনাফা দেশের বাইরে যাচ্ছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানে যেসব কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন তাদের অধিকাংশই বিদেশের নাগরিক। কাগজে-কলমে এক রকম বেতন-কাঠামো নির্ধারণ করে বাস্তবে দিচ্ছেন আরও কম। এদের মাধ্যমে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা পাচার করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই পাচার করা অর্থ দিয়েই লন্ডনে বিলাসবহুল জীবন-যাপনসহ নেপালে ব্যাংক বানিয়েছেন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *