পশ্চিমবঙ্গে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ভারতী ঘোষ নিজের অবস্থান থেকে পিছু হটছেন

0
ss

ss

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আলোচিত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ভারতী ঘোষ নিজের অবস্থান থেকে পিছু হটছেন। মাদুরদহরে ভারতী ঘোষের বাড়ি নিয়ে তদন্ত করছে গোয়ান্দা সংস্থা। প্রশাসনের মূল লক্ষ্য ভারতী ঘোষের সম্পত্তির পরিমাণ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা দেখা। অন্য দিকে ভারতী ঘোষের দাবি, তিনি বৈধ উপায়েই যাবতীয় সম্পত্তি কিনেছেন বা বানিয়েছেন।

এ বিষয়ে সোমবার এক অডিও বার্তায় ভারতী দাবি করেছেন, যখন তিনি জাতিসংঘে চাকরি করতেন সেই সময়ে আড়াই কোটি টাকা বেতন পেতেন। নাইরোবিতে থাকার সময়ে সেই আয়ে নিয়ম অনুযায়ী কোনও আয়করও দিতে হয়নি। আর সেই সময়েই মাদুরদহের বাড়ি তৈরি হয়।

এদিকে ভারতীর ফ্লাটে সিআইডির তদন্তের প্রতিবাদে হাইকোর্টে মামলা করেন প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ ও তার স্বামী এম এ ভি রাজু। সিআইডির বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের তদন্ত চেয়ে এই আবেদন করা হয়। সোমবার বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এজলাসে ভারতীর আইনজীবী দেবকুমার চৌবে মামলাটি প্রত্যাহার করার আরজি জানান।

এর আগে শুক্রবার ভারতী ঘোষকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল এসিজেএম আদালত ওই নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশে ভারতী ছাড়াও তার প্রাক্তন দেহরক্ষী সুজিত মণ্ডলকে গ্রেফতার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

পশ্চিমবঙ্গের দাসপুর থানায় করা একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তার একাধিক বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে সিআইডি। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার থাকাকালীন ভারতীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত একাধিক পুলিশকর্মীর বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়। তারপর থেকে ভারতী বেশ কয়েকবারই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি রাজ্যের বাইরে রয়েছেন। ভারতীর দাবি, ওই অভিযোগে নাম না থাকা সত্ত্বেও তার বাড়িতে বেআইনিভাবে তল্লাশি চালিয়েছে সিআইডি। রাজ্যে ফিরে তিনি আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছিলেন।

কিন্তু ভারতী এখন কোথায় রয়েছেন সে সম্পর্কে কিছুই জানাননি তিনি। নাকতলা এবং মাদুরদহের যেসব বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়, সিআইডি যদিও তার কোনোটিরই মালিক হিসেবে ভারতীর নাম উল্লেখ করেনি। এরপর শুক্রবারই গ্রেফতার করা হয় ঘাটালের প্রাক্তন সার্কেল ইন্সপেকটর শুভঙ্কর দে এবং ঘাটাল থানার ওসি চিত্ত পালকে। দু’জনেই জেলা পুলিশে ভারতীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে একটা অংশের দাবি। নোটবন্দির সময়ে সোনায় টাকা বিনিয়োগের প্রতারণার একটি পুরনো মামলায় সম্প্রতি শুভঙ্কর এবং চিত্তবাবুর বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিআইডি। সেই সময় হিসাববহির্ভূত প্রচুর টাকা উদ্ধার হয় তাদের বাড়ি থেকে। গ্রেফতার করা হয় ওই দুই পুলিশকর্মীকে। একই মামলায় এবার ভারতী এবং সুজিতের নামেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করল আদালত।

সিআইডির ধারণা, উত্তর ভারতের কোথাও গাঢাকা দিয়ে রয়েছেন ভারতী। মোবাইল টাওয়ার ট্র্যাক করে তারা জানতে পেরেছে, কয়েক দিন আগে পর্যন্ত তিনি দিল্লিতেই ছিলেন। তারপর তিনি গুজরাতের জামনগরে চলে যান। দিন কয়েকের মধ্যে ফের দিল্লিতে আসেন। তার খোঁজে সিআইডির কয়েকটি দল ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে রওনা দিয়েছে বলে সূত্রের খবর।

পশ্চিমবঙ্গের আইপএস পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এই নারী। গত ২৬ ডিসেম্বর হঠাৎ তার পদাবনতি ঘটিয়ে বদলি করা হয় উত্তর২৪পরগনা পুলিশের তৃতীয় ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার পদে। তবে কর্তৃপক্ষের এ আদেশ তোয়াক্কা করেননি তিনি। প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। ভারতী ঘোষ একটানা ছয় বছরের বেশি সময় দায়িত্বপালন করেছেন পশ্চিমবঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত কাছের লোক ছিলেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মা’ বলেও ডাকতেন। সরকারি পদে থেকেও তিনি তৃণমূলের অপ্রকাশ্যের এক নেত্রী হয়ে ওঠেন। দলকে গোছানো, দলকে বাড়ানো, দল ভাঙা, কাউকে দলে আনা—এসবের দায়িত্বপালন করেছেন তিনি।

মমতার দলের সেই সময়কার দ্বিতীয় শক্তিশালী নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গেও ছিল ভারতী ঘোষের সুসম্পর্ক। কিন্তু মুকুল রায় বিজেপিতে যোগদানের পরও ভারতী ঘোষ তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় মমতা ও এক প্রভাবশালী মন্ত্রী। ভারতী ঘোষের সঙ্গে ঠাণ্ডাযুদ্ধ শুরু হয়।

ফলে ভারতী ঘোষকে নাস্তানাবুদ করার জন্য মামলা হয়। মামলা করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী চন্দন মাজি। চন্দন মাজি অভিযোগ করেন, ভারতী ঘোষ হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করতেন। টাকা ও স্বর্ণ আদায় করা ছিল তার লক্ষ্য। এই অভিযোগ নিয়ে শুরু হয় তদন্ত। কলকাতার সিআইডি পুলিশও বসে নেই। ভারতী ঘোষের অবৈধ সম্পত্তির খোঁজে নেমে পড়ে তারাও।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *