প্রশ্নপত্র ফাঁস জাতির মেরুদণ্ড ধ্বংসের আলামত

প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে অনৈতিক উপায়ে শুধু অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার মধ্যেই মানবতাবিরোধী চক্রটির অপকর্ম সীমাবদ্ধ নয়। জাতির মেরুদণ্ড ধ্বংসের উদ্দেশ্যে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে ক্ষতিয়ে দেখা প্রয়োজন।এছাড়াও প্রশ্নপত্র ফাঁস আওয়ামী লীগ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টাও হতে পারে।দেশকে অশান্ত করে তোলার জন্যে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা ও আওয়ামী লীগবিরোধী স্বার্থলোভী চক্ররের নীলনকশা কিনা তাও তলিয়ে দেখা দরকার।সরকার এই চক্রকে শক্ত হাতে দমনের জন্য দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করে অপরাধীদের চিহ্নিত করার মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত বলে দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজ মনে করে।প্রশ্নপত্র ফাঁস জাতির মেরুদণ্ড ধ্বংসের পূর্ব আলামত।তাই সরকার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিরসনে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জাতি প্রত্যাশা করে।
জাতি মনে করে,দেশ-জাতি গঠন, উন্নয়ন, সভ্যতা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ, মানবতা, বিজ্ঞান-দর্শন,মনুষ্যত্ব ও নৈতিকমূল্যবোধ সবকিছুরই প্রতিফলন ঘটায় শিক্ষা। আজ এই শিক্ষাকে কলুষিত করে তুলছে দুষ্ট-দুশ্চরিত্র মানুষরূপী হিংস্র পশুতুল্য কতিপয় মানুষ। জাতিকে চরমভাবে কলঙ্কিত করছে।সব শ্রেণীর মানুষই বিষয়টি নিয়ে ভীষণ বিব্রত।চক্রটি জাতি ও সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ চাকুরীর পরিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রশ্নপত্র ফাঁস করে থাকে।এর প্রতিকারের উপায় নির্ণয় করে নিরসন করা সময়ের দাবি।
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একক নেতৃত্বে অস্থায়ী মুজিব নগর সরকারের পরিচালনায় পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর শোষণ-চোষণ,নির্যাতন-নিপীড়ন ও নির্মম নৃশংসতার প্রতিরোধে ৭১ এ ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকল পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে শত্রু মুক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রিয়দেশ বাংলাদেশকে স্বাধীন করে।স্বাধীনতার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও আদর্শ ছিল শোষণ-চোষণ,নির্যাতন ও ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত আইনের সুশাসনের গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন অসম্প্রদায়িক মানবিক মূল্যবোধের সম্প্রীতির বাংলাদেশ।কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় হলো, আমরা দেখতে পাই স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় ৭১ এর ঘাতক দালাল মানবতাবিরোধী যুুদ্ধাপরাধী চক্র বিদ্ধস্থ স্বাধীন দেশের উন্নয়নের সকল কর্মকাণ্ডময় ধারাকে বাঁধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করে।জাতি জনকের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন- সংগ্রামের মাধ্যমে সকল বাঁধাকে অতিক্রম করে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের চিনিয়ে এনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
পাঁচবছর সুনামের সহিত সফলভাবে সরকার পরিচালনার পর ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নামক দলটি ৭১ এর ঘাতক দালাল যুদ্ধাপরাধী ও ৭৫ এর খুনীদের সাথে জোট করে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা কতিপয় স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের সহযোগিতায় স্হূল কারচুপির দ্বারায় ক্ষমতাচ্যুত করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে।নির্বাচনের পর মন্ত্রী পরিষদে বেগম জিয়া চিহ্নিত রাজাকার মানবতাবিরোধী জমাত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও মুজাহিদকে স্থান দিয়ে নিজেকে ঘাতকদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটায়।এছাড়াও খালেদা জিয়া রাজাকারদের হাতে শহীদের রক্তমাখা জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে বিশ্বাস ঘাতকতা করেন ৩০ লক্ষ শহীদ ও ৪ লক্ষাধিক মা-বোনের হারানো সম্ভ্রমের সাথে।এরপর শুরু করে সমগ্র বাংলাদেশে নারকীয় তাণ্ডব।জঙ্গীর উত্তান,সাম্প্রদায়িক হিংস্র দাঙ্গা ও ৬৩ টি জেলায় একই সাথে সিরিজ বোমা মেরে গণহত্যাযজ্ঞ।তাদের তাণ্ডব থেকে আদালত প্রাঙ্গণের মাননীয় বিচারকরাও রেহাই পায়নি।মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নির্মূল করার লক্ষে শেখ হাসিনার উপর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে একটি সন্ত্রাস জঙ্গীবাদবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে।যে হামলায় নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী প্রাণ হারায়।অগণিত নেতাকর্মী সেইদিন হয়েছিল আহত।এখনো অনেকেই আহত অবস্থায় জীবনযাপন করছে।
আবারো পাঁচবছর নানা অবর্নণীয় অমানবিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে তীব্র আন্দোলনে খালেদা জিয়া ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়।যাওয়ার বেলায় জাতির উপর চাপিয়ে দিয়ে যায় অগণতান্ত্রিক সরকার।তারপর অগণতান্ত্রিক সরকারও বহু ঘটনা সংঘটিত করে স্বাধীন প্রিয় বাংলাদেশে যা বর্ণনাতীত।দেশের কঠিন সংকট ক্ষণে জাতি আবারো ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক সরকারকে সরিয়ে ২০০৮ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসায়।যার ফলে বাঙ্গালি আজ প্রায় কলঙ্ক মুক্ত বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার বাস্তবায়নসহ মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাস্তবায়নের মাধ্যমে।দেশ এখন বঙ্গকন্যা বিশ্বনেতা শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে উন্নয়নের মহাসড়কে।
এত কিছুর পরেও দুষ্ট ঘাতকরা বসে নাই।তারা প্রতিনিয়ত আঘাত করেই চলছে দেশের শাসনতন্ত্র সহ বিভিন্ন শীর্ষ প্রতিষ্ঠানকে। চরমভাবে বাঁধাগ্রহস্ত করতে চায় দেশের উন্নয়নের ধারাকে।নানানমূখী ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টায় লিপ্ত।দেশের চলমান শান্তি-শৃঙ্খলাকেও বিঘ্ন ঘটাতে চায়।প্রশ্নপত্র ফাঁস ওদেরই একটি ষড়যন্ত্রের অংশ।কারণ দেশের সর্বত্রে এমনকি রাষ্ট্রযন্ত্রেও ওদের লোক ঘাপটি মেরে আছে।খালেদা জিয়া ইতিমধ্যে ইঙ্গিতও দিয়েছে যে প্রশাসন,সেনাবাহিনী ও পুলিশে তাদের লোক রয়েছে।যা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতন কোন কথা নয়।এর মাঝে রয়েছে জাতিকে বিভ্রান্ত করা এবং গভীর ষড়যন্ত্রের রহস্যের অগ্রিম সংকেতের গন্ধ।
এমুহুর্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে আমাদের করণীয় যেহেতু বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ।তাই ডিজিটাল পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে সংকট থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পথ বের করতে হবে।যেমন ধরুণ পরিক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের জন্য একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠন।মনিটরিং সেল থেকে পরিক্ষা আরাম্ভ হওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে প্রতিটি পরিক্ষার কেন্দ্রে কম্পিউটারের মাধ্যমে নেট থেকে কোড লক ক্লিক করে প্রশ্নপত্র প্রিন্ট নিয়ে ফটোকপি করে ছাত্রছাত্রীদের হাতে প্রশ্নপত্র দিলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।উল্লেখ থাকে যে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল প্রতিটি বিষয়ে তিনটি করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করবে।শুধু মাত্র পরিক্ষার নির্ধারিত পূর্বসময়ে যেকোন একটি নিদিষ্ট প্রশ্নপত্র ছাড় দিবে।যা থেকে ছাত্রছাত্রী পরিক্ষা দিবে।
এতে নৈতিক অবক্ষয় রোধ হবে।পরিক্ষার খরচও কমে যাবে প্রায়।সাশ্রয় হবে সরকারি মোটা অংকের টাকা।জনবলও কমে যাবে অর্ধেকেরও বেশি।দুর্নীতির পথও বন্ধ হবে অনেকটা।তখন আর প্রশ্নপত্র ছাপানো ও বিতরণসহ নিরাপত্তা খাতের খরচ তেমটা লাগবেনা সাশ্রয় হবে রাজস্ব অর্থের।ভয় থাকবেনা ছাত্রছাত্রীদের নৈতিক অবক্ষয়ের।
অতএব আমি মনে করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি বিশেষ নজরে নিয়ে পরিক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে একবার হলেও পরিক্ষামূলক এই পদ্ধতিটি গ্রহণ করে দেখতে পারেন।দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি পদ্ধতিটি পরিক্ষামূলক দেখলে নিশ্চিত প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে বিশেষ কাজ করবে ইনশাআল্লাহ……
লেখক- মুফতী মাসুম বিল্লাহ্ নাফিয়ী
সভাপতি,জয় বাংলা মঞ্চ।