‘ফখরুল স্বাধীনতার ৫০ বছর পর দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে বের করেছেন’

0
164707_bangladesh_pratidin_hanif-new-news-pioc

রাজনীতিতে বিএনপির অস্থির ও অসহিষ্ণুভাব দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম স্বাধীনতার ৫০ বছর পর দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে বের করেছেন। শিশু মুক্তিযোদ্ধা বের করেছেন। আর কিছুদিন গেলে তিনি গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামীকেও মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে ফেলবেন।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মুজিববর্ষ ও মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু ও মহান বিজয়ের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য দেশে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি, যেটা সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি সেটা অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ইতিমধ্যে দু’টি দলের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। অথচ বিএনপি নেতারা আজ এ বিষয় নিয়েও নেতিবাচক কথাবার্তা বলছেন।
এসময় বিএনপিকে সংলাপে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলার জন্য আপনারা (বিএনপি) বহু সময় পাবেন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হবে। এখন নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব নয় বলে সংলাপের আয়োজন করেছেন। সংলাপের মাধ্যমে সবার মতামত নিয়ে সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠন করা হবে। আপনারা মহামান্য রাষ্ট্রপতির আহ্বানে সংলাপে সাড়া দিন, সেখানে আপনাদের মতামত তুলে ধরুন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতি নিয়েও সেখানে আলোচনার সুযোগ পাবেন। আপনাদের যদি ভালো পরামর্শ থাকে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি সেটা বিবেচনা করতে পারেন। আপনারা সংলাপে অংশ নিয়ে পরামর্শ দিন।

হানিফ বলেন, জাতি আজ দুই ধারায় বিভক্ত। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি। যারা পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসন করে তারা জাতিকে বিভক্ত করে দিয়েছে। একদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি। অন্যদিকে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে না, পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী তারা বিএনপি-জামায়াত প্লাটফর্মে আছেন। এ বিভাজন দূর না হলে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়া কঠিন হবে। বাংলাদেশে থেকে যারা পাকিস্তানের ভাবাদর্শে বিশ্বাসী তারা পাকিস্তানের সর্মথক, তারা বাংলাদেশের শত্রু। পাকিস্তানের ভাবাদর্শে বিশ্বাসীদের বয়কট করতে হবে। এদের বিরুদ্ধে সর্তক থাকতে হবে। সোনার বাংলা গড়তে হলে অশুভ শক্তিকে নির্মূল করতে হবে। স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে বয়কট করতে হবে, রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করতে হবে।

তিনি বলেন, ৭৫’এর ১৫ আগস্টের পর স্বাধীনতার ইতিহাসকে বারবার বিকৃতি করা হয়েছে। ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পর বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু জানতেন স্বাধীনতার জন্য জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া বিপ্লব সম্ভব নয়। ম্যান্ডেট পাওয়ার জন্য সত্তরের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। রেসকোর্স ময়দানের ১৯ মিনিটের ভাষণে তিনি বাঙালিকে জাগিয়ে তুলেছেন। এটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ। এ সকল ভাষণের ঊর্ধ্বে ছিল। কারণ আর কোনো নেতার এ ধরণের ভাষণের মধ্য দিয়ে কোনো রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়নি।

হানিফ বলেন, কোনো মেজরের হুইসেলে, গোলটেবিল আলোচনায় কিংবা কারো দয়ায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়নি। আমরা যুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশ স্বাধীন করেছি। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৬ সালের ছয় দফার ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সোপান রচিত হয়েছিল। বাঙালির মুক্তির পথ তৈরি হয়েছিল। স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতার ২১ বছরের আন্দোলনের পথ মসৃণ ছিল না। ১৩ বছর কারাবরণ করেছেন। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠির নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। ভয়-ভীতি দেখিয়েও দমাতে পারেনি। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দিয়ে দমিয়ে দিতে চেয়েছে কিন্তু বাঙালি জেগে উঠেছিল বলে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন, আত্মমর্যাদাশীল সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।

হানিফ আরও বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে পাকিস্তানী ভাবধারার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। দালাল আইন বাতিল করে রাজাকারদের মুক্ত করেছেন। স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ, সম্ভ্রমহানি হওয়া ২ লাখ মা-বোনের সম্মান পদদলিত করেছেন। জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করেন। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছেন। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচার বন্ধ করে পাকিস্তানী ভাবধারার দেশ গড়তে চেয়েছিলেন।

আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। আইইবি প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর। ইঞ্জিনিয়ার রনক আহসানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইইবি সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু)। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন আইইবি ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার নুরুজ্জামান, আইইবি ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রশাসন ও অর্থ) ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মনজুর মোর্শেদ প্রমুখ।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *