‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত’

0
98

98

কী দারুণ বসন্তেরই আগমনে নিমন্ত্রণ, ফাগুনের কৃষ্ণচূড়া, রক্তজবা জানাই সম্ভাসন… আজকের এই দিনে এ ধরনের গানই মুখে আসে বারবার। কারণ আজ পহেলা ফাল্গুন।

কবিগুরু লিখেছেন, ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে/ তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে/ কোরো না বিড়ম্বিত তারে।’

প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে বিদায় নিয়েছে শীত। ঋতুরাজ বসন্ত তার নিজস্ব উষ্ণতায় প্রাণ সঞ্চার করছে প্রকৃতিতে। মাঝেমধ্যেই বয়ে যাচ্ছে দমকা হাওয়া। তাতে মিশে আছে মন উচাটন করা কোকিলের কুহু কুহু গান। গাছে গাছে অজস্র ফুলের সমাহার। শাখায় শাখায় নতুন পাতার উদগম, যেন নতুন হয়ে উঠছে পুরনো পৃথিবী। সে কারণেই যুগে যুগে বসন্ত বিপুল নন্দিত জীবনের জয়গানে।

প্রাণস্পন্দনে জেগে ওঠা প্রকৃতির নীরব উচ্ছ্বাস, বুনো ফুলের গন্ধমাখা দমকা হওয়া, এই চনমনে রোদ, আমের মুকুলে মুকুলে ভ্রমরের গুঞ্জন, বাঙালির হৃদয়ের গভীরেও জাগিয়ে তোলে এক অনির্বচনীয় ব্যাকুলতা।

নতুন প্রকৃতির মতোই উজ্জ্বল সাজে সজ্জিত হয়ে পথে নামে পুরবাসী নর-নারী। খুলে যেতে চায় মনের বন্ধ দুয়ার। হৃদয়ের না বলা কথাটি প্রিয়তম কোনো জনের কাছে মধুর স্বরে বলতে আকুল হয়ে ওঠে চিত্ত। হৃদয়ের একূল ওকূল- দুই কূল ভাসানো আবেগের প্লাবনে ঘুচে যায় দ্বিধা-সংকোচ। অনুভূতি পেয়ে যায় তার প্রকাশের ভাষা। বসন্ত তাই ভালোবাসার ঋতু বলেও সমাদর পেয়েছে বাঙালির কাছে।

এ ইটপাথরের কৃত্রিম নগরে বসন্তের লাবণ্যময় স্পর্শ কি লাগে কোথাও? নিসর্গে বসন্তের বর্ণচ্ছটা শহরে তেমন সুলভ নয়। তবে মানব হৃদয় বসন্তের প্রভাব এড়াতে পারে না বলেই হয়তো আজ এই যান্ত্রিক নগরেও দেখা যায় নাগরিকদের বেশভুষায় উৎসব আয়োজনে ঋতুরাজের আগমনী-উচ্ছ্বাস।

তাই তো কবির ভাষায় বলতে হয়- ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত’ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অমীয় বাণীটি ঋতুরাজকে আলিঙ্গনের আহ্বান জানায়। ফুল ফোটার পুলকিত এই দিনে বন-বনান্তে কাননে-কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে উঠবে চারদিক।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *