বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ইংরেজি করেন ফারুক চৌধুরী

0
Faruk_jago20170517161028

Faruk_jago20170517161028

দিনবদল ডেক্স: ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলা ভাষণ দিয়ে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সদ্য প্রয়াত সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত ফারুক আহমেদ চৌধুরীর নামও।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই ভাষণ উপস্থিত সবার জন্য ইংরেজিতে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করেছিলেন তিনি।

বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফারুক চৌধুরীর জানাজায় অংশ নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এসব কথা জানান। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন সাবেক কূটনীতিকরাও।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ফারুক আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে বিভিন্ন দেশ সফর করেন। তিনি চাকরি থেকে অবসরের পর যোগ দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে।

প্রয়াত এই কূটনীতিকের সহকর্মী ও আরেক সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ মুহসীন জাগো নিউজকে বলেন, নবগঠিত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির বাস্তবায়নে ফারুক চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থানও নির্ধারণ করেছিলেন তিনি।

বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কূটনীতিক ফারুক চৌধুরী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা ছাড়াও বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি।

সিলেটের করিমগঞ্জে ১৯৩৪ সালে জন্ম নেয়া কূটনীতিক ফারুক চৌধুরী ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। তার বাবা ছিলেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজির স্নাতক ফারুক চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও আলজেরিয়ায় কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ডেপুটি হাই কমিশনার হিসেবে ছিলেন তিনি। কমনওয়েলথে বাংলাদেশের যোগ দেয়ার আলোচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। এরপর ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও ইউরোপের বিভিন্ন মিশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এই কূটনীতিক।

১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন ফারুক চৌধুরী। এরপর দিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার হিসেবে তিনি ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

ফারুক চৌধুরীরা ছিলেন চার ভাই ও দুই বোন। এরমধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। বাকি তিন ভাইয়ের মধ্যে সাবেক সচিব ইনাম আহমেদ চৌধুরী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ছিলেন। আর সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসুম আহমেদ চৌধুরী ২০১২ সালে মারা গেছেন।

বোনদের মধ্যে নাসিম হাই শহীদ কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাইয়ের স্ত্রী। ছোট বোন নীনা আহমেদের স্বামী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমেদ, যিনি সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।

ফারুক চৌধুরী ও তার স্ত্রী জিনাত চৌধুরীর দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে ছেলে আদনান চৌধুরী ব্যবসা করেন। মেয়ে ফারজানা আহমেদ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী।

ফারুক চৌধুরীর লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘জীবনের বালুকাবেলায়’ ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পায়। যা শুধু কূটনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ দলিল নয়, বাংলা গদ্যসাহিত্যেরও অনন্য সংযোজন। ফারুক চৌধরীর লেখা অন্যান্য বইগুলো হচ্ছে-দেশ দেশান্তর, প্রিয় ফারজানা, নানাক্ষণ নানাকথা, স্বদেশ স্বকাল স্বজন, সময়ের আবর্তে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রাঙ্গনে জানাজা শেষে আসরের পর ধানমন্ডি ৭ নম্বর রোডে বায়তুল আমান জামে মসজিদে ফারুক চৌধুরীর আরেক দফা জানাজা হবে। এরপর রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *