বরিশালে মেডিকেলের পুকুরে সরকারি ওষুধ : ৩ তদন্ত কমিটি

0
barishal20170513141936

barishal20170513141936

দিনবদল ডেক্স: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ কোয়াটারের পুকুর ও এক নারী কর্মচারীর বাসা থেকে বিপুল পরিমণ সরকারি ওষুধ উদ্ধারের ঘটনায় ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শনিবার সকালে এই তদন্ত কমিটিগুলো গঠন করা হয়। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক। এছাড়া এ ঘটনায় আটক হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী শেফালি বেগম ও তার ছেলে মো. মামুনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম সিরাজুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের প্রধান স্টোর, সাব স্টোর ও ইনডোরের জন্য ৩ জন সহকারী পরিচালককে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটির মধ্যে প্রধান স্টোরে ডা. মো. ইউনুচ আলী (অর্থ ও ভান্ডার) ও সাব স্টোরের ডা. মশিউল আলম (প্রশাসন) তাদের ওষুধ মিলিয়ে দেখেছেন। এখান থেকে কোনো ওষুধ চুরি হয়নি। এখন কেবল ইনডোর স্টোরের ওষুধ মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।

এই কমিটির তদন্তের দায়িত্বে আরেক সহকারী পরিচালক ডা. মো. আব্দুল করিম। এই কমিটির প্রতিবেদন পেতে হয়তো দু’একদিন সময় লাগবে।

তিনি আরও বলেন, শুক্রবার হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ কোয়ার্টার কম্পাউন্ডের পুকুরে থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ওষুধ ২০১৬ সালে ক্রয় করা হয়েছিল।

কোতয়ালি মডেল থানার সহকারী কমিশনার (এসি) আসাদুজ্জামান জানান, শুক্রবার সকালে তারা কোয়ার্টারের স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পান যে, সেখানকার একটি পুুকুরে বিপুল পরিমাণ ওষুধ ভাসছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পুকুর থেকে ওষুধগুলো উদ্ধার করেন। ওষুধের মোড়কের গায়ে লাল-সবুজ এবং সরকারি ছাপ থাকায় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সেগুলো সরকারি হাসপাতালে রোগীদের বিনামূল্যে সরবরাহের ওষুধ। সবগুলো ওষুধ মেয়াদসম্পন্ন।

ওষুধগুলোর কোনোটির ২০১৮ এবং কোনোটির ২০১৯ সাল পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে। এ পর্যন্ত ১৩ ধরনের ওষুধ চিহ্নিত করা হয়েছে। জব্দ করা ওষুধের মধ্যে রয়েছে, সেফট্রিয়াক্সোন ইনজেকশন, জেএমআই সিরিঞ্জ, ডেস্কামেটথাসন সোডিয়াম, লার্ব ৫০+, লুমনা-১০, ডমপেরিডন, ভ্যাসোপিস্ক, থিওফাইনিল, জ্যাসোকাইন জেল, ডাইক্লোফেন ইনজেকশন, এনক্লোগ প্লাস, সালবুটামল, এজিথ্রোমাইসিন ৫০০।

এসি আসাদুজ্জামান জানান, স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তারা জানতে পারেন যে কোয়াটারের বাসিন্দা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী শেফালী আক্তারের ছেলে মামুন গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ওষুধগুলো পুকুরে ফেলেছে। তার আগে বাসার সামনে কিছু ওষুধ আগুনে পুড়িয়েছে মামুন।

এ তথ্যের ভিত্তিতে শেফালী আক্তারের বাসায় অভিযান চালিয়ে তার বাসা থেকে আরও কিছু ওষুধ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত শেফালী আক্তার ও মামুনকে আটক করা হয়। আটক মা-ছেলের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মামুন মাদকাসক্ত। কয়েকদিন ধরে মায়ের সঙ্গে তার ঝগড়া চলছে। মায়ের সঙ্গে রাগ করে মামুন বাসায় মজুদ থাকা ওষুধ পুকুরে ফেলে দেয় ও কিছু আগুনে পুড়িয়েছে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে শেবাচিম হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার (মেডিসিন) ডা. মাহমুদ হাসান বলেন, উদ্ধার হওয়া ওষুধগুলো সরকারি। এর মূল্য লক্ষাধিক টাকা।

ওষুধগুলো শেবাচিম হাসপাতালের কি-না জানতে চাওয়া হলে স্টোর অফিসার বলেন, স্টোরের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

কোয়ার্টারের বাসিন্দা হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শেফালী আক্তার হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে আয়া পদে কর্মরত রয়েছে। স্টোর থেকে ওয়ার্ডে পাঠানো ওষুধ রোগীদের মধ্যে বিতরণ না করে বাসায় নিয়ে যায়। পরে বিক্রি করে দেয়। প্রতিটি ওয়ার্ডের স্টাফ নার্সরাও এ চক্রের সঙ্গে জড়িত।শেফালী আক্তার কয়েক বছর আগে ওষুধ পাচারের অভিযোগে র্যাবের হাতেও আটক হয়েছিল বলে ওই সূত্রগুলো জানিয়েছে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *