বিমানবন্দর থেকে গণভবন: প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনায় জনস্রোত

বিশেষ প্রতিনিধি: বিমানবন্দর থেকে গণভবন। প্রায় ১৪ কিলোমিটার এই সড়কের দুই পাশে তিল ধারণের জায়গা নেই। পুরো সড়কজুড়েই লোকে লোকারণ্য। চারিদিকে এক অন্যরকম আবহ। সড়কের দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ। জনতার ঢলে রাজপথ যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। সড়কের দুই ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য অপেক্ষায় থাকা লাখো মানুষ দীর্ঘ এই পথের দুই ধারে দাঁড়িয়ে পুষ্পবৃষ্টি ছিটিয়ে, বাদ্য-বাজনার তালে স্লোগানে স্লোগানে বরণ করে নেন তাদের প্রিয় নেত্রীকে। গণসংবর্ধনায় অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেমের বাস-ট্রাকসহ কোন কিছুরই কমতি ছিল না।
জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশন শেষে দেশে ফেরার পর শনিবার এভাবেই লাখো মানুষের পুষ্পবৃষ্টি আর হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসায় সিক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর সাহসী সিদ্ধান্ত এবং এই সঙ্কটের প্রতি বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
গত ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতায় রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন শেখ হাসিনা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে লন্ডন হয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় দেশে ফেরার পর প্রথমেই ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে সংবর্ধনা দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীকে।
বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে সংক্ষিপ্ত এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীকে ‘বিপন্ন মানবতার বাতিঘর’ অভিহিত করেন।
ওই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে প্রথমে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এরপর ফুল দেওয়া হয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে।
বিশিষ্টজনদের পক্ষ ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুণ-অর রশীদ ও বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান ফুল দেন প্রধানমন্ত্রীকে।
ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজাকে সঙ্গে নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান।
রামেন্দু মজুমদারের নেতৃত্বে সংস্কৃতিকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এর মধ্যে ছিলেন আতাউর রহমান, গোলাম কুদ্দুস, সারা যাকের প্রমুখ।
সাহিত্যিক রাহাত খান, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, কণ্ঠশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের মধ্যে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আবেদ খান প্রমুখ।
এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রীকে।
অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেওয়ার পর সাড়ে ১০টার দিকে বিমানবন্দর থেকে গণভবনের পথে রওনা হন।
এই পুরোটা পথে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের হাজার-হাজার নেতা-কর্মী জড়ো হয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে তারা দাঁড়িয়ে ছিলেন সড়কের দুই ধারে। কেউ কেউ গানে গানেও শুভেচ্ছা জানান তাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
কোনো ধরনের জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করেই এই সংবর্ধনা দেওয়ার আশ্বাস আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দিলেও বিভিন্ন স্থানে যান চলাচল ব্যাহত হয়।
সকাল ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ঢুকলে এসএসএফের একটি দল তাকে গার্ড অব অনার দেয়।