বিশ্ব কিডনি দিবস আজ

0
444

444

দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে বছরে ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে কিডনি জনিত জটিলতায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ও সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ লোকের কিডনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। প্রতি বছর ৩৫ হাজার কিডনি স্থায়ীভাবে অকার্যকর হয়। এর মধ্যে মাত্র ২০ ভাগ রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির আওতায় আসে এবং বাকি রোগীরা প্রকৃত চিকিৎসাসেবার আওতার বাইরে থেকে যায়। সম্পূর্ণ কিডনি বিকল রোগের সর্বোত্তম চিকিৎসা হলো কিডনি সংযোজন।

তথ্য মতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ২ হাজারের বেশি বোগীর কিডনি সংযোজিত হয়েছে। এ সবই জীবিত এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে সংগৃহীত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একমত বিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে কিডনি ডোনারের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই মৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে কিডনি সংগ্রহে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলে জানিয়েছেন কিডনি বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে জীবিত যারা কিডনি দিয়েছেন তাদেরও নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে। এ বিষয়ে জনসেচতনতা তৈরি করতে হবে। দেশে প্রায় দুই কোটি লোক কিডনি রোগী রয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ৩৫ হাজার কিডনি স্থায়ীভাবে অকার্যকর হয়। এর মধ্যে মাত্র ২০ ভাগ রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির আওতায় আসে এবং বাকি রোগীরা প্রকৃত চিকিৎসা সেবার আওতার বাইরে থেকে যায়। ডায়াবেটিসজনিত কারণে শতকরা ৪১ ভাগ, উচ্চ রক্তচাপজনিত ৩৩ ভাগ, সংক্রমণজনিত ২৫ ভাগ ও অন্যান্য কারণে শতকরা ১ ভাগ কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। কিডনি প্রতিস্থাপনে দুই সপ্তাহের প্যাকেজে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বেড ভাড়া ও অস্ত্রোপচার এবং ওষুধপত্র বাবদ মোট খরচ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। দেশে মোট যত কিডনি প্রতিস্থাপিত হয় তার সিংহভাগই বিএসএমএমইউতে হয়।

ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের কিডনি বিভাগের চিফ কনসালটেন্ট, অধ্যাপক ডা. এমএ সামাদ তার এক প্রবন্ধে বলেন, বিশ্ব কিডনি দিবসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- কিডনি রোগের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা ও কিডনি বিকল প্রতিরোধ প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা করা ও সুস্থ জীবন ধারায় সবাইকে অভ্যস্ত করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা মতে, প্রথম ১০ মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে স্থূলতা একটি। এক সময় বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল সংক্রামক ব্যাধি। এখন বাংলাদেশে ৬৫ ভাগের বেশি ক্ষেত্রে মৃত্যুর জন্য দায়ী অসংক্রামক ব্যাধি। আর স্থূলতা অসংখ্য ব্যাধির জন্ম দেয়। এর মধ্যে প্রধান রোগগুলো হলো- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হাড়জোড়া ক্ষয় ও ব্যথা বা ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হওয়া ও নাক ডাকা, টোবোলিক সিন্ড্রোম, মানসিক অবসাদ ও নিরানন্দভাব, কোলন ও মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যানসারের মতো মারাত্মক ব্যাধি। স্থূলতার সঙ্গে কিডনি রোগের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, বাড়তি ওজন সরাসরি কিডনির ছাকনি নষ্ট করে দেয়। আবার পরোক্ষভাবে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মাধ্যমে কিডনির ক্ষতি হয়। পৃথিবীব্যাপী কিডনি রোগের হার অত্যন্ত ব্যাপক। কিডনি বিকলের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিধায় এ দেশের শতকরা ১০ জন রোগী এ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে না। অর্থাভাবে অকালে প্রাণ হারান সিংহভাগ রোগী। পক্ষান্তরে, একটু সচেতন হলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগের উপস্থিতি ও এর কারণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা করা।
মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন করা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। সে আইনে অল্প কয়েকজন নিকটজন ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে কিডনি নেয়া যেত না। আইনটি সংশোধন করে নতুন একটি আইন হয়েছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে কিডনি প্রতিস্থাপন বাড়বে। নতুন আইনে পুত্র, কন্যা, স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা, ভাই- বোন এবং রক্ত সম্পর্কিত আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা ও তাদের স্ত্রী বা স্বামী, চাচাতো ভাই বোন, ফুফাতো ভাই বেন, মামাতো ভাই বোন, খালাতো ভাই বোন এবং তাদের স্ত্রী বা স্বামী এবং সন্তানাদি কিডনি দান করতে পারবেন। এর বাইরে ব্রেইন ডেথ (জীবিত কিন্তু মস্তিষ্ক কাজ করছে না এমন) ঘোষিত ব্যক্তির দেহ থেকে তার আইনানুগ উত্তরাধিকারীদের ইচ্ছানুসারে অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনো মৃত ব্যক্তির দেহ কেউ দাবি না করলে তার দেহ থেকে প্রয়োজনীয় অঙ্গ নেয়া যাবে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, কিডনি রোগে তুলনামূলকভাবে পুরুষদের চেয়ে নারীরাই বেশি আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে কিডনি চিকিৎসার ক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে পড়া এবং অবহেলিত। চিকিৎসকরা জানান, বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগ একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ৬ লাখ নারী অকাল মৃত্যুবরণ করে কিডনি বিকল হয়ে। সারা বিশ্বে ১৪ শতাংশ নারী পক্ষান্তরে ১২ শতাংশ পুরুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত, অথচ চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারীরা অবহেলিত, তারা পুরুষশাসিত সমাজে বৈষম্যের শিকার।

কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশে ব্যাপকসংখ্যক কিডনি রোগীর তুলনায় ডায়ালাইসিস সেন্টার খুবই কম। মাত্র ৯৬টি। ১৮ হাজার রোগী এসব সেন্টারে সপ্তাহে ২ বার করে ডায়ালাইসিস পায়। বেসরকারি সেন্টারগুলোতে ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত ডায়ালাইসিস মূল্য রাখা হয় যা নিম্নবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্তের জন্য বহন করা অসম্ভব। তিনি বলেন, সাউথ এশিয়াতে মোট কিডনি রোগীর তুলনায় মাত্র ১৫ শতাংশ রোগী ডায়ালাইসিস এর সুযোগ পায় বাকি বিশালসংখ্যক রোগী অর্থাভাবে ডায়ালাইসিস নিতে পারে না। তাই বাংলাদেশে ডায়ালাইসিস খরচ কমাতে সরকারি বেসরকারি ভাবে বাস্তবিক উদ্যোগ নিতে হবে। নারীদের কিডনি চিকিৎসায় বৈষম্য দূরীকরণে স্বয়ং সরকারকে বিশেষ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, কিডনি প্রতিস্থাপন অথবা ডায়ালাইসিস কোনোটাই সহজ ও সুলভ না। ফলে বাংলাদেশে বছরে ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। দেশে ৮ লাখ মানুষের কিডনি বিকল।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সরকারি বেসরকারি নানা উদ্যোগে আজ বিশ্ব কিডনি দিবস পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘সুস্থ কিডনি সবল নারী, নারীর শিক্ষায় নারীর শক্তি, নারীর ক্ষমতায়নে সামাজিক মুক্তি।’

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *