বেড়েছে অর্থ উত্তোলন, কমেছে মূলধন

0

DSE-CSE220170704203709

শেয়ারবাজার থেকে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৬-১৭) অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ আগের অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে ২১৬ কোটি টাকা। তবে কমেছে মূলধন বৃদ্ধির পরিমাণ। আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শেয়ারবাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধির পরিমাণ কমেছে ৩৬২ কোটি টাকা।

সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে শেয়ারবাজার থেকে ১৩টি প্রতিষ্ঠান এক হাজার ৪৩২ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। এর মধ্যে রাইট শেয়ার ছেড়ে ৪টি প্রতিষ্ঠান এক হাজার ৪২ কোটি টাকা এবং প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ৯টি প্রতিষ্ঠান ৩৯০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে।

আগের অর্থবছরে (২০১৫-১৬) শেয়ারবাজার থেকে ১৩টি প্রতিষ্ঠান এক হাজার ১৭১ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এর মধ্যে রাইট শেয়ার ছেড়ে দুইটি প্রতিষ্ঠান ৩১৩ কোটি টাকা এবং প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ১১টি প্রতিষ্ঠান ৮৫৮ কোটি টাকা উত্তোলন করে।

এ হিসাবে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় শেয়ারাজার থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ বেড়েছে ২১৬ কোটি টাকা।

অপরদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের বোনাস শেয়ার দিয়ে ১১৮টি কোম্পানি মূলধন বৃদ্ধি করেছে এক হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। আগের অর্থবছর ২০১৫-১৬ তে ১০৯টি কোম্পানি বোনাস শেয়ার ছেড়ে মূলধন বৃদ্ধি করে দুই হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শেয়ারবাজার থেকে মূলধন বৃদ্ধির পরমাণ কমেছে ৩৬২ কোটি টাকা।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ বাড়া ভালো লক্ষণ। পুঁজিবাজারে যতো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে, বাজারের আকার ততো প্রসারিত হবে। দায়িত্বশীলদের উচিৎ ভালো ভালো কোম্পানি যাতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া।

অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, নতুন শিল্পায়নের জন্য কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসলে ভালো। এতে কোম্পানির সংখ্যা বাড়ে এবং বিনিয়োগকারীদের কোম্পানি চয়েজের পরিধি বাড়ে। চেষ্টা করা উচিত আইপিওর মাধ্যমে ভালো ভালো কোম্পানির পুঁজিবাজারে আনার। আবার সঠিকভাবে রাইট শেয়ারের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করা হলে সেটিও ভালো। এ ক্ষেত্রে মনিটরিং ব্যবস্থাটা জোরদার করতে হবে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশে ব্যাংক ঋণ নিলে তারা সহজে পরিশোধ করে না। যে কারণে অনেকে ব্যাংক ঋণ পছন্দ করে। তাদের ধারণা ঋণ শোধ করতে পারলে পারলাম, না পারলে না পারলাম। তবে ব্যাংক ঋণের বিষয়ে কঠোর হওয়া গেলে আশা করা যায় শেয়ারবাজার থেকে আইপির মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক আর এক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, যারা প্রিমিয়াম চাচ্ছে তাদের বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসতে হচ্ছে এবং বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসতে নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময় লাগছে। যে কারণে আইপিওতে আসা কোম্পানির সংখ্যা কম। এছাড়া অনেকের মনোভাব পুঁজিবাজারে না আসা, কারণ ব্যাংক ঋণ সহজে পাওয়া যাচ্ছে। আবার ব্যাংক ঋণের সুদের হার এখন অনেক কমে গেছে। এতে আইপিওতে না এসে ব্যাংক ঋণ নেয়ার আগ্রহ বেড়ে গেছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানগুলো যে পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করেছে তার সিংহভাগই এসেছে রাইট শেয়ার ছাড়ার মাধ্যমে। অর্থবছরটিতে রাইট শেয়ার ছেড়ে অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ আগের অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে ৭২৯ কোটি টাকা। তবে কমেছে আইপিও থেকে অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ। আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে আইপিও থেকে কম অর্থ উত্তোলন হয়েছে ৪৬৮ কোটি টাকা।

তবে ফেসভেলু অর্থের হিসাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আইপিও থেকেও অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আইপিও থেকে কোম্পানিগুলো যে অর্থ উত্তোলন করে তার বেশিরভাগই নেয়া হয় প্রিমিয়াম বাবদ।

অর্থবছরটিতে আইপিওর মাধ্যমে ১১টি প্রতিষ্ঠানের উত্তোলন করা ৮৫৮ কোটি টাকার মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়াম বাবদই নেয় ৫১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর ফেসভেলুতে উত্তোলন করা হয় ৩৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অপরদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আইপিওর মাধ্যমে ৯টি প্রতিষ্ঠানের উত্তোলন করা ৩৯০ কোটি টাকার মধ্যে এক টাকাও প্রিমিয়াম হিসাবে নেয়া হয়নি।

সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে আইপিও থেকে সব থেকে বেশি ৯৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালান্সড ফান্ড। দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্যাসিফিক ডেনিস উত্তোলন করেছে ৭৫ কোটি টাকা। ৭০ কোটি টাকা উত্তোলন করে এর পরের স্থানে রয়েছে সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড।

এছাড়া নূরানী ডাইং ৪৩ কোটি, এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ ফান্ড ২৫ কোটি, ফরচুন সু ২২ কোটি, ইয়াকিন পলিমার ২০ কোটি, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ২০ কোটি এবং বিবিএস ক্যাবল ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে।

অপরদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আইপিও থেকে সব চেয়ে বেশি অর্থ উত্তোলন করে একমি ল্যাবরেটরিজ। প্রতিষ্ঠানটির উত্তোলন করা ৪০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার মধ্যে প্রিমিয়াম বাবদই নেয়া হয় ৩৫৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

১২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে দ্বিতীয় স্থান দখল করে রিজেন্ট টেক্সটাইল। প্রতিষ্ঠানটি উত্তোলিত টাকার মধ্যে প্রিমিয়াম বাবদ নেয় ৭৫ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড উত্তোলন করে ৭০ কোটি টাকা।

এছাড়া সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ৩০ কোটি টাকা প্রিমিয়ামসহ ৬০ কোটি, ডরিন পাওয়ার ৩৮ কোটি টাকা প্রিমিয়ামসহ ৫৮ কোটি, ড্রাগন সোয়েটার ৪০ কোটি, এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড ২৫ কোটি, কেডিএস ১২ কোটি টাকা প্রিমিয়ামসহ ২৪ কোটি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স ১৭ কোটি ৭০ লাখ, এনভয় টেক্সটাইল ১৭ কোটি এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি ১২ কোটি টাকা উত্তোলন করে।

রাইট শেয়ার ছেড়ে অর্থ উত্তোলন সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাইট শেয়ার ছেড়ে সব থেকে বেশি ৫৬৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা উত্তোলন করেছে আইএফআইসি ব্যাংক। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইডিএলসি ১২৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা প্রিমিয়ামসহ উত্তোলন করেছে ২৫১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

এছাড়া ৫৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা প্রিমিয়ামসহ সাইফ পাওয়ারটেক ১৭৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম ৫২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা রাইট শেয়ার ছেড়ে উত্তোলন করেছে।

আগের অর্থবছর ২০১৫-১৬ তে রাইট শেয়ার ছাড়া দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জিপিএইচ ইস্পাত ২৬১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে। এর মধ্যে প্রিমিয়াম বাবদ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নেয়া হয় ৭৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অপর প্রতিষ্ঠান সামিট এলায়েন্স পোর্ট ১৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৫১ কোটি ৫২ লাখ টাকা উত্তোলন করে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *