‘মা’ পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর শব্দ

দিনবদল নিউজ: মা জননী নাইরে যাহার, ত্রিভুবনে তাহার কেহ নাইরে, মায়ের মতো আপন কেহ নাই। মা কথাটি ছোট্ট অতি/ কিন্তু জেন ভাই/ তাহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।’ মাকে নিয়ে লেখা এরকম অনেক গানই আছে।
‘মা’ পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর শব্দ। ভালোবাসা আর নিরাপদ আশ্রয়ের শ্রেষ্ঠ জায়গা। মা শাশ্বত, চিরন্তন। আজ ১৩ মে বিশ্ব মা দিবস। সুসন্তানের জন্য মাকে নিয়ে দিবসটি হয়তো উৎসবে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে কোন কোন মা বৃদ্ধাশ্রমে শুয়ে বসে একাকিত্ব যন্ত্রণায় চোখের পানি ফেলেছেন প্রিয় সন্তানের মুখটি একটিবার দেখার জন্য। সন্তানের জন্য গর্ভধারিণীকে ভালোবাসার সন্তানের জন্য আসলে কোন বিশেষ দিন থাকে না। তার পরও আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তত একটি দিন মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশ এবং নানাভাবে নিজের মায়ের মহিমা উপস্থাপনের সুযোগ আসে এই মা দিবসে।
নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব, দেশ-বিদেশ কোথাও কারও সঙ্গে ‘মা’-এর কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কোনো বিভেদ নেই। নেই তারতম্য। সবাই সমান, সবই সুন্দর। নারী-পুরুষ ভেদাভেদের বাইরে মা একটি নিজস্ব সত্তা, একটি সত্য। আর তাই মায়ের কাছে ছেলে-মেয়ে সব সন্তানই সমান, মা সর্বজনীন। মা ভালোবাসা। একটি পরম মমতা। মা বুকের কাছে জাপটে ধরে আগলে রাখা একটি ছায়া। কিন্তু তাই বলে মা, মাতৃত্বই নারীত্বের ব্যাখ্যা নয়। ঠিক একইভাবে নারীত্ব মানেই মাতৃত্ব নয়। মা, মাতৃত্ব নারীত্বের একটি শক্তি, একটি পরিচয়, একটি স্বকীয়তা। মা একটি অনুভূতি, একটি ভক্তি।
‘মা’-এর সর্বজনীনতা : ‘মাতৃত্ব’ একটি বোধ। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে নগর সংস্কৃতি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বসর্বত্র মা একটি মহিমা, একজন আরাধনা। সনাতন ধর্মের পূর্জা-অর্চনায় মা দখল করে আছেন একটি বিশেষ স্থান। ইসলাম ধর্মেও বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। খ্রিস্টান ধর্মও মাতৃবন্দনার বাইরে নয়। যিশুর আগমনের সঙ্গেই জড়িত মা মেরির জীবনকাহিনী। পিতার জন্মস্থানকে দেশের বাড়ি বলে পরিচয় দিলেও পুরো জন্মভূমি কিন্তু মাতৃভূমি বাংলাদেশ। মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক কোনো রেজিস্ট্রেশন দিয়ে বেঁধে দেওয়া যায় না। একইভাবে এই সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্যও কোনো আইনের বাধ্যবাধকতা নেই। এখানেই মায়ের সার্থকতা, সর্বজনীনতা।
কষ্টার্জিত তৃপ্তি :মা হওয়াও কষ্ট, না হওয়াও কষ্ট। মা হলেও কষ্ট, না হলেও কষ্ট। মা হতে চাইলেও কষ্ট, না চাইলেও কষ্ট। মায়ের সঙ্গে যদি এত কষ্টই থাকে তবে কেন বলা হয়_ ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই, ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।’ তবে কি কষ্টার্জিত তৃপ্তির মধ্যেই মায়ের আনন্দ? ছোট্ট একটা বীজ থেকে চারাগাছ। সেই চারাগাছে সময়ে অসময়ে যত্ন-আত্তি, পানি, সার কত কিছু! অতঃপর বীজ থেকে বড় গাছ। কী মায়া! ঠিক একইভাবে একই মায়ায় একটি শরীরের ভেতর অন্য একটি শরীরের স্পর্শ, বেড়ে ওঠা। প্রবল ভালোবাসা আর বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ৯টি মাস তিল তিল যত্নে সন্তান ধারণ। অতঃপর লালনপালন। এই অনুভূতি প্রকাশের নয়। এই আবেগ লেখনীর নয়। বোধের কাছেও এ এক বিস্ময়।