মিরপুর চিড়িয়াখানায় প্রচন্ড ভীড়

0
mir

mir

ঈদের নতুন পোশাক পরে সাড়ে তিন বছরের ময়মুন বাবা জসীমউদ্দীনের সঙ্গে এসেছে মিরপুরে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায়। প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে বাবার কোলে বসে সোজা আসে বাঘের খাঁচার সামনে। বিরাট বেঙ্গল টাইগারকে দেখে চিৎকার শুরু করে দেয় ময়মুন, ‘বাবা, খাঁচায় যাব, বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করব।’

মিরপুরের বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার সামনে ব্যাপক ভিড়। মঙ্গলবার মিরপুরের পার্ক থেকে তোলা ছবিটি।

শুধু ময়মুন একা নয়, ডোরাকাটা হলদে বাঘটি যখন নিজ আঙিনায় ঘুরছিল, তখন শতাধিক দর্শনার্থীর উচ্ছ্বাস-উল্লাসের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। অনেকেই মুঠোফোনে সেলফি তোলার চেষ্টা করছিলেন, কেউ ক্যামেরা দিয়ে বাঘটির ছবি তুলে রাখার চেষ্টা করছিলেন। অনেকে আবার বাঘের মতো ‘হালুম হালুম’ গর্জন করছিলেন। বাঘটি অবশ্য একবারের জন্য মুখ না তোলায় অনেক দর্শক হতাশ হয়ে পড়েন।

কেবল বাঘের খাঁচার সামনে নয়, এমন দৃশ্য আজ বিশাল আয়তনের চিড়িয়াখানায় সব জায়গায়—প্রতিটি প্রাণী-পাখির খাঁচার সামনেই। কারণ ঈদ আনন্দ। এই আনন্দ উপভোগের জন্য দর্শনার্থীর প্রচণ্ড ভিড় ছিল মিরপুরে অবস্থিত এই চিড়িয়াখানায়। তাঁদের ভিড়ের মাত্রা এতটাই বেশি যে সড়ক থেকে চিড়িয়াখানার প্রবেশপথ পর্যন্ত যেতে চলে যায় এক ঘণ্টার বেশি সময়।

জিরাফের খাঁচার সামনে উৎসুক দর্শনার্থীরা। চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক লাখের বেশির দর্শনার্থী এসেছেন। দিন শেষে এই সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

মো: কামাল এসেছেন তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে। চিড়িয়াখানা আসার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, কাল বুধবার অফিস। হাতে সময় নেই। ঢাকার বাইরেও যাওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রজাতির সুন্দর ও বৈচিত্র্যময় বন্য প্রাণী রয়েছে। এগুলো দেখার আনন্দই অন্য রকম।

গত এক মাসের মধ্যে এখানে দুটি রেসাস বানর, একটি জলহস্তী, দুটি জিরাফ ও একটি ইম্পালার বাচ্চা জন্মেছে। দর্শনার্থীদের আগ্রহ এসব প্রাণীর দিকেই বেশি ছিল।

ছোট-বড় বেশ কয়েকটি জলহস্তী একসঙ্গে ওদের বেষ্টনীতে বসবাস করে। কিছুক্ষণ পর কাদা-পানি ছেড়ে বিরাট আকৃতির জলহস্তীগুলো উঠে আসছিল শুকনো মাটিতে। গর্জন করছিল বেশ জোরে। দর্শনার্থীদের কাছে এ যেন ছিল পরম পাওয়া। গর্জন শুনে বেশ কয়েকজন বলাবলি করছিলেন, ‘ওরে বাবা, জলহস্তীর এত মাংস! ওরা খায় কী?’ বেষ্টনীর সামনে থাকা সাইনবোর্ডে লেখা, ‘জলহস্তীর খাবার ঘাস, ভুট্টা, ভুসি।’ এটি পড়ে অনেকে আবার বিস্মিতও হন।

জলহস্তীদের তত্ত্বাবধায়ক নূর আলম বলেন, ঈদের দিনও ভিড় ছিল। আজকে ভিড় আরও বেশি। এ সপ্তাহ এমনই যাবে।

park

দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও প্রাণীদের পর্যবেক্ষণের জন্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি বিশেষ দল গঠন করেছে। বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রধান সম্পত্তি ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস দিনবদল নিউজ টোয়েন্ট্রি ফোরকে বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকের জন্য ১২টি দল কাজ করছে। প্রতিটি দলে সাতজন রয়েছেন।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত দর্শনার্থীর কারণে প্রাণীদের অনেক সময় মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তা থেকে আবার ওদের শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি সার্জন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে একটি দল প্রাণীদের নজরদারি করছে বলে জানান তিনি।

চিড়িয়াখানার কিউরেটর নজরুল ইসলাম দিনবদল নিউজকে বলেন, ঈদের দিন পৌনে এক লাখ দর্শনার্থী এসেছেন। আজকের এই ভিড় বছরের এ বছরের অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী শুক্র ও শনিবারসহ প্রতিদিনই দর্শনার্থীর ভিড় থাকবে বলে আশা করা যায়।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *