যাদের জন্য এতো শ্রম, তারা যেন মাথা গুজার ব্যবস্থাটুকু করে দেয়’

0
received_405576763500564

নজরুল আহমেদ ও মনোয়ারা বেগম নোয়াখালী বেগমগঞ্জ থানাধীন ছয়ানী বাজারে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন দীর্ঘদিন থেকে। থাকেন বাজারের পাশে একটি ঝুপড়ি ঘরে। ঘরের টিনের ছালায় ফুটো থাকায় বর্ষাকালে ভিজে বৃষ্টির পানিতে, গরমে ভিজে শরীরের ঘামে! তাদের জীবনের এমন দুঃখ-দুর্দশার নানা দিক উঠে এসেছে সাক্ষাতকারটিতে। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন ‘দিনবদল নিউজে’র স্টাফ রিপোর্টার মাহমুদ ফয়সাল। সাক্ষাতকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো ‘দিনবদল নিউজে’র পাঠকদের জন্য।

ফয়সাল: কেমন আছেন?
নজরুল আহমেদ: আল্লাহ ভালো রাখছে।

ফয়সাল: আপনার ছেলেমেয়ে কয়জন? কে কি করে?
নজরুল আহমদ: বাবা, আমার নিজের কোন সন্তান নাই, একটা পালক সন্তান আছে, সে চন্দ্রগঞ্জ সিএনজি চালায়। সেখানে বাসা ভাড়া করে থাকে।

ফয়সাল: আপনাদের সন্তান কি আপনাদের খোজ খবর নেয়?
নজরুল আহমেদ: ছেলের তো বড় সংসার (৫ সন্তান), সে তো সিএনজি চালায়,সারাদিন ঝামেলায় থাকে। তাই আমরাই মাঝে মাঝে তাদের দেখে আসি। তারাও সেখানে বাসা ভাড়া করে থাকে।

ফয়সাল : আপনাদের মূল বাড়ি কোথায়?
নজরুল আহমেদ: তোরাবগঞ্জ থেকে ১০ কিমি দক্ষিণে রব বাজার।

ফয়সাল: ছয়ানী বাজারে এখানে কিভাবে এসেছেন?
নজরুল আহমেদ: একবার বন্যার সময়ে এখানে এসে ততকালীন জামাল চেয়ারম্যানকে একটু আশ্রয়ের জন্য অনুরোধ করেছিলাম, প্রথমে তিনি না করে দেন, পরে আবার ডেকে থাকার অনুমিত দেন। প্রথম কয়েক বছর আমরা বোর্ড অফিসে (ইউনিয়ন পরিষদ) ছিলাম। সেটা যখন ভেঙে নতুন করে তৈরি করে, তখন  সেখান থেকে আমাদের বের করে দেয়, তারপর ভূমি অফিসে একটা জরাজীর্ণ ঘরে ছিলাম, সেখান থেকেও একই কারণে কয়েক বছর পর বের হয়ে যেতে হয়। এখন বাবা আছি এই জুপড়ি ঘরে।

ফয়সাল: এখানে থাকতে কোন অসুবিধা হয়
উত্তর: (মলিন মুখে) আমাদের জীবনে কষ্টের কোন শেষ নেই বাবা, সারাদিন কাজ করে রাতের বেলায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারি নাহ। (ফুটো টিনের দিকে ইশারা করে) একটু বৃষ্টি হলে শেষ, পুরো ঘর পানিতে ভিজে যায়। গরমের সময় ঘরে বেশিক্ষণ থাকতে পারি নাহ, টাকার কারনে প্যান লাগাতে পারি নাহ। শীত কালে খুবই কষ্ট আর যন্ত্রণায় দিন কেটে যায়। এই ছোট জুপড়ি ঘরটার ভাড়া এক হাজার টাকা।

ফয়সাল: তো এখন আপনার সংসার চালান কিভাবে? আয় রোজগার কেমন?
নজরুল আহমেদ: সাপ্তাহিক হাটের দিনে কেউ ৩ টাকা, ৪ টাকা, ৫ টাকা করে দেয়, সেটা তুলেই কোনমতে চলি।

ফয়সাল: সরকারি ভাবে বা ইউনিয়ন পরিষদ বা বাজার কমিটি থেকে কোন বেতন ভাতা পান কিনা?
নজরুল আহমেদ: আগে জামাল চেয়ারম্যান থাকতে ১২০০ টাকা করে মাসে দিতো, মাঝে মহিউদ্দিন চেয়ারম্যান ১৫০০ টাকা করে দিতো। বর্তমান চেয়ারম্যান আসার পর থেকেই টাকা দেয় বন্ধ করে দিয়েছে।

ফয়সাল: আপনারা বিষয়টা চেয়ারম্যান বা বাজার কমিটি কে অবহিত করেছেন?
নজরুল আহমেদ: আমরা বারবার চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছি, অনুরোধ করেছি অন্তত ৫০০ টা টাকা করে হলেও যেন আমাদের মাসে দেয়। কিন্তু তিনি আমাদের ফিরিয়ে দেন। ভালো না লাগলে চলে যেতে বলেছে! কিন্তু বাবা আমরা যাবো কোথায়? যাওয়ার কোন জায়গা নাই তাই এতো অবহেলার পরও এখানে পড়ে আছি।

ফয়সাল: আপনার কোন পৈতৃক সম্পত্তি বা ভিটেমাটি নেই?
নজরুল আহমেদ: তোরাবগঞ্জ গত চার পাঁচ বছর আগে কিস্তি নিয়ে ছোট্ট এক টুকরা জমি কিনেছি ঘর দেওয়ার জন্য। (কান্নামাখা কন্ঠ) জীবনের শেষ সময়টা যেন সেখানে কাটাতে পারি, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই জমির কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে পারলাম না। ৪০ হাজার টাকার জন্য সেই জমির এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রি করাতেও পারলাম না।  জানি না আল্লাহ সে জমিতে ঘর তুলে থাকার তৌফিক দিবে কিনা।

ফয়সাল: আপনাদের শারীরিক অবস্থা তো ভালো নয়, ডাক্তারের কাছে যান?
নজরুল আহমেদ: নারে বাবা (দীর্ঘশ্বাস ফেলে), খেতে পারি নাহ, ডাক্তারের কাছে যাবো কখন? রাতে হলে কষ্টের ঝালায়, শরীরের ব্যথায় ঘুমাতে পারি না। দুইজনই ঠিক মতো কানেও শুনি না। কয়েক দিন পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়ি। বয়সের বারে উঠতে বসতেও কষ্ট হয়। আল্লাহর রহমতে এখনো বেঁচে আছি।

শেষ প্রশ্ন: কারো কাছে কোন চাওয়া পাওয়া আছে কি? আমার এখন একটাই আশা ভরসা, যাদের জন্য এতোগুলো বছর এতো কষ্ট করেছি, তারা যেন এই দুনিয়াতে মাথা গুজার ব্যবস্থাটুকু করে দেয়, এটা আমার এই এলাকার এই বাজারের সবার কাছে অনুরোধ।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *