রাজনৈতিক বইয়ের একমাত্র গ্রন্থাগার, যুবজাগরণ লাইব্রেরি

0
SHAMRAT copy

SHAMRAT copy

নগর প্রতিবেদক: একজন আলোকিত মানুষের আত্মা হয় প্রসারিত, উন্মোচিত। তিনি বিশ্ব সম্পর্কে সচেতন, জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত তাঁর আত্মা। রাষ্ট্র, সমাজ, গণতন্ত্র, ধর্ম, সংস্কৃতি, সভ্যতা- সকল চেতনায় সমৃদ্ধ তাঁর হৃদয়। তিনি শ্বাশ্বত আলার পথের যাত্রী। তাঁর এই পথের দিক নির্দেশক গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগার গড়ে তোলে আলোকিত মানুষ। গ্রন্থাগার হচ্ছে পন্ডিতের পান্ডিত্য অর্জনের তীর্থস্থান, জ্ঞান সাধকদের গবেষণাগার, ধার্মিকদের ধার্মিকতার দূত, লেখক-কবি-সাহিত্যিকের জনক, সমাজের প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকবর্তিকা, অন্ধজনের চোখের আলা এবং নির্মল আত্মা নিয়ে সষ্ট্রার কাছে যাওয়ার বাহন। একজন আলোকিত মানুষ পূর্ণাঙ্গ মানুষ। তাঁকে পূর্ণ করে তোলে গ্রন্থাগার। আর আলোকিত মানুষেরা পূর্ন করে তোলেন সমাজকে। তাই গ্রন্থাগার ছাড়া আমাদের সমাজ অসম্পূর্ন।

শিক্ষিত জাতি গঠনে শিক্ষিত মায়ের ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানভিত্তিক-আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় শিক্ষিত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরও অংশগ্রহণও তেমনি জরুরি বলে মনে করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। মানুষ যত শিক্ষিত ও সচেতন রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার জন্য পড়াশোনার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তাঁর নিজের নেতৃত্বাধীন ইউনিটের নেতাকর্মীদের জন্য সেই সুযোগ তৈরির প্রয়াসে আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীর উৎসাহ ও প্রেরণায় রাজধানীর কাকরাইলে সম্রাট প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘যুবজাগরণ লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র’ নামে অভিনব এক গ্রন্থাগার। এখানে স্থান পেয়েছে সমগ্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শন এবং আগামীর নেতা সজীব ওয়াজেদ জয়ের উন্নয়ন ভাবনার ওপর ভিত্তি করে লেখা বিপুল সংখ্যক বই।যুবলীগের নেতাকর্মীদের কথা ভেবে চালু হলেও এই গ্রন্থাগারের দুয়ার খোলা সর্বস্তরের পাঠকের জন্য। বাংলাদেশে অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের উদ্যোগে এমন গ্রন্থাগার চালু আছে বলে শোনা যায়নি। সে বিবেচনায় যুবজাগরণ লাইব্রেরিকে দেশের একমাত্র রাজনৈতিক গ্রন্থাগারও বলা চলে!

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই গ্রন্থাগার উদ্বোধন করেন। তিনি এ উদ্যোগের প্রশংসা করে সেদিন বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ যা করতে পারেনি, যুবলীগ তা করে দেখিয়েছে। যুবলীগের কাছ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। যুবলীগের এই উদ্যোগ রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানবে।’ তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ইসমাইল হোসেন সম্রাটকে ধন্যবাদ জানান।

রাজধানীর কাকরাইল মোড় থেকে রাজস্ব ভবনের দিকে চলে যাওয়ার রাস্তা ধরে একটু এগোলেই রাজমণি সিনেমা হলের ঠিক উল্টোপাশে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টার নামের বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের নিচতলায় সুপিরসর এই গ্রন্থাগারের অবস্থান। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাচের দেয়ালের ওপাশে দৃষ্টিনন্দন কাঠের ডিসপ্লেতে সাজিয়ে রাখা সারি সারি বইয়ের দিকে চোখ পড়লে কৌতূহলী হয়ে উঠবেন যে কেউ।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গ্রন্থাগারজুড়ে পরিকল্পিত আলোকসজ্জা। অন্যান্য লাইব্রেরির মতো গাদাগাদি করে নয়, কাঠের ঝকঝকে লম্বা টানা ডিসপ্লেতে তৈজসপত্রের মতো যত্ন করে সাজিয়ে রাখা একেকটি বই। প্রতিটি বইয়ের প্রচ্ছদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি। লাইব্রেরির একপাশে কাচের টেবিল ঘিরে ক্যাফে স্টাইলের চেয়ার। অমন ভরদুপুরেও সেখানে বইয়ের পাতায় মগ্ন দু’জন পাঠকেরও দেখা মিলল।

ঢাকার রাজপথের অকুতোভয় মুজিবসেনা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবেও সুপরিচিত।

বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায় ‘এই লাইব্রেরির মূল কারিগর যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। তার নির্দেশেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শন বিষয়ে নেতাকর্মীদের অবগত করার লক্ষ্যেই এই লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যুব সমাজে গঠনমূলক আদর্শের বিস্তার ঘটানোর অভিপ্রায়ে ২০১০ সালে ওমর ফারুক চৌধুরী ‘যুব গবেষণা কেন্দ্র’ নামে যুবলীগের সাংগঠনিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। ২০১২ সালে সংগঠনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তিনি গবেষণার কাজ আরও গতিশীল করে তোলেন। তার সম্পাদনা ও তত্ত্বাবধানে যুব গবেষণা কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের রাজনৈতিক দর্শন, আদর্শ এবং লক্ষ্য নিয়ে সাড়ে তিন শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বই তুমুল পাঠকপ্রিয়তাও পেয়েছে। বইগুলো পড়ে যুবলীগের নেতাকর্মী তথা সর্বস্তরের নাগরিক যেন বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞানার্জনের সুযোগ পায়; সেজন্যই এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন তিনি। ভবিষ্যতে দেশের প্রত্যেক জেলায় এমন লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এসব বইয়ের প্রচার ও প্রসার বাড়াতে আরও বহু পরিকল্পনা রয়েছে যুবলীগ চেয়ারম্যানের। কেউ যদি নিজ উদ্যোগে যুবজাগরণ লাইব্রেরির শাখা খুলতে চান, প্রয়োজনে তাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার চিন্তাও রয়েছে বলে জানান ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।

ঢাকা মহানগর যুবলীগের আলোচিত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট বলেন, ‘যুবলীগ চেয়ারম্যান বিশ্বাস করেন, রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ বটে তবে রাজনীতিকদের একমাত্র কাজ রাজপথে নয়। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রয়োজনীয়তাও কম নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে নিতে রাজপথে সাহসী ভূমিকা পালনের পাশাপাশি জ্ঞান ও সৃজনশীলতার উৎকর্ষেও নিজেদের সময়োপযোগী করে তুলতে হবে যুবলীগের নেতাকর্মীদের। এজন্য নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসের ভিত্তিমূলও জানতে হবে গভীরভাবে। বই না পড়ে তা কখনোই সম্ভব নয়। তাই নেতাকর্মীদের বইমুখী করার একের পর এক উদ্যাগ নিচ্ছেন চেয়ারম্যান। অমর একুশে বইমেলা থেকে শুরু করে দলীয় সব সভা-সম্মেলনেও যুব জাগরণের বইয়ের স্টল বসানো হয় এবং নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেখান থেকে বইপত্র সংগ্রহ করেন।’ বই পড়ার এই সংস্কৃতি যতো বিস্তার লাভ করবে এ দেশের ইতিহাসকে বিকৃত ধারাবাহিক প্রয়াস ততোই কমে আসবে বলে বিশ্বাস করেন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।

ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যানের পরিকল্পনা এবং উদ্যোগের কারণে আওয়ামী রাজনীতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গুণগত উৎকর্ষ লাভ করছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নে সতীর্থ সম্রাটের তৎপরতারও প্রশংসা করেন তিনি।

গ্রন্থাগার আলোকিত করে তোলে মানুষকে। গ্রন্থাগার মানুষকে তার আত্মিক অন্বেষনের পথ নির্দেশ করে যা ক্ষুধা-তৃষ্ণা; শ্বাস-প্রশ্বাসের মতই একান্ত জরুরী। আমাদের সমাজকে শিক্ষিত করে তুলতে হলে, শিক্ষিত রাষ্ট্র পেতে হলে আমাদের চাই আলোকিত মানুষ। আর আলোকিত মানুষ পেতে চাই গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগার মানুষের জ্ঞানের সকল দুয়ার উন্মোচন করে মানবাত্মা করে তোলে প্রজ্জ্বলিত। গ্রন্থাগার আমাদের চারপার্শ্বের রহস্যময় বিশ্বের দুয়ার খুলে দেয়। সমাজের মস্তিষ্ক ও জ্ঞানাধার হল গ্রন্থাগার।

সপ্তাহের শুক্রবার বাদে বাকি ছয়দিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত যুবজাগরণ লাইব্রেরি। বসে পড়ার পাশাপাশি পছন্দের বই কেনার সুযোগও রয়েছে এখানে।

তাই দীপ্ত, প্রজ্জলিত সমাজ পাবার লক্ষে সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌছে দিতে হবে এই শ্লোগান-
“আলোকিত মানুষ চাই,
আলোকিত মানুষ তৈরীর জন্য গ্রন্থাগার চাই।”

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *