রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে মিয়ানমারকে জোর তাগিদ

0
72

72

রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে মিয়ানমারকে জোর তাগিদ দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। আইসল্যান্ডের কূটনীতিক ইনার গুনারসনের সভাপতিত্বে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সামাজিক, মানবিক ও সাংস্কৃতিকবিষয়ক ফোরাম থার্ড কমিটির ৪৭তম বৈঠকে আলোচনা শেষে সদস্য দেশগুলোর ভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।

প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, নাগরিকত্ব প্রদান, অনতিবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ করাসহ মিয়ানমারের প্রতি ১৬টি সুনির্দিষ্ট আহ্বান জানানো হয়েছে। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে প্রস্তাবটি এনেছিল মিসর। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৩৫টি। চীন, রাশিয়াসহ মোট ১০টি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। অন্যদিকে ভারত, নেপাল, ভুটানসহ মোট ২৬টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গত দুই মাসে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রস্তাব আনার চেষ্টা চালানো হলেও চীন ও রাশিয়ার মতো ‘ভেটো’ ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের কারণে তা সম্ভব হয়নি। গতকাল ওই দুটি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিলেও ব্যাপক সমর্থন নিয়ে তা গৃহীত হয়েছে। এর ফলে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রবল বৈশ্বিক চাপে পড়ল মিয়ানমার।

জাতিসংঘে সৌদি আরবের প্রতিনিধি গতকাল থার্ড কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে।

তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করা হচ্ছে। তাদের সাগরে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। মিয়ানমারে বিশেষ করে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের দুর্দশায় ওআইসি গভীর উদ্বিগ্ন।
মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি ওই প্রস্তাবকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপূর্ণ এবং তাঁর দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি প্রস্তাবটিকে মিয়ানমারের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মানবাধিকারের নামে হস্তক্ষেপ তাঁরা মেনে নেবেন না। ওই প্রস্তাবের মাধ্যমে মিয়ানমারের জনগণকেও অপমান করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংকটের জন্য সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী আরসাকে দায়ী করে তিনি বলেন, আরসা নেতা আতাউল্লাহ মিয়ানমারের কেউ নন। তাঁর জন্ম পাকিস্তানে, বেড়ে উঠেছেন সৌদি আরবে।

মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি দাবি করেন, রাখাইন রাজ্যের সংকট ধর্মীয় নয়। এটি ব্রিটিশ উপনিবেশের সংকট। ব্রিটিশরাই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে এনেছিল বলে তিনি জানান। তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সদস্যদের এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানান।

ইরানের প্রতিনিধি বলেন, রোহিঙ্গাদের দুর্দশা, বিতাড়ন সারা বিশ্বেই ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। নিজ দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেওয়ার মধ্য দিয়ে এ সংকটের সমাধান হবে না। বাস্তুচ্যুত সব রোহিঙ্গার নিজ ভূখণ্ডে সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ প্রস্তাবের সহপৃষ্ঠপোষক। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়ংকর নির্যাতনে যুক্তরাষ্ট্র নীরব থাকতে পারে না।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *