শনাক্ত ও মৃত্যুতে শীর্ষে ঢাকা

0
images - 2020-04-17T175816.499

এ বি সাইদঃ গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আরও ৬৩৬ জন নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭৭০। একই সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৮ জন। ফলে এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ২১৪। সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন ৩১৩ জন। সবমিলে সুস্থ হলেন ২ হাজার ৪১৪ জন। শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। ব্রিফিংয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।

এদিকে ঢাকায় করোনাভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। শনাক্ত ও মৃত্যুতে শীর্ষে ঢাকা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ১৭৮ স্থানে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হয়েছেন। ওইসব এলাকা পুলিশের সহায়তায় লকডাউন করা হয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসে যত রোগী শনাক্ত হয়েছেন এর মধ্যে প্রায় ৫৯ শতাংশই এ মেগাসিটিতে। ঢাকা মহানগরীতে মৃতের সংখ্যা একশ’ ছাড়িয়েছে। ঢাকার পরে সবচেয়ে বেশি রোগী আছেন নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মুন্সীগঞ্জে। দেশের মোট রোগীর ৮২ শতাংশই ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায়। দেশের সব জেলাতেই বর্তমানে করোনাভাইরাসের রোগী আছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল অংশই ঢাকা শহর ঘিরে আবর্তিত হয়। কাজের সন্ধানসহ নানা অজুহাতে ঢাকার মানুষ তুলনামূলক বেশি ঘরের বাইরে এসেছেন। তাদের অধিকাংশই পরস্পরের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করেননি। জনসমাগম এড়িয়ে চলেননি। এছাড়া বিদেশ ফেরত লোকজনের অবস্থানও বেশি এ শহরে। তাদের মাধ্যমে রোগটি ছড়ানো শুরু হয়। গত দুই মাসে তা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে।

শনিবারের ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ৩৫টি ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাসের রোগীদের নমুনা পরীক্ষা চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫ হাজার ২৪৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আগের কিছু মিলিয়ে পরীক্ষা করা হয় ৫ হাজার ৪৬৫টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে নমুনা পরীক্ষা করা হল ১ লাখ ১৬ হাজার ৯১৯টি। শুক্রবারে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সেদিন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সাতজনের মৃত্যু হয়। আর করোনায় আক্রান্ত নিশ্চিত করা হয় ৭০৯ জন। সেই হিসাবে পরের ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু কমেছে নতুন শনাক্ত রোগী। শনিবারের ব্রিফিংয়ে বলা হয়, সর্বশেষ মৃত রোগীর সবাই পুরুষ। তাদের মধ্যে ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে আছে দু’জন। এছাড়া ষাটোর্ধ্ব দু’জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন, চল্লিশোর্ধ্ব দু’জন ও ত্রিশোর্ধ্ব একজন।

তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯৬ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। বর্তমানে ২ হাজার ১৭ জন আইসোলেশনে আছেন। আর ২৪ ঘণ্টায় ৫৩ জন আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ১ হাজার ৪৩ জন। অপরদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ১ হাজার ৭৫৫ জন। আর এখন পর্য কোয়ারেন্টিনে আছেন ২ লাখ ৮ হাজার ৪০৫ জন। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ৭১৮ জন। ১ লাখ ৭১ হাজার ২২২ জন কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়া পেয়েছেন। ফলে বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৩৭ হাজার ১৮৩ জন।

ভয়ংকর রূপে ঢাকায় : রাজধানী ঢাকায় দিন দিন ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে করোনাভাইরাস। দেশের মোট রোগীর প্রায় ৫৯ শতাংশই বর্তমানে এ শহরের। আর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী শহরটির ১৭৮ স্থানে পৌঁছে গেছে ভাইরাস। প্রাণহানির সংখ্যা একশ’ ছাড়ানোয় মৃতের দিক থেকেও শীর্ষে রাজধানী ঢাকা। পাশাপাশি এ বিভাগের অন্য জেলাগুলোতেও বাড়ছে রোগী।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট আক্রান্তের মধ্যে মানুষের মধ্যে রাজধানীর ১৭৮ স্থানে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ১৬২ জন চিহ্নিত হয়েছে। মোট রোগীর মধ্যে এটার হার ৫৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। রাজধানী বাদে ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় করোনা রোগী চিহ্নিত হয়েছে ২ হাজার ৫১৫ জন। শতকরায় এটা ২৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

শনিবারের ব্রিফিংয়ে অবশ্য বলা হয়, ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ১৭৭। ঢাকার পরে বেশি রোগী নারায়ণগঞ্জে ১ হাজার ১৩৬ নজন। এছাড়া গাজীপুরে ৩৩০, মুন্সীগঞ্জে ২১০, ঢাকা জেলায় ২০৩ কিশোরগঞ্জে ২০২, নরসিংদীতে ১৭১জন। এরপরই সবচেয়ে বেশি রোগী চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম শহর ও জেলা মিলে রোগী আছেন ১৫৯ জন। আর বিভাগ হিসেবেও চট্টগ্রাম রোগীর সংখ্যায় (৫৭৬ জন) দ্বিতীয় স্থানে আছে। এরপর রোগী আছে সিলেটে ১৬৩, রংপুরে ২৬৩, খুলনায় ২১১, ময়মনসিংহে ৪০০, বরিশালে ১৩০ এবং রাজশাহীতে ১৫৩ জন। শতাংশের হিসাবে ঢাকা বিভাগের ২৩ দশমিক ৭৯, চট্টগ্রামে ৫ দশমিক ৪৫, সিলেটে ১ দশমিক ৫৪ , রংপুরে ২ দশমিক ৪৯, খুলনায় ২, ময়মনসিংহে ৩ দশমিক ৭৮, বরিশালে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং রাজশাহীতে ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে।

রাজধানীর লকডাউনকৃত ১৭৮ স্থান : রাজধানীর ১৭৮ স্থানে করোনাভাইরাস চিহ্নিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকা ও বাড়ি বর্তমানে লকডাউন আছে। এলাকা ভেদে কোথাও একজন পাওয়া গেছে আবার সর্বোচ্চ ২০০ জনও আছেন। এগুলো হচ্ছে- আবদুল্লাহপুর ২, আফতাবনগর ১, আদাবর ২০, আগারগাঁও ৪৭, আমিনবাজার ২, আমলাপাড়া ২, আরামবাগ ৭, আরমানিটোলা ৩, আসাদগেট ১, আশুলিয়া ২, আশকোনা ১, আজিমপুর ২৫, বাবুবাজার ৭৮, বাড্ডা ৫৫, বেইলি রোড ১৩, বকশিবাজার ৫, বারিধারা ৮, বনশ্রী ৬, বনানী ২৫, বাংলামোটর ৬, বংশাল ৭১, বানিয়ানগর ১, বাসাবো ৪৭, বিজয়নগর ১, বসুন্ধরা ১৯, বেগুনবাড়ি ৪, বেগমবাজার ১, বেড়িবাঁধ ১, বসিলা ১, বুয়েট এলাকা ১, ক্যান্টনমেন্ট ১০, সেন্ট্রাল রোড ২, চানখাঁরপুল ৩৭, চকবাজার ৪৯, দনিয়ায় ৯ জন। এছাড়া দক্ষিণখান ১, ঢাকেশ্বরী ১, ডেমরা ১৮, ধানমণ্ডি ৫৭, ধলপুর ৯, দোলাইরপাড় ৬, ধোলাইখাল ২, দয়াগঞ্জ ৩, এলিফ্যান্ট রোড ১২, ইস্কাটন ২৪, ফরিদাবাগ ১, ফকিরাপুল ৩, ফরাশগঞ্জ ২, ফার্মগেট ৩২, গেণ্ডারিয়া ৫৮, গোলারটেক ১, গোড়ান ১৩, গোলাপবাগ ৭, গণকটুলি ৪, গোপীবাগ ২৯, গ্রিনরোড ২২, গুলিস্তান ১০, গুলশান ৫৪, হাতিরঝিল ৬, হাতিরপুল ৯, হাজারীবাগে ৪০ জন। ইব্রাহিমপুর ৬, ইসলামবাগ ৩, ইসলামপুর ৬, জেলগেট ২, যাত্রাবাড়ী ১৬৯, জিগাতলা ৯, জুরাইন ৩৮, কাফরুল ২, কল্যাণপুর ১০, কলাবাগান ১৩, কাকরাইল ১৭৩, কাঁঠালবাগান ৬, কমলাপুর ৬, কাজলা ৩, কামরাঙ্গীরচর ৪০, কাজীপাড়া ১০, কারওয়ানবাজার ১৫, করাতিটোলা ১, কসাইটুলি ১, কচুক্ষেত ১, খিলগাঁও ৫৯, খিলক্ষেত ৪, কলতাবাজার ১, কদমতলী ১০, কোতোয়ালি ১৫, কুতুবখালী ৬, কুড়িল ৪, লালমাটিয়া ৫, লালবাগ ৯৮, লক্ষ্মীবাজার ১৮, মাদারটেক ৫, মালিটোলা ৪, মালিবাগ ৮৩, মাটিকাটা ৪, মাণ্ডা ২৬, মানিকনগর ২৩, মানিকদী ১, মাতুয়াইল ৫, মেরাদিয়া ৭, মীরহাজীরবাগ ৫, মিরপুর-১ ৩৬, মিরপুর-২ ৯, মিরপুর-৬ ১২, মিরপুর-১০ ১৯, মিরপুর-১১ ৩৮, মিরপুর-১২ ১৯, মিরপুর-১৩ ৫, মিরপুর ৪০, মিটফোর্ড ৩৮, মগবাজার ৬৫, মনিপুর ১, মহাখালী ১৪৬, মোহনপুর ১, মোহাম্মদপুর ১২৬, মতিঝিল ৭, মুগদা ১৪৯ জন।

নবাবপুর ৪, নাজিরাবাজার ১০, নারিন্দা ২৪, নিউমার্কেট ১১, নীলক্ষেত ৪, নাখালপাড়া ১৯, নয়াবাজার ৯, নিমতলী ৯, নিকুঞ্জ ১, পান্থপথ ১৮, পল্লবী ১২, পল্টন ৩২, পীরেরবাগ ৭, পোস্তগোলা ৭, পুরানা পল্টন ২৭, রাজারবাগ ২০০, রামপুরা ৪১, রমনা ৩৮, রসুলবাগ ৪, রায়েরবাগ ৯, রাজাবাজার ১৪, রসুলপুর ১, রূপগঞ্জ ১, রায়েরবাজার ৯, সবুজবাগ ৭, সদরঘাট ৪, শাজাহানপুর ২১, সায়েদাবাদ ১১। সেগুনবাগিচা ৬, সায়েন্সল্যাব ১, শাহ আলিবাগ ২, শাহবাগ ৫৯, শাঁখারীবাজার ৩১, শান্তিবাগ ১৪, শ্যামপুর ৮, শান্তিনগর ২২, শ্যামলী ৫৩, শেওড়াপাড়া ৯, শেখেরটেক ১, সোয়ারিঘাট ৩, সিপাহীবাগ ২, সিদ্ধেশ্বরী ৪, শনিরআখড়া ১৭। স্বামীবাগ ৪৭, শেরেবাংলানগর ১০, সূত্রাপুর ২৯, তল্লাবাগ ৪, তাতীবাজার ১০, টিকাটুলি ২২, তেজকুনিপাড়া ৩, তেজগাঁও ৯৮, তুরাগ ১, তেজতুরী বাজার ৫, টঙ্গী ১৩, টোলারবাগ ১৯, উর্দু রোড ১, উত্তরা ৮০, ভাটারা ৫, ভাষানটেক ২ এবং ওয়ারীতে ৫১ জন।

পাশাপাশি ডেঙ্গু পরীক্ষার নির্দেশ : ব্রিফিংয়ে শুরুতেই ডেঙ্গু বিষয়ক পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর সময় চলে এসেছে। কাজেই ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। করোনার পাশাপাশি সন্দেহজনক রোগীদের ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভাকে সঙ্গে নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও এডিস মশা নিধনে কাজ করার অনুরোধ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু করোনা ও ডেঙ্গু রোগী উভয়েরই জ্বর থাকে। তাই করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি সন্দেহজনক রোগীকে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু কর্নার গত বছর থেকেই চালু আছে। এ বিষয়ে একটি টিম প্রস্তুত রাখার জন্যও সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।’

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *