শিক্ষা ক্যাডারে বড় ধরনের পদোন্নতি এ সপ্তাহে

0
maushi_304498

maushi_304498

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে এ সপ্তাহে বড় ধরনের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুত করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। আজ রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে শিক্ষা ক্যাডারের ‘বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি’র (ডিপিসি) সভা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। এবার দুই হাজারের মতো কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। তবে এই ক্যাডারে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা রয়েছেন ৫ হাজারের মতো।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন সমকালকে বলেন, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। ডিপিসি সভায় পদোন্নতির বিষয়টি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করবেন তারা।

মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, একটিমাত্র সভায় এতজন কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয়টি চূড়ান্ত করা না গেলে প্রয়োজনে দু’তিনটি সভা করা হতে পারে। তবে যত দ্রুত সম্ভব পদোন্নতি চূড়ান্ত করা হবে। এদিকে, পদোন্নতির খবরে সারাদেশের সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষকরা নড়েচড়ে বসেছেন। দীর্ঘদিন পর তারা পদোন্নতির খবর পেয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন।

১০ শতাংশ কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ :শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা জানান, তিনভাবে এই ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিয়োগ পান। সরাসরি বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে, বেসরকারি কলেজ থেকে আত্তীকরণ এবং রাষ্ট্রপতির ১০ শতাংশ কোটায় নিয়োগ। এই ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারি কলেজে সরাসরি শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত। মেধাবীদের উৎসাহিত করতে যাদের শিক্ষা জীবনে সবগুলো প্রথম শ্রেণি রয়েছে এবং এমফিল বা পিএইচডির মতো উচ্চতর ডিগ্রি রয়েছে তাদের চাকরির ১০ বছর পূর্ণ হলে সরাসরি রাষ্ট্রপতির ১০ শতাংশ কোটায় এই ক্যাডারে ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই ১০ শতাংশ কোটায় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, একটি মহল এবারের পদোন্নতি থেকে পরিকল্পিতভাবে তাদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

গত ১৮ জুন পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা (গ্রেডেশন লিস্ট) মাউশির ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। এতে রাষ্ট্রপতির ১০ শতাংশ কোটায় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের কারও নাম রাখা হয়নি। এই কোটায় নিয়োগ পাওয়া প্রতিটি বিষয়ের কর্মকর্তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ ২০১১ ও ২০১৫ সালে পদোন্নতি দেওয়ার আগে মাউশির প্রকাশ করা জ্যেষ্ঠতার তালিকায় এই কর্মকর্তাদের নাম ছিল। মাউশির বর্তমান মহাপরিচালকও এই কোটায় নিয়োগ পান। কেন এই কর্মকর্তাদের নাম বাদ দেওয়া হলো জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘ভুলক্রমে এটি হয়েছে। এই কর্মকর্তারাও পদোন্নতির বিবেচনায় যথারীতি স্থান পাবেন।’

এই কোটায় নিয়োগ পাওয়া গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ও ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবদুল করিম মিয়া বলেন, বাদ পড়ার পর তারা সবাই মাউশির মহাপরিচালকের সঙ্গে দেখা করে গ্রেডেশন তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন করেছেন। মাউশির সহকারী পরিচালক (কলেজ-১) একেএম মাসুদ বলেন, রাষ্ট্রপতির ১০ শতাংশ কোটায় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন তারা পেয়েছেন। এ নিয়ে তারা কাজ করছেন। এই কর্মকর্তারাও পদোন্নতি পাবেন।

কারা পাবেন পদোন্নতি :শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ হলো, পদোন্নতিযোগ্য যত বেশি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া যায় তা দিতে হবে। সে লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ উইং থেকে জানা গেছে, তদবিরের চাপ এড়াতে এবার পদোন্নতি আদেশের সঙ্গে সঙ্গে পদায়নও করা হবে। অধ্যাপক পদে বিভিন্ন বিষয়ে এবার প্রায় ৩০০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হবে। তবে মাউশি মাত্র ২০৮ জনের একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করেছে। এর বাইরে রিজার্ভ পদের বিপরীতেও পদোন্নতি দেওয়া হবে। অধ্যাপক পদের জন্য বিসিএসের ১৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের এবার বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এই ব্যাচে প্রায় ১৮০০ কর্মকর্তা থাকলেও ১২৭৪ জন পদোন্নতিযোগ্য। তবে এই ক্যাডারে বিষয়ভিত্তিক শূন্য পদের বিপরীতে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তাই ১২৭৪ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০০ জনের ভাগ্যের শিকে ছিঁড়তে পারে। এই ব্যাচের বেশিরভাগ কর্মকর্তা ২০১৩ সাল থেকে অধ্যাপকের স্কেলে বেতন পাচ্ছেন। সহযোগী অধ্যাপক পদে প্রায় ৫০০ জন পদোন্নতি পাবেন। সহযোগী অধ্যাপক পদে বিসিএসের ১৬, ১৭, ১৮ ও ২০, ২১ ও ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তারা ডিপিসির বিবেচনায় রয়েছেন।

এ ছাড়া প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে এবার প্রায় ১২০০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সহকারী অধ্যাপক পদে এবার বিসিএসের ২৬, ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তারা বিবেচিত হচ্ছেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদোন্নতির তালিকা চূড়ান্ত করা হলে সেদিনই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

পদোন্নতি সম্পর্কে ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’র সভাপতি অধ্যাপক আইকে সেলিমউল্লাহ খন্দকার বলেন, ক্যাডারের প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তা বিভিন্ন স্তরে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। তাদের কারও কারও পদোন্নতি দেওয়া হলেও তাতে সরকারের কোনো আর্থিক সংশ্লেষ থাকছে না। অথচ পদ শূন্য না থাকায় তাদের পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য নতুন পদ সৃষ্টি করতে হবে। সেলিমউল্লাহ খন্দকার আরও বলেন, এনাম কমিটির সুপারিশ অনুসারে তাদের ক্যাডারে আরও সাড়ে ১২ হাজার পদ প্রাপ্য রয়েছে। এসব পদ সৃষ্টির জন্য তারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন।

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের শিক্ষকরা জানান, তাদের একই পদে ১২ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত চাকরি করতে হয়। পদোন্নতির জন্য আর কোনো ক্যাডারে এভাবে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয় না।

জানা গেছে, শিক্ষা ক্যাডারে দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বঞ্চনা চলছে। অন্য ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দেওয়া হলেও এই ক্যাডারে বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ কারণে বিভিন্ন কলেজে জুনিয়ররা চাকরিতে সিনিয়রদের ওপরে উঠে গেছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, দেশের ৩১১টি সরকারি কলেজসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৫ হাজার ১১২টি। এর মধ্যে বর্তমানে শূন্য রয়েছে প্রায় তিন হাজার পদ। এর সবগুলোই ঢাকার বাইরের উপজেলা ও মফস্বল এলাকার কলেজের।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *