সাংবাদিকতা ছিল মানিক মিয়ার আদর্শ

0
1495739073

1495739073

দেশের প্রতি ভালোবাসা আর মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া অন্যায় ও স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে কলম যুদ্ধ করেছেন। তিনি নিজে সক্রিয় রাজনীতি করতেন না। তবে রাজনীতি সচেতন একজন সাংবাদিক ছিলেন। গণমানুষের পক্ষে সাংবাদিকতাই ছিল মানিক মিয়ার আদর্শ। গতকাল দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ইত্তেফাকের এক আলোচনা সভায় বক্তারা একথা বলেন। ইত্তেফাক কার্যালয়ের মাজেদা বেগম মিলনায়তনে এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়। আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য ‘বাঙালি স্বাধীনতাযুগের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া’।

এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ. ই. মামুন এর সঞ্চালনায় আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ইত্তেফাকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আশিস সৈকত ও পাঁচটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

তাসমিমা হোসেন বলেন, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার রাজনৈতিক জ্ঞান ছিল প্রখর, তবে তিনি নিজে সক্রিয় রাজনীতি করতেন না। তিনি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে কলম ধরে গণমানুষের অধিকারের কথা বলেছেন। মানিক মিয়া তার কলামে লিখেছিলেন, গণ কল্যাণের রাজনীতি ও ক্ষমতার রাজনীতি এক না। নিজে কারাবরণ করেছেন। অন্যদিকে একাত্তরে পাকিস্তানিরা সমস্ত ইত্তেফাক পুড়িয়ে দিয়েছিল। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। ইতিহাস জানলে ভালো সাংবাদিক হতে পারবে। মানিক মিয়াকে বুঝতে হবে, ইতিহাস বুঝতে হবে। সাংবাদিকতা একটা প্যাশন, একটা ভালোবাসা। ভালোবাসা নিয়ে সাংবাদিকতা করতে হবে।

জ. ই. মামুন বলেন, মানিক মিয়াকে যতখানি চেনা দরকার, ততখানি আমরা তাকে চিনি না। তোমরা যারা সাংবাদিকতায় পড়ছো তাদের মানিক মিয়া সম্পর্কে আরো বেশি জানতে হবে। তিনি সাহস, নৈতিকতা নিয়ে সাংবাদিকতা করেছেন। লেখনির মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন মানিক মিয়া। তার চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মের জানতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাগীব রহমান বলেন, মানিক মিয়া সংগ্রামী মানুষের কথা বলেছেন। তিনি পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নূরজাহান আক্তার মুক্তি বলেন, মানিক মিয়া একজন আদর্শ সাংবাদিক ছিলেন, যা আমাদের প্রেরণা জোগায়। ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব) এর সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মেরিনা আক্তার মিতু বলেন, শুধু সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নয়, সকল শিক্ষার্থীকে মানিক মিয়া সম্পর্কে জানতে হবে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমান বলেন, মানিক মিয়া সম্পর্কে ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েব মাধ্যমগুলোতে বেশি কিছু নেই। বাংলাপিডিয়া, ইউকিপিডিয়ায় অসম্পূর্ণ তথ্য দেওয়া। অথচ তার মতো একজন সাংবাদিকের সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের ভালো ধারণা নিতে হলে এসব মাধ্যমে সম্পূর্ণ তথ্য থাকা জরুরি। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শামিমা রহমান বলেন, মানিক মিয়া প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সংগ্রামী চেতনা তৈরি করেছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম সীমান্ত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে থেকেই গণমাধ্যমের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। তবে ভর্তির পর বাস্তবতা ভিন্ন দিক টানছে। সাংবাদিকতা বিভাগে পড়েও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ার গড়ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মেহজাবিন তুলি বলেন, মানিক মিয়া রাজনৈতিক সক্রিয় ছিলেন না। তার সক্রিয় ছিল কলম। এজন্য তাকে কারাবরণও করতে হয়েছে। এটাই আমাদের শিক্ষণীয় বিষয়। বঙ্গবন্ধু মানিক মিয়াকে খুব পছন্দ করতেন।

আশিস সৈকত বলেন, গণমানুষের পক্ষে সাংবাদিকতাই ছিল মানিক মিয়ার আদর্শ। এখনও সাংবাদিকতায় ভালো করতে হলে তার আদর্শ অনুসরণ করতে হবে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *