সুশান্তের বাবা মামলা করলনে রিয়ার বিরুদ্ধে

0
sushant-father

সুশান্ত সিং রাজপুতের বাবা কে কে সিং পাটনা থানায় সুশান্তর প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচনাসহ ৩৪০ ও ৩৪২ ধারায় মামলা করেন তিনি। পাটনা পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়। ইতিমধ্যে পাটনা থেকে চারজন পুলিশের একটা দল মুম্বাই এসেছে। তারা মুম্বাই পুলিশের কাছ থেকে এই মামলা–সম্পর্কিত সমস্ত নথি চেয়ে নিয়েছে। অর্থাৎ, মুম্বাই ও পাটনা পুলিশ—এই দুই বিভাগই এখন যৌথভাবে কাজ করবে। এত দিন মুম্বাই পুলিশ কাজ করছিল ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে, আর সুশান্তর বাবার দায়ের করা মামলায় এখন যুক্ত হলো পাটনা পুলিশ।

গত ১৪ জুন সুশান্তর মৃত্যুর পর এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সেক্টর থেকে সুশান্তর মৃত্যুর সঙ্গে সম্ভাব্য সম্পর্কিত ৪০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর ভেতর অসংখ্য মানুষ সুশান্তর মৃত্যুকে আত্মহত্যা নয়, বরং ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। সুশান্তর মৃত্যুর এক মাস তিন দিন পর রিয়া চক্রবর্তীও ইনস্টাগ্রামে সুশান্তর ‘আত্মহত্যার’ সঠিক কারণ উদ্‌ঘাটন করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ট্যাগ করে লিখেছেন, ‘আমি সুশান্তর প্রেমিকা হিসেবে ওর আত্মহত্যার সঠিক কারণ জানতে চাই। সরকারের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে বলছি, সিবিআই তদন্ত হোক।’

অন্যদিকে রিয়া চক্রবর্তীর ‘সাবেক’ ‘কথিত’ প্রেমিক মহেশ ভাটকে পুলিশ ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। রিয়া চক্রবর্তীই সুশান্তকে পুরোনো বাসা ‘অভিশপ্ত’ বলে সুশান্তকে বাসা বদলাতে বাধ্য করেন। সুশান্তকে ‘মানসিক চাপ থেকে মুক্ত করার জন্য’ তিনিই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। সুশান্তকে মাত্রাতিরিক্ত ‘এন্ট ডিপ্রেশন পিল’ খাওয়ানো হয়েছে। গত ৯ জুন রিয়া চক্রবর্তী সুশান্তর বাসা থেকে বের হয়ে আসেন। আসার সময় ল্যাপটপ, সমস্ত গয়না—সবকিছু নিয়ে বের হন। ওই দিনই তিনি ইনস্টাগ্রাম থেকে সুশান্তর বেশ কিছু ছবি ডিলিট করে দেন আর সুশান্তর ফোন নম্বরও ব্লক করেন। বলা হচ্ছে, এই ঘটনার কিছুদিন আগেই সুশান্তর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি রুপি রিয়ার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়। যদিও ‘সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল’–এর ভয়ে পুলিশ এই বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলেনি। সুশান্তর বোনদের অভিযোগ, তাঁর ভাইকে তাঁদের সঙ্গে বা তাঁদের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিতেন না রিয়া। এমনকি সুশান্তর বেশ কিছু প্রেসক্রিপশন রিয়ার কাছে ছিল, যেগুলো দিয়ে রিয়া সুশান্তকে ক্রমাগত ব্ল্যাকমেল করেছিলেন। যেকোনো একটা বিষয়ে রিয়ার কথা না শুনলে তিনি এগুলো ‘পাবলিক’ করে দেবেন, এমন কথা বলতেন। সুশান্তর কাছে যেসব ছবির প্রস্তাব আসছিল, সেগুলোয় নায়িকা চরিত্রের প্রস্তাব দেওয়ার জন্যও নাকি চাপ দিচ্ছিলেন রিয়া। সুশান্তর বাবা তাই আত্মহত্যার প্ররোচনার সঙ্গে ‘প্রতারণা’ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও এনেছেন।

সুশান্তর মৃত্যুর কয়েক দিন আগে রিয়া চক্রবর্তী ইনস্টাগ্রামে লাল রঙের পোশাক পরা একটা ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘আনলক, আনউইন্ড, আনটাই, ও ডার্লিং, ইউ উইল ফ্লাই’। এটা একটা খুব সাধারণ কো-ইনসিডেন্স। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। তা ছাড়া সুশান্তর তিনটি কোম্পানির পার্টনার ছিলেন রিয়ার ভাই শৌভিক চক্রবর্তী। আর একটি কোম্পানি ছিল রিয়ার নামে। যদিও রিয়া বা তাঁর ভাই কারও এক পয়সা বিনিয়োগ ছিল না। সুশান্তর বাসায় সন্দীপ সিং নামের সুশান্তর এক বন্ধুও থাকতেন। রিয়া চাইতেন না, তিনি সুশান্তর বাসায় থাকুক। এমনকি এই নিয়ে সুশান্ত আর রিয়ার মনোমালিন্যের কারণে সন্দীপ সুশান্তর আত্মহত্যার ঘটনার কিছুদিন আগে বাসা ছেড়ে চলে যান।

সুশান্তর বাবা মামলা করায় অসংখ্য সুশান্তভক্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধুবাদ জানিয়ে আশাবাদী হয়ে লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে একটু আলোর দিশা পেলাম। এবার যদি তদন্তে গতি আসে।’ সুশান্তর মৃত্যুর পর থেকে অসংখ্য মানুষ রিয়াকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে দায়ী করেছেন। এমনকি সুশান্তর মৃত্যুর পরও রিয়াকে যখন পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়, তখন নাকি রিয়ার শরীরী ভাষায় দুঃখের ছাপমাত্র ছিল না। বরং তাঁকে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল বলেও বলেছেন অনেকে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *