১০ কোটি টাকার ইয়াবা আটক

0

ctg_jugantor__49190_1497026812

বঙ্গোপসাগরের আনোয়ারা উপকূল থেকে ১০ কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে তিন লাখ পিস ইয়াবার একটি চালান আটক করেছে আনোয়ারা থানা পুলিশ। শুক্রবার ভোররাতে উপজেলার গহিরা এলাকায় ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রধান আবুল হাসিমের বাড়ি থেকে এই চালানটি আটক করা হয়। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আবুল হাসিম ও চোরাকারবারি দলের অন্য সদস্যরা পালিয়ে যায়।

আনোয়ারা থানা পুলিশের চৌকস অফিসারদের নেতৃত্বে চারটি টিম চার রাত পাহারা দেয়ার পর শুক্রবার একটি টিম এই চালানটি আটক করেছে। এ সময় আরেকটি বোট অন্তত ১০ কোটি টাকার ইয়াবার চালান নিয়ে মধ্যসাগরে ফেরত যায়।

আনোয়ারা থানা সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের আনোয়ারা উপজেলার গহিরা উপকূলে ইয়াবার একটি বড় চালান খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। মাছ ধরা ট্রলারে করে চালানটি বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমার থেকে নিয়ে এসেছে আবুল হাসিমের নেতৃত্বাধীন ইয়াবা সিন্ডিকেট। এমন তথ্য পেয়ে ওসি শাহজাহান থানার চৌকস অফিসারের নেতৃত্বে চারটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চারটি টিম অবস্থান নেয়। মঙ্গলবার থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় জেলে, কৃষক ও সাধারণ মানুষের বেশে নির্ধারিত পয়েন্টগুলোতে ওঁৎ পেতে থাকে পুলিশ সদস্যরা।

সূত্র জানায়, কেউ লুঙ্গি পড়ে মাথায় গামছা বেঁধে জেলে সেজে, টর্চ লাইট হাতে সাধারণ মানুষ সেজে, কেউবা মাথায় টুপি পড়ে সাধারণ মুসল্লি বেশে গহিরা উপকূলের ইয়াবা খালাসের সম্ভাব্য ঘাটগুলোর আশপাশে অবস্থান নেন। শুক্রবার রাত ১০টায় ফুলতলা এলাকায় অবস্থান নেন এসআই হাফিজ উদ্দিন, এসআই রেজাউল, এসআই করিমের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের টিম।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় তাদের কাছে খবর আসে মাছ ধরা ট্রলার থেকে ইয়াবা খালাস করে নিয়ে আসার জন্য একটি ইঞ্জিন বোট রওনা দিয়েছে। খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে থানা পুলিশের সদস্যরাও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তারা ছিপাতলি ঘাট এলাকায় অবস্থান নেয়। প্রায় ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর দেখা যায়, সেহেরির আগমুহূর্তে একটি ইঞ্জিন বোট তীরের দিকে আসছে। বোট আসার পর দু’জন লোক মাথায় বস্তা নিয়ে ছিপাতালি ঘাটের ১০০ গজ দক্ষিণে আবুল হাসিম ওরফে হাছিমের বাড়ির দিকে রওনা দেয়। পুলিশও তাদের পিছু নেয়। অভিযানে নেতৃত্বদানকারী আনোয়ারা থানার এসআই হাফিজ উদ্দিন শুক্রবার যুগান্তরকে জানান, আবুল হাসিমের বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালিয়ে খাটের নিচ থেকে দুই বস্তাভর্তি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। চালান আমদানির হোতা ও সিন্ডিকেট আবুল হাসিম পালিয়ে গেছে।

আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী শুক্রবার বিকেলে যুগান্তরকে জানান, আনোয়ারা উপকূলকে ইয়াবা খালাসের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে চোরাকারবারিরা। যুবসমাজকে ধ্বংসকারী এই ইয়াবা চোরাচালান বন্ধে আনোয়ারার সংসদ সদস্য ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ প্রশাসনকে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, উপকূলীয় এলাকার কয়েকজন সাবেক-বর্তমান জনপ্রতিনিধি ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকায় প্রশাসনও ইয়াবার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। পুলিশ প্রশাসনেরও কিছু লোক মাসোয়ারার বিনিময়ে ইয়াবা ব্যবসা জিইয়ে রেখেছিল। এর আগে এ অভিযোগে আনোয়ারা থানা পুলিশের সাবেক ওসি আবদুল লতিফকে বদলি করা হয়।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (দক্ষিণ) একেএম এমরান ভুঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, ১০ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় এই চালান আমদানির হোতা ও সিন্ডিকেট প্রধান আবুল হাসিমসহ চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *