৭ ফেব্রুয়ারী আমার বাপী কমরেড প্রসাদ রায়ের ২২ তম মৃত্যুবার্ষিকী

0
ROY

ROY

আমি মানুষ হিসাবে গর্ব করার মতো কিছুই অর্জন করতে পানিনি। তবে গর্ব করে বলতে পারি, যে উত্তরাধীকারের গর্ব আমি পেয়েছি- তার কাছাকাছি সম্পদ অনেকের নাই। আমার বাবা কমরেড প্রসাদ রায় ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল যে অমিত সাহস নিয়ে খাপড়া ওয়ার্ড কারা বিদ্রোহে ঘাতকের উদ্যত রাইফেলের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িছিলেন, অপরাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম তাজা রক্ত দিয়ে ৭ রাউন্ড গুলি বিদ্ধ হয়েছিলেন- সেই উত্তরাধীকারের সম্পদের গর্ব আমাদের পরিবার প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম রয়ে যাবে।

৭ ফেব্রুয়ারী আমার বাপী কমরেড প্রসাদ রায়ের ২২ তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি প্রথমে ছিলেন গোপন ব্রিটিশবিরোধী সন্ত্রাসবাদী দলের সদস্য, কিশোর কালে বয়সের কারনে ফাসির দড়ি না পেলেও জেলে গেছেন-সেখানেই তার মার্কসবাদের দীক্ষা। ফিরে এসেই আবারো সদ্যজাত পাকিস্থানে গ্রেফতার হয়েছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন পাকিস্থানের বিরুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র বিদ্রোহের ১৯৫০ সালে। যেটি চিন্হিত হয়ে আছে ইতিহাসখ্যাত রাজশাহী খাপরা ওয়ার্ড কারা বিদ্রোহ হিসাবে। মুক্তিযু্দ্ধে পালন করেছেন সংগঠকের ভুমিকা, শিকারপুর-করিমপুর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাধীনদেশে গ্রেফতার হয়েছেন দফায় দফায়। সব মিলিয়ে জেলেই কাটিয়েছেন ১৯ বছর ৫ মাস।

পাকিস্তান আপরাষ্ট্রের জন্মের পর যখন রাজনৈতিক বন্দী হিসাবে বাপী গ্রেফতার হন, তার কয়েকদিন পরেই তার প্রথম সন্তান জন্ম নেয়। জেলে থেকেই তিনি সেই সন্তানের নাম রেখেছিলেন, গৌতম। জন্মের কয়েকমাস পরেই আমার এই ভাইটি মারা যায় শিশু কলেরাতে। বিনা অষুধে। আমার মা সারা পাবনা শহরে সেদিন অসুস্থ ছেলেটিকে বুকে নিয়ে ছুটেছেন- ২১ টা টাকা যোগার করতে পারেন নি,একটা ইনজেকশন কেনার। শেষ পর্যন্ত মৃত সন্তানকে তুলে দিয়েছিনের শ্মশানযাত্রীদের কাছে।

চিঠির খামের ছবিটি বাপীকে আটকের পর সে সময়ের সরকার আমাদের অনেক বছর জানতে দেয়নি তিনি বেঁচে আছেন কি না? থাকলে কোথায় আছেন? মা তখন লোকমুখে খবর পেয়ে বিভিন্ন কারাগারে চিঠি পাঠালে-এভাবেই কাটা দাগ দিয়ে ফেরত আসতো সেই চিঠি।

লেখাটি কমরেড প্রসাদ রায়ের পুত্র অঞ্জন রায় এর ফেইসবুক থেকে সংগৃহীত।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *