সৌদির যুদ্ধ এবার নিজের সঙ্গে

0
pp

pp

নিজের সঙ্গেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে সৌদি আরব। ইয়েমেন, সিরিয়া ও লেবানন মধ্যপ্রাচ্যের এ কয়েকটি দেশে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সঙ্গে একটি প্রক্সিযুদ্ধ চালিয়ে আসছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী এই দেশটি।

অন্যদিকে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সৌদি রাজপরিবার নিজেদের মধ্যে প্রচণ্ড দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। এ দ্বন্দ্বে কে জয়ী হবে এই মুহূর্তে না বলা গেলেও এ সংঘাত রাষ্ট্র হিসেবে সৌদিকে অশান্ত করে তুলতে পারে। চলমান অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে দেশটি ইতিমধ্যেই দুর্বল হতে শুরু করেছে।

বিজনেস ইনসাইডার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশটিতে এ মুহূর্তে যা ঘটছে, তা প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের একটি আদর্শ উদাহরণ। দেশটির বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তার সৎ ভাই সাবেক বাদশাহ আবদুল্লাহ আল-সৌদের মৃত্যুর পর ক্ষমতার মসনদে বসেন। তিনি ক্ষমতায় আসেন দেশটির সরল উত্তরাধিকার সূত্রেই। তবে এরপরই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব একটি জটিল রূপ নেয়।

উত্তরাধিকারের সহজ সমীকরণের বাইরে গিয়ে বাদশাহ সালমান নিজের ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেন। ফলে মাত্র ৩১ বছর বয়সী মোহাম্মদ অল্প সময়ের মধ্যে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত হন। তবে পর্দার আড়ালের এ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নগ্নভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে চলতি বছরের ৪ নভেম্বর। এদিন বাদশাহ সালমান ও তার ছেলে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ দুর্নীতি দমন অভিযানের নামে রাজপরিবারের বহু প্রিন্স, সরকারের সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেন। সৌদি কর্তৃপক্ষের হিসাবে এ সময়ের মধ্যে দুই শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। বিশাল সংখ্যক এ গ্রেফতার পেছনের কারণটি খুব সরল। আর সেটা হচ্ছে- বাদশাহ সালমান তার ছেলে মোহাম্মদের সৌদির পরবর্তী বাদশাহ হওয়ার ক্ষেত্রে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করার চেষ্টা করছেন।

উত্তরাধিকার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সৌদির বিশেষ যে ঐতিহ্য ছিল আধুনিক রাজতন্ত্রের ইতিহাসে বাদশাহ সালমানই প্রথম কোনো ব্যক্তি, যিনি সেই ঐতিহ্য ভঙ্গ করেছেন। সৌদি রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আল সৌদের ছেলেদের সর্বসম্মতিতেই সচরাচর উত্তরাধিকার বাছাই করা হয়। কিন্তু বর্তমানে রাজপরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রায় সবাই মৃত। একই সঙ্গে রাজপরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের প্রিন্সের সংখ্যা অনেক হওয়ায় দেশের পরবর্তী বাদশাহ কে হবেন, এটা বেছে নেয়া বেশ কঠিন। বাদশাহ সালমান এক্ষেত্রে নিজের ছেলেকেই বেছে নিয়েছেন। রাজপরিবারের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টনের ক্ষেত্রে অন্যান্য যে ঐতিহ্য ছিল তাও লঙ্ঘন করেছেন তিনি। নিজের ছেলেকে দেশের নিরাপত্তা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পণ করে তার হাতকে আরও শক্তিশালী করেছেন। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ এখন একাধারে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, কৌশলগত অর্থনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান, সৌদির রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর পরিচালক এবং গত ৪ নভেম্বর গঠিত দুর্নীতি দমন কমিটির প্রধান। আর বাদশাহ সালমান এর সবই করেছেন তার এক সৎ ভাই ও এক ভাইপোকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে। তাদের উভয়ই ক্রাউন প্রিন্স ছিলেন।

কিছু গুজব ছড়িয়েছে, বাদশাহ সালমান রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যের বিরুদ্ধে যে অভিযান চালিয়েছেন, তা তার বিরুদ্ধেই করা এক ষড়যন্ত্রের জবাবে। এ ঘটনা সত্য কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে গুজব সত্য হোক বা গ্রেফতার অভিযান পূর্বপরিকল্পিতই হোক, ফলাফল একই। প্রাসাদে মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতার প্রতি এ মুহূর্তে হুমকি তেমন নেই বললেই চলে। মিতাব বিন আবদুল্লাহ নামে এক প্রিন্স প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনীর সমান্তরাল ন্যাশনাল গার্ড বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। মোহাম্মদ ও ওই প্রিন্স গত ৪ নভেম্বর পর্যন্তই সৌদির সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ব ভাগাভাগি করেছিলেন। সে দিনই তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় মিতাবের ভাই তুর্কি বিন আবদুল্লাহকেও। এসব ব্যক্তিবর্গকে গ্রেফতারে দুইটা কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমত, মোহাম্মদ বিন সালমানের নিকট তাদের আনুগত্য নিশ্চিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সালমানপন্থী অংশের দুর্নীতি দমন অভিযানের পথ আরও সুবিন্যাস্ত করেছে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *